বাসটির বিরুদ্ধে রয়েছে ২৭টি মামলা

প্রকাশিত: ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০১৯

একুশ ডেস্ক: ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় মঙ্গলবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দেয়া সুপ্রভাত পরিবহণের বাসটির বিরুদ্ধে আগে ২৭টি মামলা হয়েছে৷ নেই ‘রুট পারমিট’, চালকের নেই লাইসেন্স৷ তারপরও বাসটি সড়কে চলত নির্বিঘ্নে৷

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ওই বাসটির বিরুদ্ধে আগে শুধু ২৭টি মামলাই নয়, বাসটির রুট পারমিটও নেই৷ রুট পারমিট ছিল ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার৷ তারপরও বাসটি ঢাকা শহরে চলাচল করত৷’

এমনকি বাসটির চালক সিরাজুল ইসলামের বাস (ভারী যানবাহন) চালানোর কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না৷ ছিল শুধু হালকা (প্রাইভেট কার) যানবাহন চালানোর লাইসেন্স৷ আটক হওয়ার পর সে স্বীকার করেছে যে ঘটনার সময় সে মাদকাসক্ত ছিল৷ সে নাকি গাঁজা না খেয়ে গাড়ি চালাতে পারে না৷

এদিকে সুপ্রভাত ও জাবালে নূর পরিবহণের বসগুলোর চলাচল নগরীতে সাময়িক নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিন্তু নিষিদ্ধ হতে পারে এটা আঁচ করতে পেরেই সুপ্রাভাত পরিবহণের বাসগুলো নাকি রং পরিবর্তম করে সম্রাট পরিবহণ নামে নগরীতে চলাচলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ অভিযোগ অন্তত এমনটাই৷

এর আগে গত জুলাই মাসে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ও জাবালে নূর পরিবহণকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ কিন্তু কিছুদিন পরই জাবালে নূরের বাসগুলো সড়কে ফিরে আসে৷ মঙ্গলবার রাজধানীর নর্দ্দার বসুন্ধরা এলাকায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস-এর (বিইউপি) ছাত্র আবার নিহত হয় সুপ্রভাস বাসের চাপায়৷

তখন সুপ্রভাত ও জাবেলে নূরের দু’টি বাস যাত্রী ধরার জন্য প্রতিযোগিতা করছিল৷ জানা যায়, এ ঘটনার ঠিক আগেই সুপ্রভাত পরিবহণের বাসটি আরেক নারীকে ধাক্কা দিয়েছিল৷

সুপ্রভাত ও জাবেলে নূরের ওই দু’টি বাসের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হলেও, তাদের বাকি বাসগুলোর চলাচল স্থগিত করা হয়েছে কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখার জন্য৷ ওই দু’টি পরিবহণের বাস আছে ১২০টি৷

আর সুপ্রভাত পরিবহণের ওই বাসের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও, তাকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি৷ বাসের মালিক গোপাল সরকার নানাভাবে সক্রিয় থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে পুলিশ৷

ওদিকে ছাত্ররা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বৃহস্পতিবারও নগরীতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে৷ বসুন্ধরা এবং নর্দ্দা এলকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে৷ শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পুরনো ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে৷

এ সব কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ৷ বসুন্ধরা এলাকায় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ফুল দিয়ে এবং পানি পান করিয়ে সহমর্মিতা দেখায়৷ আর পুলিশ কমিশনার নিজেই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বীকার করেছেন, ‘পরিবহণে খাতে নৈরাজ্য চলছে৷ আমরা শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছি৷ এর দায় সবাইকে নিতে হবে৷’

বিইউপি-র শিক্ষার্থীরদের একাংশ বুধবার তাদের আন্দোলন ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে৷

তবে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিইউপি-র শিক্ষার্থীদের একাংশ৷ মানববন্ধন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিইউপি-র শিক্ষার্থী ফাহমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ অহিংস উপায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি৷

গতকাল (বুধবার) আমরা সড়ক অবরোধ করেছিলাম, আজকে আমরা কোনো অবরোধে যাইনি৷ আমরা চাই না যে কোনো জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হোক৷ সরকার সাত দিন সময় চেয়েছে, আমরা সময় দিয়েছি৷ শুক্র ও শনিবার আমাদের বন্ধ৷ রবিবার থেকে আবারও আমরা সড়কে থাকবো৷’

এফএফ

Comments