বসন্ত এসে গেছে…! নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯ পলাশের ডাল পথেই বিছিয়েছে রঙিন ফুল। ছবি: আল আমীন আল আমীন, জাবি প্রতিনিধি: প্রকৃতিতে এখন শীতের রুক্ষতা কিংবা রিক্ততার কোনো ছাপ নেই। বরং বৃক্ষের নগ্ন শাখাকে ভরিয়ে তুলেছে নরম কচি পাতার দল। নবীন পত্রদলকে জায়গা করে দিতেই যেন প্রবীণরা সব ঝড়ে পড়েছিলো শীতের শুষ্কতায়। নিষ্কলুষ কচি পাতায় রৌদ্র-ছায়ার রঙ্গীন খেলা চোখকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলছে। খানিক বিরতিতে বয়ে চলা ঝিরঝিরে মাতাল হাওয়া শুধু প্রকৃতিতে নয়, হৃদয়েও দোলা দিয়ে যাচ্ছে। বাতাসের মৃদু-মন্দ ঝাপসা মনকে উদাস করে দেয়। মূহুর্তেই ক্ষণিকের বাস্তবতাকে বহু দূরে ঠেলে দিয়ে হৃদয়ে কাঁপন তুলছে উদাসী এ হাওয়া। এখানে-ওখানে ফুটে থাকা বাহারি ফুলের রঙ রাঙাতে চায় মনকেও। জাগাতে চায় হৃদয় পটে সুগোপনে লুকিয়ে থাকা ঘুমন্ত কোন কোন স্মৃতি শহরকে। মন যেন সহসাই বলে উঠে, ‘তবে কি বসন্ত এসেই গেলো?’ হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত এসে গেছে। পথের ধারে চেয়ে দেখুন শুকনো পাতায় পথ ঢেকে গেছে। দমকা বাতাসে মধুর এক ছন্দ মিলিয়ে গাছ থেকে এখনো ঝরে পড়ছে আরো আয়ুষ্মান কিছু প্রবীন-পল্লব। অনায়াসে তারা মিশে যাচ্ছে পথের ধূলোয়। হঠাৎই মচমচ আওয়াজ, ভয় পাবেন না। শুকনো পাতায় আপনার পা পড়েছে নিশ্চয়! চেয়ে দেখুন না, মাঠের ঘাসগুলো কেমন তামাটে বর্ণ ঝেড়ে ধীরে ধীরে লক্ষ্যনীয় সবুজ রঙ ধারণ করছে। প্রাণ ভরে শ্বাস নিন। দেখুন তো মিষ্টি কোন সুবাস পাচ্ছেন কিনা? না, গন্ধটা বন্ধুর বাড়ির ফুলের নয়। এখানে বন্ধুর হল বলাটাই যুক্তিযুক্ত। গানের শব্দটাকে একটু এদিক সেদিক করে নিলে নিলে ক্ষতি কি বলুন? চেয়ে দেখুন এই ফাগুনে শিমুল-পলাশের ডালে ডালে কেমন লাল রঙ্গের আগুন লেগেছে। মনে হবে দুরন্ত শিমুল আর পলাশ দূর থেকেও আপনাকে তার কাছে ডাকছে। আপনি এখনো পাখিদের বসন্ত-বন্দনা শোনেন নি? তাহলে কোলাহল ঢেকে কান পাতুন। শুনলেন তো, প্রকৃতির এত রূপ লাবণ্য দেখে পাখিরা কেমন মনের সুখে গান ধরেছে। এবার তো বিশ্বাস হলো যে, বসন্ত আপনার দুয়ারে দাঁড়িয়ে? বসন্তে বাসন্তী সাজে যুগল ছবি: আল আমীন ‘বিশ্বাস করি আর না করি, যেদিন ললনাদের মাঝে ক্ষণিকের বাঙ্গালী সাজে সাজতে দেখলাম, সাথে মাথায়-মাথায় ফুল ফুটতে দেখলাম সেদিনই বুঝেছি বসন্ত চলে এসছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি’। বসন্তের আগমণী বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মল্লিক কুমার বিশ্বাস। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৃতির অপূর্ব ভান্ডার। প্রতিটি ঋতুতে যার রূপের ভিন্নতা পরিলক্ষ্যিত হয়। যেকোনো ঋতুতে অপরূপ হয়ে ওঠে এ সবুজ চত্ত্বরটি। প্রকৃতি প্রেমিকদের মধ্যে এর অপরূপ সৌন্দর্য যে কতো রকমের অনুভূতির জোয়ারে ভাসায় তা একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কিত মানুষগুলো ভালো বলতে পারবেন। সম্ভবত তাদের মধ্যে বসন্তই সবচেয়ে প্রাচুর্যতা প্রদানকারী ঋতু। ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়..’ বসন্তের বিশেষত্বই তো ফুল। নানা রঙ আর বর্ণের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। কোনোটা চেনা, আবার কোনোটা অচেনা ফুল। পথের ধারের ছোট্ট ঘাস থেকে শুরু করে পলাশ-শিমুলের মস্ত ডালে ডালে বাহারী ফুল তাদের সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। মুগ্ধ পথিকের চোখ জুড়াতেই যেন তাদের এই অক্লান্ত প্রচেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশদ্বারের রঙিন ফুলেরদল আপনাকে সাদরে বরণ করে নিতে সদা প্রস্তুত। নান্দনিক প্রবেশদ্বারটির সম্মুখে ঢাল বেয়ে নেমে চলা ফুল গাছগুলো শুধু বাহারি রঙ ছড়িয়ে মুগ্ধই করছে না, বসন্তের আগমনি বার্তারও জানান দিচ্ছে। প্রবেশদ্বার পেরোলেই শহীদ মিনার অভিমুখী প্রধান সড়কটির দুপাশে গাছগুলোতে কচি সবুজের আধিপত্য বেশ ভালো ভাবে লক্ষ্য করা যায়। মনে হয় সবগুলো গাছই যেন নব জীবন লাভ করেছে। বৃক্ষসারির মাঝে থাকা পলাশের ডালগুলো পথের মধ্যে রঙ্গিন ফুল। বিছিয়ে দিতে মোটেও কার্পণ্য বোধ করেনি। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে প্রকৃতি যেন খুশির আমেজকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আনন্দে কোকিল গেয়ে উঠছে বারবার। পাখির কূজনে আর দিকে দিকে উপচে পড়া সৌন্দর্যে আপনার মনে হতেই পারে যেন প্রকৃতির কোন স্বর্গরাজ্যে বিচরন করছেন। স্বর্গরাজ্যটিতে প্রিয় মানুষটির হাত হাত রেখে বসন্ত উপভোগের বাসনা যে কারোই জাগতে পারে। প্রকৃতি মানুষকে প্রেমিক হতে শেখায়। রঙীন বসন্ত একটু বেশিই রঙ বিলায় সম্ভবত। ইফোর্টবিডি বিকালের সোনা-ঝড়া রোদে কেন্দ্রীয় মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শিমুলের গাছে দিকে চেয়ে দেখেছেন কখনো? কিংবা দুপুরের খানিকটা কর্কশ রোদে ছবি চত্ত্বর সংলগ্ন পলাশের ডালে পাখিদের মধু পান করার দৃশ্য দেখেছেন? তাহলে হয়তো খানিকটা বুঝতে পারতেন যে বসন্ত কতটা লাবণ্যময়। জাহাঙ্গীরনগরের বৈচিত্রময় প্রকৃতিতে তারও চেয়ে বেশি বৈচিত্রপূর্ণ বসন্ত ঋতুর প্রভাব বর্ণনা করে শেষ করাটা সহজ নয়। ‘প্রকৃতির এ স্বর্গরাজ্যের রূপ-লাবণ্যকে ধরে রাখতে আমাদেরই কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে যাতে উন্নয়ন প্রকল্পের স্থাপনাসমূহ নির্মাণ না করা হয় সে বিষয়ে প্রসাশনকে ভূমিকা রাখতে হবে। সেটি না করা হলে আগামী বসন্তগুলো হয়তো ক্যালেন্ডারের পাতা দেখেই নিশ্চিত হতে হবে’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানাচ্ছিলেন তার মতামত। তার আশাবাদ ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী বসন্তগুলো আরো রঙিন হবে’। লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় Comments SHARES ফিচার বিষয়: