শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আপনজন অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০১৮

ইসলামী আন্দোলনের অতন্ত্র প্রহরী
শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আপনজন
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন,

লেখাপড়া করেছেন কেমিষ্ট্রি নিয়ে।কলেজে অধ্যাপনাও করেছেন কেমিষ্ট্রির শিক্ষক হিসেবে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত হন ছাত্র জীবন থেকেই।  শিক্ষকতার পাশাপাশি ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন সমানভাবে। শিক্ষকতায় সুনামও অর্জন করেছিলেন ভালোই।

এরই মধ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজকে আরো বেশী সম্পৃক্ত করতে কলেজের চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ইট প্রস্তুতের ব্যবসা।

সততার সাথে পিতার সহযোগিতায় শুরু করা ইট প্রস্তুুতের ব্যবসায় যখন অভাবনীয় সাফল্য পেতে শুরু করেন তখন ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জান মাল দিয়ে আরো বেশী পরিমানে সময় দিতে থাকেন।

পর্যায়ক্রমে হয়ে ওঠেন তৎকালীন সময়ে বরিশালের নাম করা সফল ব্যবসায়ী। সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের অনুরোধে সহসিকতার সাথে অবৈধ কারো কাছে মাথানত না করে ১০০% সততার সাথে কন্টাকটারী করেও সুনাম অর্জন করেছেন।

১৯৮৭ সনে প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর শুরু থেকে সাবেক আমীর মাও. সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর সাথে ছিলেন তিনি। 

কেন্দ্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সেক্রেটারী ও বরিশাল বিভাগের সমন্বয়কারীর দায়িত্বপালন করেছেন অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন।

এক পর্যায়ে পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর পরামর্শে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে আরো গতিশীল করতে ঢাকায় আসেন ।সংগঠনের কাজের জন্য নিজের ব্যবসা গুটিয়ে তিনি সার্বক্ষনিক ইসলামী আন্দোলনের অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন। 

রাস্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনে কেন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে একথা সংক্ষেপে বুঝানোর জন্য একটি পুস্তক রচনা করেন।যার নাম ‘সৃষ্টি যার আইন তার’।তৎকালীন সময়ে সংগঠনের দা’য়ীরা পুস্তিকাটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন ভালোই।

পরবর্তীতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে তৃনমূলে বিস্তৃত করতে নিজের অর্থে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে শুরু করেন দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতে সফর।

পীর সাহেব রহ. এর নেতৃত্বে পরিচালিত ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে মজবুত একটি ভিতের উপর প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন সময়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আশরাফ আলী আকন জেলা, উপজেলাতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কার্যক্রমকে বিস্তৃত করতে চেষ্টা করেছেন।

১৯৮৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ইসলামী ঐক্যজোট, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি, ঈমান আক্বীদা সংরক্ষণ কমিটিসহ বিভিন্ন ব্যানারের আন্দোলনের সাথে এবং নীতি নির্ধারনী বৈঠক সমূহতে আলোচনাতে তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর চিন্তা চেতনা বিশেষ করে ‘নো আওয়ামীলীগ, নো বিএনপি, ইসলাম ইজ দ্যা বেষ্ট’ এই মনোভাবকে তুলে ধরে দলীয় নীতি আদর্শের ক্ষেত্রে তিনি আপোষহীন থেকেছেন।

রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপ, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সংলাপ সমূহতেও তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে গবেষণা ধর্মী স্বতন্ত্র প্রস্তাব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর রাজনৈতিক উপদেষ্টার পাশাপাশি অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন এর উপরে যখন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের দায়িত্ব অর্পন করা হয় তখন তিনি শ্রমিকদের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা, বর্তমানে শ্রমিক সংগঠনের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, মালিক শ্রমিকদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে প্রচলিত শ্রমিক সংগঠনসমূহ দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে|।

এর বাইরে এসে একটি কল্যাণমূখী শ্রমিক সংগঠন হিসেবে তিনি ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনকে প্রস্তুত করেন।

সুসম্পর্ক, উৎপাদন, সমৃদ্ধি ও শান্তি এ চার মূলনীতি নিয়ে দেশের ৯১ টি সাংগঠনিক জেলায় ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনকে মজবুত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

আলহামদুলিল্লাহ উপজেলা ছাড়িয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কাজ চলছে।

সেক্টর ভিত্তিক ৮০ টি সেক্টরে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কার্যকরী সংগঠন রয়েছে| বলা চলে বর্তমান সময়ে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনই দেশের বৃহত্তর ও দুর্নীতি মুক্ত কল্যানমূখী শ্রমিক সংগঠন।

দেশের শ্রমিক শ্রেনীকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি| জেলা, উপজেলাতে সফরের পরে সফর, প্রগ্রামের পর প্রগ্রাম, মিটিং কোনো কিছুতেই যেন ক্লান্তি নেই তাঁর ।

শুধু কথা একটিই ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক জনগোষ্ঠিকে সম্পৃক্ত করে মুসলমান হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই| আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ অনুযায়ী সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে অবশ্যই আমাদের বিজয় হবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

যখনই তিনি কারো সাথে পরিচয় হন তাঁকে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের দাওয়াত দিয়ে নিজের কাছে থাকা সদস্য বইতে সদস্য করতে সংকোচ বোধ করেন না।

কোনো প্রকার লৌকিকতা নেই তাঁর মধ্যে| আছে আন্তরিকতা, সহযোগিতা, সহমর্মীতার মানুষিকতা| বিলাসিতা নয় সৎ সাহস ও সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত তিনি| দ্বীনের স্বার্থে যেকোনো পরিবেশে তিনি থাকতে ও খেতে অভ্যস্ত| দেশ বিদেশের সর্বশেষ খবর সংগ্রহ, কুরআনের তাফসীর, হাদীস গ্রন্থ, ইসলামী ও প্রয়োজনীয় পুস্তক পড়া তার দৈনন্দিন কর্মসূচীর মধ্যে অন্যতম| সফরের মধ্যেও তিনি জ্ঞানার্জনের কাজ অব্যহত রাখতে চেষ্ঠা করেন।

৩ আগষ্ট’১৮ তারিখের ২ ঘন্টার কাজের বিবরণঃ ঘটনাটি হলো- বাদ জুমা আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বরিশালসহ ৩ সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে মুহতারাম আমীরের রুমে অবস্থান করছেন।

জনাব মুহাম্মদ আশরাফ আলী আকন রুমের বাইরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আছেন এ সময়ে দেশের একটি গ্রুপ এন্ড কোম্পানীর একজন ড্রাইভার কিছু জটিলতার কারনে তাঁর পরামর্শ ও সহযোগীতার জন্য এসেছেন।

তিনি তাকে বললেন, মালিক শ্রমিক দ্বন্দ নয় সুসম্পর্কের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। মালিকের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করুন।

পরবর্তীতে আসেন ৪ জন শ্রমিক। তাদেরকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সদস্য হওয়ার দাওয়াত দেন। তারা ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সদস্য ফরম পুরন করে সংগঠনের সদস্য হন। পরবর্তীতে তাদেরকে সংগঠন সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জ্ঞানঅর্জনের জন্য পরিচিতি ও সদস্য ফরম দিয়ে নতুন সদস্য করতে উৎসাহ দেন।

একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন সদস্য করার জন্য যে এতো সিরিয়াস হতে পারে তার উদাহরন অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন নিজেই

ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের নতুন সদস্য হওয়াদের মধ্যে একজন গোস্ত বিক্রেতা যাদেরকে কেউ কেউ কসাই বলে। তাকে তিনি পরামর্শ দিলেন হালাল উপায়ে গোস্ত প্রসেসিং করে সঠিক মাপ দিয়ে ক্রেতাদের নিকট বিক্রয় করতে এবং সম্ভব হলে কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রয় করতে।

এদের মধ্যে অপর একজন ছিলেন, মিষ্টি প্রস্তুতকারক। তাকে পরামর্শ দিলেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও হালাল উপায়ে মিষ্টি প্রস্তুত করতে।

এভাবে তিনি শ্রমিকদেরকে সংগঠিত ও ন্যায়ের উপর চলতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

লেখক:শহিদুল ইসলাম কবির(সাংবাদিক ও লেখক)

Comments