‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ : পশ্চিমা জোট জি-৭

শাহনূর শাহীন শাহনূর শাহীন

লেখক ও মনোস্বাস্থ্য সাংবাদিক

প্রকাশিত: ৯:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৩
সংলাপ শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা
  • প্রথমবার হামাসের সঙ্গে ইহুদিবাদের কঠোর সমালোচনা পশ্চিমা জোট জি-৭ এর

  • ফিলিস্তিনিদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষণা

  • ইহুদিবাদ ও ইসলামফোবিয়াকে নিন্দা

  • ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দখদারিত্বের কঠোর নিন্দা

শাহনূর শাহীন,

৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার কঠোর নিন্দার পাশাপাশি প্রথমবার ইসরাইলের ইহুদিবাদী দর্শন ও দখলদারিত্বের কঠোর সমালোচনা করেছেন পশ্চিমা জোট জি-৭ এর শীর্ষ নেতারা। সেই সাথে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঐক্যমত ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি ও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ও ইসরাইলের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ্য করে পশ্চিমা নেতার বলেন, ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে চরমপন্থী ইহুদি বসতি স্থাপন সহিংসতা বৃদ্ধি ও পশ্চিম তীরের নিরাপত্তাকে দুর্বল করেছে যা অগ্রহণযোগ্য। এছাড়াও এটি একটি স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি, দ্বিরাষ্ট্রিক (ফিলিস্তিন-ইসরাইল) সমাধানই এই অঞ্চলে শান্তির একমাত্র পথ হতে পারে।

এছাড়াও যৌথ বিবৃতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাসহ হামাস ও ইসরাইলের সমালোচনার পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রেরণে গাজা সীমান্ত উন্মুক্ত করার বিষয়ে ঐক্যমত এবং জাতিসংঘ তহবিলে অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের ঘোষণা করা হয়।

বুধবার বিকেল সংবাদ সম্মেলনে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি তুলে ধরেন

মঙ্গল-বুধবার (৭ ও ৮ নভেম্বর) জাপানের টোকিওতে দুইদিন ব্যাপী  ‘জি-৭ সামিট ২০২৩’ সংলাপ শেষে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন প্রভাবশালী এ সাতটি দেশ যৌথ বিবৃতি দেয়। দুইদিনের সংলাপ শেষে বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি শীর্ষনেতাদের স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতি তুলে ধরেন।

  • জি-৭ এর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি, জার্মান, ফ্রান্স ও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ছাড়াও এতে পর্যবেক্ষক অতিথি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

সংবাদ সম্মেলনে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া বলেন, আমরা (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ প্রতিনিধিরা) আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তার অঙ্গীকারে আগের চেয়ে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ।

মঙ্গলবার নৈশভোজের পর আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হয়, এতে অনলাইনে যুক্ত হন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যৌথ ঘোষণাপত্রে কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে শান্তির একমাত্র পথ বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আমরা জোর দিচ্ছি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে। যা ইসরাইল এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিবে এবং পারস্পরিক স্বীকৃতিতে পাশাপাশি বসবাস করার মাধ্যমে একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং এটাই শান্তির একমাত্র পথ।

যৌথ স্বাক্ষরের বিবৃতিতে ইহুদিবাদ ও ইসলামফোবিয়াকে নিন্দা করে বলা হয়, আমরা আমাদের দেশে এবং বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যেকোনো রূপে ইহুদিবাদ (জায়নিজম) এবং ইসলামফোবিয়াকে (ইসলাম বিদ্বেষপ্রসূত ভয়) প্রত্যাখ্যান করি।

প্রভাবশালী এই সাত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আমরা এই হামলার শিকার সমস্ত বেসামরিক নাগরিক; ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি এবং আমাদের নিজস্ব নাগরিকসহ অন্যান্য যারা এই সংঘর্ষের সময় মারা গেছে বা আহত হয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা জানাই। তারা বলেন, ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং শান্তিতে বসবাসের সমান অধিকার রয়েছে।

হামাস-ইসরাইল প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে অবাধ ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত ও শক্তিশালী করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা বিশ্বের যেকোনো স্থানে বলপ্রয়োগ করে বা জবরদস্তি করে কারো ভূখণ্ডের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত মর্যাদা পরিবর্তন করার যেকোনো একতরফা প্রচেষ্টার প্রতি আমাদের দৃঢ় বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করছি। এই ধরনের প্রচেষ্টা আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করে, যা সমস্ত জাতিকে, বিশেষ করে দুর্বলদের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা বিনষ্ট করে এবং মানবিক মর্যাদা হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

মঙ্গলবার টোকিওতে পৌঁছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন

এছাড়াও বিবৃতিতে ফিলিস্তিন-ইসরাইল, ইউক্রেন-রাশিয়া, চীন, মধ্য এশিয়া ও ককেশাস অঞ্চল, ইরান, আফ্রিকা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা, সংকট, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতি এবং বৃহত্তর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, এবং নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডা, লিঙ্গ সমতা মোকাবেলাসহ নানান বিষয়ে কৌশলগত আলোচনা ও নীতিগত অবস্থান তুলে ধরে দেশগুলো।

বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এও বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতায় ইউক্রেনের প্রতি জি-৭ এর সহযোগীতা কমবে না।

সূত্র : জি-৭ এর পররাষ্ট দপ্তর এর ওয়েবসাইট auswaertiges-amt.de মূল সংবাদ লিংক এখানে

Comments