দোকানদারের স্ত্রী অসুস্থ জেনে খাবারের জন্য ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন!

প্রকাশিত: ৪:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৮

ফাইজা হুমাইরা, বিশেষ প্রতিবেদক

আমেরিকার কেলিফ এর সিল বিচ শহরে অবস্থিত ডোনাট (এক ধরণের পিঠা) বিক্রির একটি দোকান ‘ডোনাট সিটি’। এটি ভোর সারে চারটায় খোলা হয় এবং সন্ধ্যে সাতটায় বন্ধ হয়।

১৯৯০ এর দশকের শেষ দিকে কম্বোডিয়া থেকে এসেছিলেন স্বামী-স্ত্রী ‘স্টেলা’ ও ‘জন চাঁন’। তখন থেকেই এই ডোনাট সিটির মালিক এরা দুজন।

প্রায় ২৪ বছর যাবৎ ‘স্টেলা’ ও তার স্ত্রী ‘জন চাঁন’ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এক সাথে দাঁড়িয়ে ডোনাট বিক্রি করে আসছেন।

স্টেলা মানুষের হাতে খাবার তুলে দিতো আর চান পেছন থেকে তাকে সহযোগিতা করতো। শহরের সকল ক্রেতা এমনটিই দেখে আসছেন গত দুই যুগ ধরে।

হঠাৎ একদিন দোকানটি সন্ধ্যে সাতটার আধাঘন্টা আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতারা মালিক স্টেলার খোঁজ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে নামে।

শেষে তারা জানতে পারে তার স্ত্রী চাঁন অসুস্থ বিধায় তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন স্টেলা। তাছাড়া বেশ কয়েকদিন যাবৎ দোকানে চাঁন এর অনুপস্থিতির কথা জানতে চাইলে ক্রেতাদের কাছে স্টেলা তেমন কিছু বলতো না বিধায় মানুষের আশঙ্কা হয় তার স্ত্রী হয়ত গুরুতর অসুস্থ।

দোকানীর স্ত্রীর এই অসুস্থতার খবর শুনে রাতারাতি শহরের ‘জেনি রজার্স’ নামের একজন নিয়মিত ক্রেতা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজায় একটি পেপার সেঁটে দিয়ে আসে, যাতে লেখা ছিলো ‘আগামীকাল থেকে ডোনাট সিটি খোলার আধাঘন্টা পূর্বেই আমরা সবাই যার যার ডোনাট কিনে নিয়ে আসবো যেন স্টেলা তার অসুস্থ স্ত্রীর সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে এবং তাকে হাসপাতালে সঙ্গ দিতে বেশি সময় পান’।

আর এতেই পরদিন থেকে দোকান খোলার আধাঘন্টা পূর্ব হতে ক্রেতারা ভীড় জমাতে শুরু করে এবং দোকান খোলার আধাঘন্টার মধ্যেই পুরো দোকান খালি করে দেয় ডোনাট প্রেমীরা।

ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে স্টেলা জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকো তার স্ত্রী অ্যানোরিয়াসে ভুগছিলেন এবং অসুখ গুরুতর হওয়ায় শেষে তাকে একটি নার্সিংহোমে রেখে আসতে হয় ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণে।

তিনি ভেবেছিলেন প্রতিদিন বিকেলে বিকেলে গিয়ে তার স্ত্রীকে দেখে আসবেন। কিন্তু প্রথম দিনে আধাঘন্টা অনুপস্থিতির জন্য ডোনাট সিটির প্রতিবেশি ভক্তরা যে এতোটা আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় পাশে এসে দাঁড়াবে এমনটি তার কল্পনায়ও ছিলো না।

গত এক সপ্তাহ যাবৎ তারা এভাবেই আমাকে পুরোটা সমঢ আমার স্ত্রীর পাশে থাকতে আগেভাগে ডোনাট নিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই ভালোবাসার কোন মূল্য দেয়া যায় না বলছিলেন স্টেলা।

এদিকে জেনি রজার্স নামের পোস্টার সেঁটে আসা ব্যক্তির কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ডোনাট সিটির ২০ বছরের নিয়মিত গ্রাহক। সেদিন নম্র-ভদ্র এই মানুষটির স্ত্রী অসুস্থ জেনে আমি সবার বাড়ি গিয়ে বার্তাটি সেঁটে দেই তব আমি তাতে কোনো আর্থিক সহায়তার কথা লিখিনি। আমি শুধু স্টেলার সময় নিয়ে বলে এসেছি। আর আমি জানতাম সকলেই স্টেলা ও তার স্ত্রী চাঁনকে খুব ভালোবাসে।

বিআইজে/

Comments