গাজায় আবারো সংঘর্ষ, নিহত ৯ ফিলিস্তিনি

প্রকাশিত: ৬:২৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০১৮

একুশ নিউজ : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ইসরায়েল সীমান্তে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৯ ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী নিহত এবং কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা কর্মকর্তারা।

সীমান্ত বরাবর ফিলিস্তিনিদের ডাক দেওয়া বিশাল বিক্ষোভে শুক্রবার কয়েকটি স্থানে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এ সংঘর্ষ ঘটে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংঘর্ষে ৭৫০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে। এদের বেশির ভাগই ইসরায়েলের ছোড়া গুলিতে আহত হয়।

ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা সীমান্ত বেষ্টনী বরাবর ৫ টি জায়গায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করছে। ছয় সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তারা সেখানে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০ হাজার বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।

ইসরায়েল সীমান্তে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনিরা তাদের এই বিক্ষোভের নাম দিয়েছে ‘গ্রেট মার্চ টু রিটার্ন’ বা নিজের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিক্ষোভ। সীমান্তের কাছে তারা পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপন করে সেখানে অবস্থান নিয়েছে।

ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের ভেতরে তাদের ফেলে আসা বাড়ি-ঘরে ফিরে যাওয়ার অধিকার চায়।

১৯৪৮ সালে শরণার্থী হওয়া লাখ লাখ মানুষকে ইসরায়েলের দখলে থাকা এলাকায় ফিরতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে সীমান্ত বরাবর এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে।

শুরুর দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৩০ মার্চকে; ১৯৭৬ সালের এদিন ভূমি দখলের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নয় বিক্ষোভকারী নিহত হন। হামাসের অভিযোগ, ফিলিস্তিনিদের ভয় দেখাতে এবং বিক্ষোভ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই ইসরায়েল গোলা ছুড়ছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহতদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি বালকও রয়েছে। তারা জানান, শুক্রবার বিক্ষোভ শুরুর আগেই ২৭ বছর বয়সের এক কৃষক ইসরায়েলের ট্যাংকের গোলায় নিহত হয়েছে।

এক আহত ফিলিস্তিনিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এই সহিংসতার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ বলেছেন, তাঁরা এক ইঞ্চি ফিলিস্তিনি জমিও ইসরায়েলের কাছে ছাড়বেন না। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের কোন বিকল্প নেই এবং আমাদের ফিরে যাওয়ার অধিকার ছাড়া এই সংকটের কোন সমাধান নেই।”

গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে সব সময় ইসরায়েলের কড়া সামরিক পাহারা থাকে। সেখানে ইসরায়েল তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়েছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘যুদ্ধে জড়ানোর উসকানি দিতেই’ হামাসের এ বিক্ষোভের ডাক। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কোনো সহিংসতার জন্য হামাস এবং বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোই দায়ী হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেল আবিব।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, সীমান্ত বেষ্টনী বরাবর ৫ টি স্থানে প্রায় ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি অবস্থান নিয়েছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঠেকাতে সেনারা কেবল বিক্ষোভের হোতাদের লক্ষ্য করেই গোলা ছুড়ছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

ফিলিস্তিনিদেরকে সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ইসরায়েল টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের পাশাপাশি ট্যাংক এবং স্নাইপারও মোতায়েন করেছে বলে জানানো হয়েছে বিবিসি’র খবরে।

বিক্ষোভে উত্তাল ‘ইসরায়েলি-গাজা’ সপ্তাহ ব্যাপী এই বিক্ষোভ শেষ হবে আগামী ১৫ মে । আর “১৫ মে” দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ‘নাকবা’ কিংবা বিপর্যয় দিবস হিসেবে পালন করে। ১৯৪৮ সালের ঐ দিনে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ফেলে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর। এরপর থেকেই ফিলিস্তিনিরা, ইসরায়েলে তাদের ফেলে আসা বসত বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করছে। কিন্তু ইসরায়েল এই অধিকারের স্বীকৃতি দেয়নি।

/এসআর

Comments