গত তিন দশকে জাপানি শিশুদের আত্মহত্যার রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে

প্রকাশিত: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০১৮

তুহিন খন্দকার: জাপানে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে শিশুদের আত্মহত্যার ঘটনা। সম্প্রতি জাপান সরকার কর্তৃক প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী তরুণ ও শিশুদের ২০১৭-২০১৮ সালে আত্মহত্যার রেকর্ড গত তিন দশকের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।

আত্মহত্যা জাপানের একটি স্থায়ী সমস্যা যা বিশ্ব মিডিয়ায় প্রায়ই আলোচিত-সমালোচিত। সম্প্রতি যদিও এই সংখ্যাটি প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু শিশু আত্মহত্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্কুলে পড়াশোনার চাপ এবং বন্ধুদের কাছে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শিকার হয়ে সম্ভবত এরা আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে।

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ২৫০ টি শিশু আত্মহত্যা করেছে, যা ১৯৮৬ সাল থেকে সংখ্যায় সর্বোচ্চ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই স্কুল জরিপ মতে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবনযাপনে পরিকল্পনা সাজাতে না পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে। যার ফলে দেখা যায় তাদের অনেকেই স্নাতকোত্তর হওয়ার পরে কোন পথে জীবনকে পরিচালিত করবে তা নিয়ে অতিরিক্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে। তাছাড়াও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাবলিও এর অন্তর্ভুক্ত।

২০১৫ সালে জাপানের মন্ত্রিপরিষদ কার্যালয়ের একটি পৃথক জরিপে দেখা গেছে যে, শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যা ১ সেপ্টেম্বর এর আগ পর্যন্ত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে যে, তাদের গ্রীষ্মকালীন বিরতি থেকে ফিরে এসে বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররা বেশি চাপের মুখে পড়ছে। জাপানের জনস্বাস্থ্য কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে আত্মহত্যা মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচ্য।

টোকিওর কাউন্সেলিং এবং সঙ্কট হস্তক্ষেপ পরিষেবা টিএলএল-এর পরিচালক উইকি স্কোরিজি বলেন, “জাপানে আপনার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অন্যান্য দেশে তুলনায় এখানকার মানুষদের ‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা’। এখানে কোন শিশু ধর্ষিতা হলে সেটিও সে তার বাবা-মা থেকে এড়িয়ে গিয়ে নিজে সমাধানের চেষ্টা করে কিংবা কোন ক্ষেত্রে তারা তাদের পরিবার থেকেও কোন সহায়তা পায় না এমনটিও ঘটছে।

কিছু বিশেষজ্ঞরা বলছেন অতীত থেকেই এখানকার কোন পরিবার তাদের সন্তানদের ব্যপারে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান করেন না। অথচ প্রায় পরিবারই যৌথভাবে বসবাস করছে। তবে অতীতের এই পরিবেশটা এখন অবশ্য কিছুটা কমে আসছে।

তস্যুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ইয়োশি তাকাসু বলেন, শিশুরা তাদের মানসিক সাপোর্ট কম পাচ্ছে। পরিবারের বাবা মা ছাড়াও দাদা-নানি বড় ভাই বোনদের সাহায্য তাদের খুব প্রয়োজন যা বরাবরই ব্যহত হচ্ছে।

এদিকে কিউইউ সাংই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইউকি কুবটা বলেন, জাপানের স্কুলগুলি সাধারণত ছাত্রদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার মোকাবিলায় কোন ধরণের পরিত্রাণ বা সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করে না। শুধু তাই নয় শিক্ষরাও ব্যস্ত সময় পার করে এবং ছাত্রদের জন্য আলাদা করে কোন সময় না দেয়ার ফলেও এমনটি ঘটছে।

আরোও পড়ুন:  দোকানদারের স্ত্রী অসুস্থ জেনে খাবারের জন্য ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন!

বিআইজে/

Comments