শ্রমিকদের কর্মবিরতি; আন্দোলন নাকি প্রহসন?

প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০১৮

বশির ইবনে জাফর

পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছে। তাও আবার ৪৮ ঘন্টার জন্য। এর মাধ্যমে তারা সরকারের কাছে দাবি জানাতে চেয়েছে। স্বাধীন দেশে দাবি জানানোর জন্য কর্মবিরতিতে যাওয়া দোষের কিছু নয়। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে দাবিসমূহ কী?

ভালো-মন্দ মিলিয়ে এক কথায় বললে এভাবে বলতে হয় ; সড়কে গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ মারার যে শাস্তির বিধান হয়েছে তারা সে আইন মানবে না। এ আইন বাতিল করতে হবে। অন্যথায় দেশ এমন অচলই রাখা হবে। এটাকে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি বিদ্রোহ যেন না বলা যায় সেজন্য ৮ দফা দাবির সাথে একটি এটাও রেখেছে যে সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ চায়। তারা পুলিশের অনৈতিকতাকে সামনে আনতে চেয়েছে। যদিও আমাদের দেশের পুলিশরা দুধে ধুওয়া তুলশি পাতা নয়। একথা অনস্বীকার্য, তথাপিও সড়কে নিয়ম শৃঙ্ক্ষলা শতভাগ মেনে গাড়ি চালালে পুলিশের হয়রানি করার সুযোগটা কোথায় এ প্রশ্ন এসেই যায়। সুতরাং দাবিটি যে শুধুমাত্র মানুষের গ্রহণযোগ্যতার জন্যই রাখা হয়েছে এমনটা বলাই যায়।

এরা শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ এরা। খাটুনি বন্ধ করে উপার্জন বিসর্জন দিয়ে তারা যে শুধুমাত্র দাবি আদায়ের আন্দোলন করছে তা বলা যায় না সড়কে তাদের নানাবিধ কর্মকাণ্ডে। কর্মবিরতির প্রথম দিন আমাকে শিক্ষাবোর্ড যাবার প্রয়োজন হয়েছে একটি জরুরী কাজে। সংবাদকর্মী হিসেবে আমার আগেই ধারণা ছিলো রাস্তায় পরিবহন সংকটে পড়তে হবে। সে ভাবনা মাথায় রেখেই সময় নিয়ে বেরিয়েছিলাম। তবে সড়কে এসে যে অভিজ্ঞতার দেখা মিললো তা কখনো আশা করতে পারিনি।

‘পাঠাও’ এ্যাপ দিয়ে রিকুয়েস্ট দিলাম মোটর সাইকেলের জন্য। গন্তব্য রায়েরবাগ থেকে যাত্রাবাড়ি, গুলিস্তান হয়ে পলাশির শিক্ষা বোর্ড। দীর্ঘ সময় পেড়িয়ে গেলেও রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট না হওয়ায় আমাকে পায়ে হেঁটেই রওয়ানা করতে হয়েছে। সড়কে নেই কোন ইঞ্জিল চালিত যান। এরকমটি আগে কখনোই দেখিনি ঢাকা শহরে। সিএনজি, লেগুনা কিংবা এম্বুলেন্সের দেখা মিলবেই এমনটি হয়েছে। কিন্তু এসবের কিছুই নেই। কেন নেই তার উত্তর পেলাম যাত্রাবাড়ি পৌঁছা মাত্রই। তারা মোটর সাইকেল আরোহি অফিসগামী যাত্রীদের গায়ে মবিল মেখে দিচ্ছে, মোবিল ছুঁড়ছে মৃত্যু পথযাত্রী এম্বুলেন্সেও। কাউকেই যেতে দিচ্ছে না। সিএনজি চালকদের কিবা নিজস্ব গাড়িতে করে কোন জরুরী কাজে বের হওয়া গাড়ির যাত্রীদের নামিয়ে মবিল মেখে দিচ্ছে। আর এসব কিছুই হচ্ছে থানার মাত্র ১০০ গজ সামনেই। যেখানে পুলিশ নির্বিক দর্শকের ভুমিকায় সেখানে গাড়ি আটকে লাঞ্ছনা আর নাশকতার খবরে কী করেই বা মানুষ গাড়ি নামায় রাস্তায়।

কর্মমুখী মানুষের দূর্ভোগ

সন্ধ্যায় খবর এলো মৌলভিবাজারে শ্রমিকরা একটি এম্বুলেন্স আটকে রেখেছে। আর হাসপাতালে যেতে না পারায় সেখানেই মারা যায় নবজাতক এক শিশু। ব্যাপারটি কতোটা ভয়াবহ ও জঘন্য তা ভাবকেই গা শিওরে উঠে। শুধু তাই নয় নারায়নগঞ্জে একটি স্কুল বাস থেকে ছাঁত্রীদের বের করে এনে তাদের গায়ে মবিল লেপ্টে দিয়েছে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা। আবার আন্দোলন এর নেতারা মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছে এসবের দায় তারা নিবে না। গণমাধ্যমে উঠে আসছে একের পর এক নৈরাজ্য ও নাশকতার সংবাদ।

আর যাদের দ্রুত গন্তব্যের জন্য কিংবা দূরের পথ হেঁটে যাবার শক্তি না থাকায় রিকশার মুখাপেক্ষি হতে হয়েছে দিনশেষে তারা নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরেছে রিকশাওয়ালাদের ভাড়া মিটাতে মিটাতে। ২০ টাকার ভাড়া হয়ে গেলো ১২০ টাকা! ভাড়া কম নিতে বলার কোন সুযোগ নেই। কেননা আজ তারাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে মুখিয়ে আছে। অপরদিকে যারা রিকশাও পায়নি তাদের কাউকে কাউকে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িতে করে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। যে ময়লার গাড়ি দেখলে নাকে রুমাল চেপে আমাদের পথ চলতে হয়েছে সে ময়লার গাড়িই সময় ও পরিস্থিতির সাথে হয়ে উঠলো যাত্রী পরিবহনের মাধ্যম।

হঠাৎ দেশের এমন নাজুক পরিস্থিতির পেছনে অদৃশ্য কোন শক্তির হাত কি নেই। দেশকে এভাবে বিপর্যয়ে ঠেলে দিয়ে ওরা কী চায়? এটা কি আন্দোলন নাকি প্রহসন? সত্যিকারার্থেই দেশ কি তবে ওদের কাছে জিম্মি? ভবিষ্যতে এভাবে আরো দুটি দিন চললে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডে যে আঘাত পরবে তা কি আমাদের ভাবনায় আছে? যদি থেকেই থাকে তবে এরকম প্রহসনের কোন বিচার কেন নাই? নাকি ওরা ম্বয়ং রাষ্ট্রের বিচারের ক্ষমতা রাখে?

টিকে/

Comments