খালেদা জিয়ার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে : চিকিৎসক

প্রকাশিত: ৪:৩২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০১৮

একুশ ডেস্ক : কারাগারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন চিকিৎসকরা। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার চিকিৎসক। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ নয় বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) অবস্থা খুব খারাপ নয়। তবে, তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে।’
চিকিৎসকরা দুপুর সোয়া ১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এক কারা কর্মকর্তা সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

ঢাকা মেডিকেলের যে চারজন চিকিৎসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে কারাগারে যান তাঁরা হলেন অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক শামসুজ্জামান, নিউরোলজি বিভাগের মনসুর হাবীব, মেডিসিন বিভাগের টিটু মিয়া ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সোহেলী রহমান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক শামসুজ্জামান জানান, তিনিসহ চার চিকিৎসক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে কারাগারে যান। তিনি বলেন, ‘উনাকে (খালেদা জিয়া) দেখেছি। উনাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।’

ডা. শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা (রবিবার) দুপুরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কারাগারে যাই। তার অবস্থা দেখি। তার মেডিসিনগুলো ঠিক আছে কিনা, তা চেক করেছি। তার অবস্থা খুব খারাপ নয়। তবে, তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে।’

অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা গণমাধ্যম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’

তবে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সোমবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরে সারাদেশে দলটির নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। দলটির নেতাদের সাক্ষাতের সুযোগ না দেয়ায় তাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে এক প্রকার অন্ধকারেই আছেন তারা। আর এরই মধ্যে সরকারের অন্যতম নীতি নির্ধারকের পক্ষ থেকেও বক্তব্য এসেছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত হবার মতো কিছুই দেখছে না।

তবে সরকারের আশ্বাসের পরেও বিএনপির কারাবন্দী নেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে দলটি।

শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ। অবিলম্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মাধ্যমে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। খবর বিবিসির।

তিনি বলেন, তার ব্যক্তিগত যে চিকিৎসক রয়েছেন, সেই ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মাধ্যমে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে যে অবস্থায় রাখা হয়েছে, তাতে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সব চিকিৎসা যেহেতু দেশের বাইরে হয়েছে, সেজন্যে তাকে জামিন দিয়ে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পরে অবশ্য আবার তিনি একথার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, কারামুক্তির পর খালেদা জিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন দেশে নাকি বিদেশে চিকিৎসা করাবেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার খালেদা জিয়াকে একটি দুর্নীতির মামলায় আদালতে আনার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, অসুস্থতার কারণে তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি।

এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাকে জানানো হয়, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাই সাক্ষাৎ করা যাবে না।

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএনপির দাবির জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দরকার হয়, সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। এখানে কোনো রকমের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই। খালেদা জিয়া জেলে আছেন বলে সরকার তার প্রতি অমানবিক আচরণ করতে পারে না। আমাদের সরকার সেরকম সরকার নয়।’

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকরা যদি বলেন যে দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে তাকে বিদেশেও পাঠানো যেতে পারে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোর গলায় বলছেন খালেদা জিয়া জেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি যদি অসুস্থ থাকেন তাহলে তার সুচিকিৎসার জন্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা করবে।

তিনি আরো বলেন, চিকিৎসক যদি মনে করেন তাকে বিদেশ পাঠানো দরকার তবে তাকে বিদেশেই পাঠানো হবে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার বলছে খালেদা জিয়া অসুস্থ। কিন্তু তার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। আমাদেরকে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। দেখা করতে চাইলে সেটাও দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা তার অসুস্থতা সম্পর্কে জানলামই না এদিকে ওবায়দুল কাদের বলে ফেললেন বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সরকারের এ ধরনের বক্তব্যে জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, জনগণকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে হলে বেগম জিয়াকে কারাগারে রাখতে হবে। সরকার এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু লাভ হবে না। কারণ জনগণ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবে না।

কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘এহন একটা ভান ধরছে অসুখ হইছে। একটা ভান ধরছে। এটা বলে অসুখ? কী অসুখ? আর যে মানায় না। আর কষ্ট করতে চায় না। আরে যে মানুষের যে এতিমের টাকা মাইরা খাইসো, ওই কষ্ট তো তোমাকে করতেই হবে। আল্লাহর তরফ থেকে তোমার কষ্ট হবে। এতিমের টাকা মারলে আল্লাহর আরশ কাইপা উঠে। এহন কয়, উনি অসুস্থ। চোরের আবার অসুস্থ। চোর অসুস্থ হইলে অন্য চোরকে যেভাবে চিকিৎসা করা হয়, তোমাকেও সে রকম চিকিৎসা করা হবে, ভিন্ন চিকিৎসা হবে না।’

এ প্রসঙ্গে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের ভাব-ভঙ্গি আর কথাবার্তার উচ্ছৃঙ্খলায় আমরা শঙ্কিত। জনগণ এই সরকারের কোনো কথায় বিশ্বাস করতে পারছে না। আমরা বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আতঙ্কিত এবং শঙ্কিত।

অবশ্য কারা চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাতকারে রাতে বলেছেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) ভালো আছেন। ওনার ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক আছে। ব্লাড সুগার স্বাভাবিক আছে। ওনার হাঁটুতে সমস্যা ছিল, যে কারণে হাঁটতে কষ্ট হয়। এই সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এটা ছাড়া আর কোনো সমস্যা নাই।’

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। একই রায়ে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় এবং আসামিদের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

/এসআর

Comments