ভারতীয় টিভি সিরিয়াল শুধু পরিবারে নয় দেশেও অশান্তি ও দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে

প্রকাশিত: ৩:৫৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০১৮

শহিদুল ইসলাম কবীর

ভারতীয় টিভি অনুষ্ঠান শুধু যে অপসংস্কৃতি বহন করে পরিবার, সমাজ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা কিন্ত নয়! বরং এতে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা।

ক্ষেত্র বিশেষে শ্রমজীবী স্বল্প আয়ের মানুষরা পরিবারের নারী সদস্যদের চাপে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে তাদের দাবী পুরন করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম। সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে নিজ আশ্রয়স্থলে সহীহ সালামতে পৌঁছতে পেরে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি ,আলহামদুলিল্লাহ।

১৫ নভেম্বর বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বেরিয়েছি। এমন সময় একটি টেম্পুর সামনের সিট খালী দেখে উঠে বসেছি।

একটু পরে দেখলাম ড্রাইভার তার বাসা থেকে আসা ফোন রিসিভ করে একহাতে মোবাইল ধরে আছে আর এক হাতে গাড়ী চালাচ্ছে। হয়তো চলন্ত গাড়ীর ড্রাইভারের সাথে তাঁর স্ত্রী রাগ করে কথা বলছে। তখন ড্রাইভার গাড়ীতে চলন্ত অবস্থায়ই রাগের কারন জানতে চাইছে কিন্ত তাঁর স্ত্রী কারন বলছেনা। যে কারনে ড্রাইভার মোবাইল কেটে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো।

একটু পরে আবার বাসা থেকে কল আসলো এবার ড্রাইভার বললো মাথা ঠান্ডা করে ঘুমাও। কিন্ত সম্ভবত সে ড্রাইভার স্বামীর কথা মতো না ঘুমিয়ে বাসার পরিস্থিতি হয়তো আরো উত্তপ্ত করেছে যে কারনে ড্রাইভারের মা এবার কল করলো।

তখন ড্রাইভার তাঁর মা এর কাছে জানতে চাইলো ওর কি হয়েছে?

মা সম্ভবতঃ বলেছে টিভিতে স্টার জলসা’র কোনো অনুষ্ঠান ঠিকভাবে না দেখতে পারায় এ সমস্যা হয়েছে। একথা শুনে ড্রাইভার নিজের মা এর মাধ্যমে বাসায় থাকা তাঁর সহধর্মিনীকে ম্যাসেজ দিলো ওকে থামতে বলো। আমি যেভাবে পারি আজ টেলিভিশন নিয়ে বাসায় ফিরবো।

ফোন রেখে বললো স্টার জলসা পরিবারকেই শেষ করে দিলো।

পরক্ষনে আমি‌ জানতে চাইলাম কথায় বুঝা যায় বাসায়‌ টিভি আছে, আবার টিভি কিনবেন কেন? জবাব দিলো এতে মনমত স্টার জলসাসহ ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল দেখতে পারে না তাই। এখন আর একটা টিভি কিনতেই হবে। নয় শান্তি হবে না।

আমি বললাম গাড়ি ড্রাইভ করা অবস্থায় আপনি ফোন রিসিভ করেন কেন? যদি আপনার মাথা গরম হয়ে কোনো এক্সিডেন্ট করতেন? তবে আমাদের কি হতো?

কিন্ত সে কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ রইলো। এবার বুঝুন আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আর চাহিদা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে যে একজন টেম্পু ড্রাইভারের বাসায় পরিবারের চাপে দুইটি টেলিভিশন কিনতে হচ্ছে।

আল্লাহ এ থেকে জাতিকে রক্ষা করেন।

এঘটনা থেকে যা বুঝলাম তা হলো-

প্রথম কথা হলো আল্লাহর বিধান অমান্য করে টিভির নাটক সিরিয়াল দেখে অপসংস্কৃতির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

দ্নিতীয়তঃ পরিবারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

তৃতীয়তঃ পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষনের চিন্তা মাথায় নিয়ে হালাল উপার্জনে বের হওয়া খেটে খাওয়া মানুষটির উপর আরো চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। যাতে সে স্পটে দুর্ঘটনা কবলিত হতে পারে।

চতুর্থতঃ এ দাবী পূরনে পরিবারের কর্তাকে অবৈধ পথে উপার্জনের চিন্তা করতে অথবা ঋনগ্রস্ত হতে বাধ্য করছে।

পঞ্চমতঃ গাড়ীর ড্রাইভারসহ যাত্রীরা মৃত্যুর ঝুকিতে পরছে। যাতে ঐ মহিলা ও তার উপর নির্ভরশীলরা পরিবারের একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারাতে পারতো।

তাই মানুষের শান্তি ও কল্যাণের জন্য বাসায় দীনি পরিবেশ সৃষ্টিতে টেলিভিশন ও ইন্ডিয়ান টিভির দর্শক মুক্ত করা সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে।

শুধু গাড়ি ড্রাইভ করা নয় সকল উৎপাদন ও ঝুকিপূর্ন কাজ করা কালীন সময়ে মোবাইলের ব্যবহার নিন্ত্রয়ন করা জরুরী।

অপ্রয়োজনে ফোন করে দীর্ঘ সময় কথা বলা অর্থ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতি তাই আসুন আমরা শপথ নেই-

১. টিভি ও ইন্ডিয়ান চ্যানেল মুক্ত বাসার পরিবেশ সৃষ্টি করি।

২. সন্তানদেরকে টেলিভিশনের থেকে দূরে রাখি।

৩. গাড়ি ড্রাইভ করাকালীন সময়ে মোবাইল বন্ধ অথবা সাইলেন্ট রাখি। নিজে ড্রাইভার একথা মাথায় রেখে পরিবারকে সময় অসময়ে মোবাইলে কল না করতে মানুষিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলি।

৪. গাড়ি চালানোসহ সকল ঝুকিপূর্ন পেশায় নিয়োজিতরা কাজের সময়ে মোবাইল চালানো বন্ধ করে নিজেরা বাঁচি, পরিবারকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাই ও অন্যদেরকে নিরাপদ রাখতে চেষ্টা করি।

৫. অপ্রয়োজনে মোবাইলে কথা না বলি। মোবাইল আলাপ সংক্ষেপ করে পরিবেশ ও অর্থের অপব্যায় প্রতিরোধ করি।

/আরএ

Comments