পাক-ভারত ‘সীমিত’ পরমাণু যুদ্ধ; বিশ্বজুড়ে পড়বে প্রভাব

প্রকাশিত: ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৯

একুশে ডেস্ক:পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে ‘সীমিত’ পরমাণু যুদ্ধ হলে বিশ্বে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ভিত্তিতে এ আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে। খবর পার্সটুডের।

অবশ্য, বিশ্ব অনেক সময়ই পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলেও সৌভাগ্যক্রমে কখনো সর্বাত্মক পরমাণু যুদ্ধ হয়নি। তাই এ জাতীয় যুদ্ধ নিয়ে সমীক্ষা চালানো তুলনামূলক ভাবে কঠিন।

পাকিস্তান এবং ভারত যদি ১০ দিনের কথিত ‘সীমিত’ পরমাণু যুদ্ধে নামে গোটা বিশ্বে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। যুদ্ধে পাকিস্তান এবং ভারত উভয়ই পরস্পরের লক্ষ্যেবস্তুতে ৫০টি করে ১৫ কিলোটন পরমাণু বোমা ফেলবে বলে ধরে নেয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষদিকে এসে জাপানের হিরোশিমার ওপর আণবিক বোমা ফেলেছিল আমেরিকা। ইউরেনিয়াম থেকে নির্মিত ‘লিটল বয়’ নামের সে বোমা ছিল ১৫ কিলোটনের।

পাক-ভারত এ রকম বোমা ফেললে তার প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়বে। এ ছাড়া, মানচিত্র থেকে কাশ্মিরকে খুঁজে বের করা যাবে না। অবশ্য, বিপর্যয়ের এ চিত্র রক্ষণশীল হিসাব কষে বলা হয়েছে।

কারণ পাক-ভারত অস্ত্রভাণ্ডারে প্রতি দেশের আড়াইশ’র বেশি পরমাণু বোমা রয়েছে। এ সব বোমার কোনো কোনোটি ১৫-কিলোটনের বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন। অবশ্য, আধুনিক কৌশলগত পরমাণু বোমার তুলনায় এগুলোকে তেমন ক্ষমতা সম্পন্নে কাতারে ফেলা যাবে না!

হিরোশিমায় জনসংখ্যার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক লাখ নাগরিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ‘লিটল বয়।’ আণবিক বোমার ধাক্কায় হিরোশিমার ৬৯ শতাংশ দালান বিধ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান ও ভারতে করাচি, কোলকাতা, মুম্বাইয়ের মতো বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং ঘন বসতি পূর্ণ অনেক নগরী রয়েছে।

এ সব নগরীর কোনো কোনোটিতে প্রতি বর্গমাইলে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। কাজেই অল্প-ক্ষমতার পরমাণু বোমার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কতোটা ভয়াবহ হবে তা অনুমান করাও দুষ্কর।

২০১৪ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পরমাণু বোমা ফেলার পরপরই পারমাণবিক অগ্নিগোলক, বায়ুর প্রচণ্ড চাপ এবং বিকিরণের ফলে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রাণ হারাবে দুই কোটি মানুষ। অবশ্য যদি ১০০ কিলোটন পরমাণু বোমা ব্যবহার করা হয় তবে মৃত্যু এবং ধ্বংসের মাত্রা বেড়ে যাবে চার গুণ ।

মৃত্যুর এ হিসাব করার সময় পরমাণু বোমার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে যারা প্রাণ হারাবেন তাদের সংখ্যা গণনায় ধরা হয় নি। বিকিরণের ধকলে অনেকেই ধুকতে ধুকতে মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকবেন। এ ছাড়া, পরমাণু হামলার পর স্বাস্থ্য, পরিবহন, পয়ঃনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। গুড়িয়ে যাবে অর্থনৈতিক অবকাঠামো। সে কারণেও ধুকে ধুকে মরবেন অনেকে।

পরমাণু বোমা ফেলার পর শুরু হতে পারে প্রাণঘাতী অগ্নিঝড়। ১৯৪৫ সালের মার্চে টোকিওতে নাপাম বোমা ফেলেছিল আমেরিকা। এ থেকে সৃষ্ট অগ্নিঝড়ে নিহত হয়েছিলেন অনেক মানুষ। অবশ্য, নাগাসাকিতে ফেলা মার্কিন ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের আণবিক বোমার চেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল এ ভাবে।

এ ছাড়াও শরণার্থী সমস্যা, পরমাণু বোমা হামলা পরবর্তী বিকিরণ সমস্যা তো রয়েই গেছে। এ সব সমস্যার কোনোটাই ছোট করে দেখা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, আবহমণ্ডলের ধোঁয়া, ছাই প্রভৃতির বিস্তার ঘটবে, ধ্বংস হবে ওজোন স্তর। সবমিলিয়ে এতে ‘পরমাণু শৈত্য’ বা ‘নিউক্লিয়ার উইন্টার’ দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে।

বিশ্বের জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ বসবাস করছে পাক-ভারতে। এ অঞ্চলে যে কোনা বিপর্যয় দেখা দিলে তার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বে। বিশ্ব অর্থনীতি আবার মন্দার রাহুগ্রস্ত হবে স্বাভাবিক নিয়মেই।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পাক-ভারত ‘সীমিত’ পরমাণু যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে ভোগ করতে হবে। এর হাত থেকে রক্ষা পাবেন না মোম্বাসার জেলে বা নেব্রাস্কার স্কুল-শিক্ষক। কিংবা মঙ্গোলিয়ার মহিলা বা পুরুষ শ্রমিক।

এফএফ

Comments