খালেদার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনে আইনমন্ত্রণালয়ের ‘না’

প্রকাশিত: ৩:১৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৩

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির বিষয়ে আইনমন্ত্রণালয় ‘না’ মতামত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ রোববার (১ অক্টোবর) তিনি বলেছেন, আইনগতভাবে অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ সরকারের হাতে নেই। সেই মতামতই আইন মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আইনমন্ত্রী নিজের দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্থায়ী মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন কী কারণে নাকচ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার অবকাশ আইনে থাকে না। আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং সর্বশেষ উপধারা ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেই মতামত হচ্ছে, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটি অতীত ও শেষ হয়ে গেছে। এটি আর খোলার কোনো উপায় নেই।

যেকোনো সময় খালেদার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি, হাসপাতালের খোঁজে পরিবার

আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম যে আবেদনটি ছিল, যা ২০২০ সালের মার্চে নিষ্পত্তি হয়, সেই আবেদনে বলা ছিল, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা যেন করা হয়। তখন দুটি শর্তে তাঁর দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা-১-এর ক্ষমতাবলে দেওয়া হয়েছিল। শর্তগুলো হলো, প্রথমত তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। সেই শর্তগুলো মেনে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় ফিরে যান। সেভাবেই সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়। তবে প্রতি ছয় মাস বৃদ্ধি করা যাবে কি না, বিষয়টি উন্মুক্ত ছিল। এরপর সেই সময় ছয় মাস করে মোট আটবার বাড়ানো হয়েছে।

এ সময় একজন সাংবাদিক জানতে চান, এই অবস্থায় যদি খালেদা জিয়ার পরিবার তাঁকে বিদেশে পাঠাতে চায়, তাহলে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি বারবারই বলছেন, সেটি হলো তাঁকে ফৌজদারি ৪০১ ধারায় দুটি শর্তযুক্তভাবে যে আদেশবলে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি বাতিল করে তারপর আবার পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে তা করা হবে।

বিদেশ যেতে হলে খালেদাকে আবার জেলে যেতে হবে : শেখ হাসিনা

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন সরকার প্রয়োগ করে, তখন সেটিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্ত আছে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটি হচ্ছে, এখন যে আদেশ আছে, সেটি যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাঁকে যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে আদালতে যেতে পারেন। এই অবস্থায় তিনি আদালতে যেতে পারেন বলে এ রকম সুযোগ নেই।

তখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে সেই আদেশ বাতিল করা হবে কি না। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বাতিল করাটি অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন তিনি। দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ওই দুই শর্তে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত আরো ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চেয়ে কাঁদলেন মির্জা ফখরুল

Comments