ইসরাইলি তাণ্ডবে ৮ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশিত: ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পূর্ব জেরুজালেমে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেল আরো ৮ ফিলিস্তিনির। ভূমি দিবস উপলক্ষে গাজায় পূর্বঘোষিত ‘প্রত্যাবাসন যাত্রা’ কর্মসূচিতে শুক্রবার বর্বর ইসরাইলি সেনারা গুলি গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো শতাধিক ফিলিস্তিনি।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৩০ মার্চ হাজার হাজার বিক্ষোভকারীরা গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সীমানার কাছে পাঁচটি কেন্দ্রে জড়ো হয়। প্রথম দিনেই ইসরাইলি সেনারা গুলি চালিয়ে ১৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং ১ হাজার ৬০০ জনকে আহত করে।

এরপরও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে ফিলিস্তিনিরা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। আর শুক্রবারের বিক্ষোভে ৮ জনসহ মোট ৩৪ জন প্রাণ হারালেন।

‘ভূমি দিবস’র ৪২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘প্রত্যাবাসন যাত্রা’ নামে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইল কর্তৃক ভূমি দখলের প্রতিবাদ করায় ১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়।

শুক্রবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিক্ষোভে দখলদার ইসরাইলি সেনারা গুলি চালালে ২০ বছর বয়সী ইব্রাহিম আল কুরসহ ৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। এ সময় সাত নারী, ৩১ শিশুসহ অন্তত ৭৮০ জন আহত হয়েছেন।

তবে ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ‘দ্য প্যালেস্টাইন সাফা’ জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ফিলিস্তিনি নিহত বেড়ে ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বার্তা সংস্থাটি নতুন করে নিহত তিনজনের নামও দিয়েছে। তারা হলেন- নুসেইরাত এলাকার সিদ্দিকী আবু কিউতেয়ি (৪৫), মোহাম্মদ হাজ্জ সালেহ (৩২) ও আলা ইয়াহ আল জামালি (১৭)।

শুক্রবারও গাজা সীমান্তের নিরাপত্তা বেড়ার পাঁচটি স্থানে বিক্ষোভের জন্য জড়ো হয় কয়েক হাজার ফিলিস্থিনি। এদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ।

এর মধ্যে পশ্চিম তীরের নাবলুস, আল-বিরেহ, রামাল্লাহ ও হেবরন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ইসরাইলি সেনারা সরাসরি বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি করে। জবাবে বিক্ষোভে থেকে তাদের দিকে পাথর ও ককটেল ছোঁড়া হয় এবং টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ দেখানো হয়।

২৭ বছর বয়সী সাঈদ সামের নামের এক বিক্ষোভকারী আলজাজিরাকে বলেন, ‘ইসরাইল আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। বাড়ি, স্বাধীনতা এবং আমাদের ভবিষ্যত।’

তিনি বলেন, ‘আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। বিক্ষোভে এসে যদিও মারাও যাই, আমি জানি আল্লাহ তাদের দেখে রাখবেন।’

এদিকে, এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস ইসরাইলকে বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। উভয়পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত থেকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে হবে।

ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।

গাজার উম্মাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আবু আমির আগেই আশঙ্কা করেছিলেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদেরকে মুক্তভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেবে না।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ইসরাইল এ বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করবে।’

সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স

Comments