তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি তর্ক করছিলো…! নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১২:০৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০১৯ মেঝেতে বসে নাগরিকদের কথা শুনছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। (ইনসেটে লেখক) শওগাত আলী সাগর প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক ভ্যাঙ্কুভারের আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে হলরুমটায় কোনো মঞ্চ ছিলো না, সুরম্য কোনো চেয়ারও রাখা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর জন্য। বরং সমবেত শ্রোতারা সবাই বসেছিলেন নিজেদের মতো করে, জাস্টিন ট্রুডো দাঁড়িয়ে, ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা করে গেছেন। যতটা তিনি বক্তৃতা করেছেন, তার চেয়ে বেশি শুনেছেন নাগরিকদের কথা। নাগরিকদের প্রশ্ন উত্তর পর্বটায় কোনো উপস্থাপক ছিলো না, ট্রুডো নিজেই ঘুরে ঘুরে জানতে চেয়েছেন- এরপর কে, নাগরিকদের তিনি সম্বোধন করছিলেন ‘স্যার’ বলে। এগুলো অবশ্য কানাডীয়ান রাজনীতিকদের জন্য নতুন কিছু নয়। কয়েক হাতের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর কঠিন, অপ্রীতিকর সব প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া– এই দেশটার সংস্কৃতিরই অংশ। জাস্টিন ট্রুডো স্বাভাবিকভাবেই এই সব প্রশ্নবাণ সামলাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন বক্তৃতা শুরু করেন, তখনি এক তরুণী চিৎকার চিৎকার চেঁচামেচি করে তাকে বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছিলেন। ফাষ্ট নেশনের এক নেতা দাঁড়িয়ে ‘অপরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং অন্যকে বলতে দেয়ার মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু প্রশ্নপর্বে ফার্স্ট নেশন নেতার আহ্বানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় দুই একজন। নিজে প্রশ্ন করার উছিলায় প্রধানমন্ত্রীর তুমুল সমালোচনা করে দীর্ঘ বক্তৃতা করেও একজন বার বার মাইক্রোফোন চাইতে থাকে। তার চিৎকারে না প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে পারছিলেন, না নাগরিকরা প্রশ্ন করতে পারছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার, আপনি কথা বলেছেন, আপনার কথা আমরা শুনেছি, এই রুমের সবাই শুনেছে। এখন অন্যরা কথা বলছে, তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের কথা বলতে দিতে হবে। কিন্তু তাকে থামানো যাচ্ছিলো না কিছুতেই। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো- নাগরিকদের কাছে জানতে চান- তাকে আমি আবার মাইক্রোফোন দেবো? সবাই সমস্বরে ‘না বলে উঠলে জাস্টিন তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দুঃখিত স্যার, সবাই অন্যের কথা শুনতে চাচ্ছে, কাজেই আমি আর আপনাকে মাইক্রোফোন দিতে পারছি না। আরেক তরুণী এমনভাবে চিৎকার করছিলো যে ট্রুডোর পক্ষে সভা চালিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছিলো। এই পর্যায়ে ট্রুডো এই তরুণীকে উদ্দেশ্য করে জানতে চান- এই খানে যারা আছে, আপনি কি তাদের সম্মান করতে চান না? একজন ট্রুডোর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, তুমি আমাদের সাথে কথা বলছো না কেন? ট্রুডো জবাব দেন- আমি তো তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, তোমার সাথে কথা বলতেই চাচ্ছি। এখানে একজন ভদ্রমহিলা আমাকে একটি প্রশ্ন করেছেন, আমি তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি। ওই ভদ্রমহিলা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে তার প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন। আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তুমি মনে করছো তোমার কন্ঠস্বর ওই রমনীর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিছুতেই যেনো থামানো যাচ্ছিলো না। প্রধানমন্ত্রী আবার প্রশ্ন করেন- এই রুমে যারা বসে আছে- তাদের প্রতি তোমার কোনো সম্মানবোধ নেই? তাদের একটু সম্মান দেখাতে পারছো না তুমি? কিন্তু নাছোড়বান্দাদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। ‘ওহ, তোমরা তা হলে এই’- প্রধানমন্ত্রীর গলায় যেন অসহায়ত্ব, তা হলে আমি তোমাকে এইখান থেকে চলে যেতে বলবো। প্লিজ এখান থেকে চলে যাও।’ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বেশ কয়েকবারই কথা বলেন, প্লিজ এইখান থেকে চলে যাও। কিন্তু তারা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। এই পর্যায়ে পুলিশ এসে তাদের বাইরে নিয়ে যায়। না, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন মুখোমুখি তর্ক করছিলো, কটু কথা বলছিলো- তখনো আইন শৃংখলা রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েনি তাদের উপর। দলের কোনো নেতা কর্মী বা ক্যাডাররাও ঝাঁপিয়ে পড়েনি। বরং পুলিশ তাদের সরিয়ে নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাদের হয়ে নাগরিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গী নাগরিকদের কারও কারও আচরণের জন্য আমি দুঃখিত ও ক্ষমা প্রার্থী। আসলে গণতন্ত্র মানেই তো হচ্ছে পরস্পরের কথা শোনা, পরস্পরকে সম্মান করা। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতেই সামনে এগিয়ে যাওয়া। লেখক: টরন্টোর বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’- এর প্রধান সম্পাদক Comments SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: