বৃক্ষ প্রেমিক আব্দুল ওয়াহিদ সরদার; গাছকে যন্ত্রণামুক্ত করা যার নেশা

প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০১৯

সুমন মালাকার, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: লেখাপড়া না জানলেও গাছেরও প্রাণ আছে তা ভালো করে বুঝতে পারেন বৃক্ষ প্রেমিক আব্দুল ওয়াহিদ সরদার (৬০)।

গাছের প্রতি ভালোবাসার কারণে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে শুরু করে কোটচাঁদপুরের মহাসড়কসহ আশেপাশের সড়কগুলোর দুই পাশের গাছ থেকে সমস্ত প্রকার তারকাঁটা (পেরেক), ব্যানার ও বিলবোর্ড তুলে ফেলেছেন। ইতিমধ্যে তিনি মহশেপুর উপজেলা শেষ করে জীবননগর এর দিকে রওনা দিয়েছেনে।

গাছকে আঘাত মুক্ত করতে তার এ কাজের সঙ্গী একটি বাইসাইকেল। বৃক্ষ প্রেমিক (গাছ বন্ধু) আব্দুল ওয়াহিদ সরদারের বাড়ি যশোর জেলার কোতোয়ালী মডেল থানার ১০ নম্বর চাঁচড়া ইউনিয়নের সারাপোল বাজারে। তিনি মৃত গোলাম ইয়াইয়া সরদার ও মাহমুদা বিবি ছেলে। পেশায় রাজমিস্ত্রী হলেও তিনি প্রকৃত একজন বৃক্ষ প্রেমিক।

সংসার জীবনে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তার বড় ছেলে মিজানুর রহমান বি.এ অর্নাস পড়াকালীন অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে দেশের বাইরে চলে যান। ছোট ছেলে ওলিয়ার রহমান ও বড় ছেলের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বর্তমানে যশোর এম.এম কলেজে বি.এ অর্নাস পড়ছেন। মেয়ে নাদিয়া বেগমকে বিয়ে দিয়েছেন পাশ্ববর্তী গ্রামে।

কিভাবে সংসার চলবে সেদিকে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই তার। বর্তমানে লোকের বাড়ি থেকে চেয়ে চিন্তে আর বড় ছেলের উর্পাজন করা টাকায় চলছে তাদের সংসার এবং ছোট চেলে ও বড় ছেলের স্ত্রীর পড়াশোনা।

বৃক্ষ প্রেমিক আব্দুল ওয়াহিদ সরদার বলেন, ‘গাছেরও জীবন আছে, তার শরীরে পেরেক ফুঁটালে সে যন্ত্রণা পায়’। এ কারণে আমার খুব কষ্ট হয়। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যানার ও বিলবোর্ড তুলতে বাধা দেয় কিন্তু কারো কোনো কথার তোয়াক্কা করি না। পেরেক, ব্যানার এসব গাছের শরীর থেকে অপসারণ করে গাছকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, গাছকে আমি খুব ভালোবাসি। গাছ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, গাছ মারা যাচ্ছে তারকাঁটার (পেরেক) আঘাতে। আমি এটা সইতে পারি না।

তাকে প্রশ্ন করা হয় এ কাজের জন্য আপনি কি কোনো বেতন পান? উত্তরে তিনি বলেন, আমি একজন স্বেচ্ছাসেবক। আমার এই কাজ দেখে অনেকেই সমালোচনা করে। কিন্তু তিনি বলেন ভালো কাজ করলে লোক সমালোচনা করবেই।

তিনি জনসাধারণকে গাছে পেরেক না মারার জন্য অনুরোধ করেন। তারকাঁটা দিয়ে গাছে না মেরে বাঁশ কেটে তাতে ব্যানার ও বিলবোর্ড লগানোর পরামর্শ দেন আব্দুল ওয়াহিদ।

গত ২০১৮ সালের রোজার মধ্য থেকে নিজেকে এই কাজে নিয়োজিত করেছেন উল্লেখ্য করে ওয়াহিদ জানান, ইতোমধ্যে যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা জেলায় গাছ থেকে তারকাঁটা তুলেছেন। এবার তিনি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তহে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে।

এই এক বছরে তিনি গাছ থেকে ২১৭ কেজি তারকাঁটা (পেরেক) তুলেছেন জানিয়ে বৃক্ষ প্রেমিক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, এগুলো সব সংরক্ষণ করা আছে আমার কাছে। তিনি এই কাজের উদ্দেশ্যে বের হলে ১ থেকে দেড় মাসের আগে বাড়ি ফেরেন না।

আর যেখানেই রাত হয় সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন এবং চায়ের দোকানের চা-বিস্কিট খেয়ে দিন পার করেন। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বের হয়ে এই কয়দিনে মাত্র ৫ বার ভাত খেয়েছেন বলে জানান আব্দুল ওয়াহিদ।

তিনি শুধু গাছ থেকে তারকাঁটাই তোলেন না ২০০৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত যশোরসহ আশেপাশের জেলার সড়ক ও মহাসড়কে নিজ অর্থায়নে বিভিন্ন রকমের ফল এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বৃক্ষ রোপন করেছেন। আর এই বৃক্ষ রোপন করে ২০১৭ সালের ১৬ই জুলাই একুশের ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছন বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে।

সর্বশেষ তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে একটি দাবি জানিয়ে বলেন, আপনি (সাংবাদিক) আপনার কলম লেখোনির মাধ্যমে তুলে ধরবেন সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে ২০১২ সালের গেজেটের অন্তভূক্ত আইনের মাধ্যমে বর্তমানে নতুন করে যে সব গাছ মারা যাচ্ছে তার পোস্ট মর্টেম করে সঠিক তথ্য উদঘাটন করতে হবে কি কারনে এগুলো মারা যাচ্ছে।

/আরএ

Comments