বিশ্বজুড়ে বইমেলা; জেনে নিন ইতিহাস ও ইতিবৃত্ত

প্রকাশিত: ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি স্টলে পাঠকরা বই দেখছেন। ছবি: একুশ নিউজ

মারুফ মুনির বিশেষ প্রতিবেদক: অনলাইনে পিডিএফ ফাইলের যুগেও ফুরিয়ে যায়নি মলাটবদ্ধ বইয়ের চাহিদা। বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত  বইমেলাগুলো তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। বইমেলায় শুধু বই বেচা-কেনাই হয় না। এখানে হয় লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের মিলনমেলা।

বই প্রকাশনা শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণভূমিকাও পালন করে বইমেলা। বাংলাদেশেসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক বইমেলার কথাই আমরা জানবো আজকে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা

জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে প্রতিবছর এ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্বের সব থেকে বড় বইমেলা। সবচেয়ে বড় বইয়ের বাণিজ্য মেলাও বলা চলে এ বইমেলাকে।

তবে এটা পাঠক নয় প্রকাশকদের বইমেলা। এই মেলায় পাঠকরা বই কিনতে পারেন না। এখানে বইয়ের সত্ত্ব বিক্রি হয় এখানে। পাঁচদিনব্যাপী চলে এই মেলা।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বই প্রকাশকদের জন্য সাড়ে পাঁচশ’ বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ এই মেলার মতো মিলনমেলা আর কোথাও নেই। ২০০৬ সালে প্রথম শ্রাবণ প্রকাশনী’র অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মেলায় বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণের সূচনা হয়।

লন্ডন বইমেলা

ইউরোপে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরই লন্ডন বইমেলার অবস্থান। গত অর্ধ শতক ধরে প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়। মেলাটি মূলত ছোট প্রকাশনা সংস্থাগুলোর জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।  গত কয়েক বছর ধরে অলিম্পিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেলাটি। এর আগে লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হতো।

‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ বাংলাদেশ

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের উপর বসে কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন।

এই ৩২টি বই ছিলো চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই।

এবারের মেলায় একাডেমি অভ্যন্তরে বাংলা একাডেমির স্টল। ছবি: একুশ নিউজ (এসএস)

১৯৮৩ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কাজী মনজুরে মওলা প্রথম বাংলা একাডেমিতে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে মেলার আয়োজন করেন। অবশ্য ওই বছর মেলা হয়নি। তবে পরবর্তী বছর থেকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ প্রতিবছর এ মেলা হয়ে আসছে।

বুকএক্সপো অ্যামেরিকা বা বিইএ

এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বার্ষিক বইমেলা। মেলা চলে চারদিন পর্যন্ত। প্রতি বছর এর স্থান পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মেলার আয়োজন হয়, যা বিশ্বের আর কোনো মেলার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। গ্রীষ্মের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা।

আবুধাবি আন্তর্জাতিক বইমেলা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রতি বছর এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আবুধাবির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মন্ত্রণালয় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে এই মেলা আয়োজন করে। তাই এই মেলাতেও লাইসেন্স, সত্ত্ব বিক্রি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়।

আবুধাবি মেলায় গুরুত্ব পায় আরবি ভাষায় লিখিত বই। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার প্রকাশনাগুলোই এতে বেশি অংশ নেয়।

হংকং বইমেলা

১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করে হংকং বইমেলা। প্রতিবছর জুলাই মাসে এ মেলার আয়োজন করে দেশটি। এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় বইমেলা।

নতুন দিল্লি বিশ্ব বইমেলা

১৯৭২ সালে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে ‘নতুন দিল্লি বিশ্ব বইমেলা’র পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট এ মেলার আয়োজন করে। বছরের শুরুতেই এই মেলা বসে। ১৮টি ভাষার প্রায় ১২ হাজার প্রকাশক ‘নতুন দিল্লি বিশ্ব বইমেলায়’ অংশ নেন।

কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলা

প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শুরু হয় ‘কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলা’। ‘কলকাতা বইমেলা’ নামেই বেশি পরিচি। আন্তর্জাতিক বইমেলা হলেও মূলত বাংলা বই-ই বিক্রি হয় বেশি৷ ১২ দিনব্যাপী চলা এ মেলায় দুই বাংলাদেশের বিখ্যাত সব লেখদের পাশাপাশি নবীন লেখকদের বইও পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের বইমেলায় যেমন কলকাতার লেখকদের বই পাওয়া যায় তেমনি কলকাতা মেলাও বাংলাদেশি লেখকদের বই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ আর কলকাতার  ‘কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলা’ দুই বাংলার লেখক পাঠাকতের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

/আরএ

Comments