বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা এখন আরো সহজ

প্রকাশিত: ৯:০১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯

বশির ইবনে জাফর

শিক্ষা নিয়ে স্বপ্ন সবারই থাকে। ছোটবেলায় স্বপ্ন থাকে একরকম, কখনো আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বপ্ন হয়ে উঠে অন্যরকম। এমনও হয়, অভিভাবকের স্বপ্ন থাকে একরকম আর শিক্ষার্থী হয়ে উঠে অন্যরকম। বিশেষ করে আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুপাতে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছানুযায়ী সাব্জেক্ট খুব কমই পাওয়া যায়।

সীমিত সংখ্যক আসনের কারণে ভর্তি যুদ্ধ করতে করতে ব্যপারটা এমন এসে দাঁড়িয়েছে যে, শিক্ষার্থী কোন্ সাব্জক্টে পড়বে তা শিক্ষার্থীর ইচ্ছার উপর নয় বরং ভার্সিটি তাকে ঠিক করে দেয় সে কোন সাব্জেক্টে পড়বে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী নিজে পছন্দ করে সে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়বে। এখানেই বড় একটা পার্থক্য আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থদের। নিজে পছন্দ করে একটা বিষয় নিয়ে সেটাতে যত সহজে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে একজন শিক্ষার্থী, অন্য কারো পছন্দ করে দেয়া বিষয়ে পড়ে সেটা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশে কর্মদক্ষ শিক্ষিত মানুষের অভাব প্রায়শই দেখা দিচ্ছে কোন কোন চাকররি বাজারে।

জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্ত কর্মের ব্যবস্থা না থাকা যেমন দেশের ‘শিক্ষিত বেকার‘ বৃদ্ধির কারণ তেমনই কোন শূন্যপদে দক্ষ লোকবল না পাওয়াও বেকার বৃদ্ধির কারণ। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইচ্ছানুযাযী সাব্জেক্ট না পেয়ে শিক্ষা জীবন যেভাবে কেটেছে হতাশায় তেমনি দক্ষতার অভাবে কিংবা কর্ম না থাকায় শিক্ষাপরবর্তি জীবনেও হতাশা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাখো মানুষ। চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার খবরও তো পত্রিকায় কম আসছে না।

দেশের যখন এই অবস্থা তখন বহিঃবিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশগুলো সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দিয়েছে জ্ঞানেন্বষণের দুয়ার। মালয়েশিয়াও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য তেমনই এক সুযোগ খুলে দিয়েছে বেশ কিছু বছর আগ থেকেই। অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের ন্যায় প্রচুর বাংলাদেশী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিয়েছে এশিয়ার ইউরোপ খ্যাত দেশ এই মালয়েশিয়াকে। প্রতি বছরই শিক্ষামেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে স্কলারশিপ সহ শিক্ষার্থীদের তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেখান থেকে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা। তবে এটাও সংখ্যার দিক থেকে খুব কম। অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা আরো বেশি সংখ্যক হারে ছড়িয়ে পড়ছে নানা প্রান্তে।

মালয়েশিয়ান এ্যালাইড হেল্থ সায়েন্স একাডেমি ( ইউনিভার্সিটি মাসা) ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষামেলার মাধ্যমে কিছু শিক্ষার্থীকে তাদের পছন্দানুযায়ী সাব্জেক্টে স্কলারশিপ দিয়েছে। ব্যাপকভাবে প্রচার না হওয়ায় সেসব সুবিধা শিক্ষার্থীরা মিস করছে প্রায়ই। এখনোও শিক্ষার্থীরা চাইলে সেখানকার পরিচিত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় স্কলারশিপের আবেদন করতে পারে এবং অনেকে সেটা করছেও। তবে দেশীয় নানাবিধ এজেন্ট বা প্রতিনিধিরা শিক্ষামেলা ছাড়াও বছরের সব সেমিস্টার এর জন্যই শিক্ষার্থীদের এখানে আসার ব্যাপারে সহযোগিতা করছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের টানতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতরণাও যে করছে না কিছু এজেন্সি তা নয়। বরং প্রতারণার ভয়েই আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পড়াশোনা করায় অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত পন্থা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার ক্ষেত্রে সেখানকার শিক্ষার্থীদের থেকে সহযোগিতা বা ইনফরমেশন নিয়ে আসা। কেননা শিক্ষার্থীরা কোন অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা বা পড়াশোনার মান কেমন ইত্যাদি বিষয়াদি এজন্টেরা কখনোই নেতিবাচক বলবে না।

বাইরের দেশে নিজ স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথ আমাদের দেশ থেকে অনেক সহজ। তাই দৃঢ় মানসিকতা ও অদম্য ইচ্ছা যাদের রয়েছে তাদের জন্য আমার এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাগতম।

লেখক :শিক্ষার্থী, মাসা ইউনিভার্সিটি (প্রকৌশল বিভাগ), মালয়েশিয়া।

bashir.ibn.jafar@gmail.com

Comments