পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে জ্বলন্ত মহাকাশ কেন্দ্র

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০১৮

এসআর : বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন অকেজো হয়ে পড়া চীনা মহাকাশ স্টেশনের ধ্বংসাবশেষ আগামিকালের (সোমবার) মধ্যেই ভূপৃষ্ঠে এসে আছড়ে পড়বে। তবে কোথায় পড়বে তা এখনো কেউ ধারণা করতে পারছেন না।

টিয়াংগং-১ নামে এই মহাকাশ গবেষণা স্টেশনটি চীনের উচ্চাভিলাষী মহাকাশ কর্মসূচির অন্যতম প্রধান অংশ ছিল।

চীনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২২ সাল নাগাদ তারা মানুষের বসবাসের উপযোগী একটি মহাকাশ কেন্দ্র মহাশূন্যে পাঠাতে চায়। টিয়াংগং-১ ছিলো তারই পূর্ব প্রস্তুতি। ২০১১ সালে মহাকাশ কেন্দ্রটি কক্ষপথে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। প্রায় সাত বছর পর এটি এখন ধ্বংস হয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে।

চীনা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সোমবার নাগাদ মাহাকাশ কেন্দ্রটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে। বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সাথে সাথে এটিতে আগুন ধরে যাবে। তারপরও কিছু ধ্বংসাবশেষ মাটিতে এসে পড়বে।

চীনের মহাকাশ প্রকৌশল দপ্তর তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে নির্ভয় দিয়েছে, “কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার মতো ঘটনা ঘটবেনা, বরঞ্চ দেখার মত কোনো ঘটনা ঘটতে পারে, আকাশে উল্কাবৃষ্টির মত দৃশ্য চোখে পড়তে পারে”।

কোথায় এসে পড়বে এই মহাকাশ স্টেশন?

২০১৬ সালে চীন জানায় টিয়াংগংয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তারা সেটিকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে কোথায় গিয়ে সেটি পড়বে, তা বলা যাচ্ছেনা। তবে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানাচ্ছে, এটি নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে কোনো এক জায়গায় গিয়ে পড়বে।

কিভাবে এটি বিধ্বস্ত হবে?

অস্ট্রেলিয়ার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের ড. এলিয়াস আবোটানিয়োস বলেছেন, বায়ুমণ্ডলে ঢোকার পর এটির পতনের গতি ক্রমে বাড়তে থাকবে। এক পর্যায়ে এর গতি ঘণ্টায় ২৬,০০০ কিলোমিটারে পৌছুতে পারে। ভূপৃষ্ঠের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছুনর পর এটি গরম হতে থাকবে”। ফলে এটি পুড়তে শুরু করবে। “শেষ পর্যন্ত মাটিতে পড়ার আগে এর কত অংশ টিকে থাকে বলা কঠিন কারণ এর গঠন নিয়ে চীন কখনো কিছু খুলে বলেনি”।

ভয়ের কি কোনো কারণ রয়েছে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন – না। যদিও এই মহাকাশ স্টেশনটির ওজন ৮.৫ মেট্রিক টন, কিন্তু বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সাথে সাথে এটি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তবে খুব যন্ত্রগুলো যেমন, তেলের ট্যাংক বা রকেট ইঞ্জিন হয়তো পুরোপুরি ভস্মীভূত নাও হতে পারে। যদি না হয়, তাহলেও এগুলো কোনো মানুষের ওপর এসে পড়বে সে সম্ভাবনা খুবই কম।

মি. আবোটানিয়োস বলছেন – এসব ক্ষেত্রে ধ্বংসাবশেষের সিংহভাগই গিয়ে পড়ে সাগরে।

টিয়াংগং স্টেশন থেকে স্কুল ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন চীনা নভোচারী ওয়াং ইয়াপিং

টিয়াংগং ১ কেমন মহাকাশ স্টেশন?

যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় মহাকাশে চীনের যাত্রা অল্পদিন আগের ঘটনা। ২০০১ সালে প্রথম চীন মহাকাশে জন্তু পাঠায়। তারপর ২০০৩ সালে প্রথমবার চীনা কোনো নভোচারী মহাকাশে যায়। তারপর ২০১১ সালে এসে চীন প্রথম মহাকাশ স্টেশন পাঠায়, যার নাম টিয়াংগং ১ বা “স্বর্গের প্রাসাদ।” এই কেন্দ্রে মানুষ যেতে পারতো, তবে অল্প কদিনের জন্য। ২০১২ সালে একজন নারী নভোচারী টিয়াংগংয়ে গিয়েছিলেন। দুবছর পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের মার্চের পর থেকে এটি আর কাজ করছিলো না।

/সূত্র : বিবিসি

Comments