প্লাষ্টিক সার্জারির শরয়ী বিধান

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮

বর্তমান সময়ে মানুষ বিভিন্ন কারণে প্লাষ্টিক সার্জারি করে থাকে ,মুলত প্লাষ্টিক সার্জারি দুই ধরনের হয়ে থাকে৷

১৷ এমন সার্জারি যা শরীরের কোনো ত্রুটি সারানোর জন্য করা হয়,যেমন অসুস্থতা থেকে উদ্ভূত ত্রুটি,বা জন্মগত কোনো ত্রুটি দূর করা যেমন অতিরিক্ত বা অকেজো অঙ্গুলি ফেলে দেওয়া৷ জন্মগত বিকৃত অঙ্গকে স্বাভাবিক করা৷ এক্সিডেন্ট ইত্যাদি জনিত ত্রুটি যেমন আগুন, আ্যসিড বা কোনো এক্সিডেন্টের কারণে বিকৃত চেহারা বা শরীরের অন্য কোনো বিকৃত অংশ স্বাভাবিক করা ইত্যাদী চিকিৎসার প্রয়োজনে প্লাষ্টিক সার্জারি করা ৷

শরীয়তের দৃষ্টিতে উক্ত সকল প্রয়োজনে প্লাস্টিক সার্জারি করা জায়েয৷এই জাতীয় সার্জারী করাতে কোন অপরাধ নেই৷বরং তা শরীয়ত সম্মত ৷কারণ এ ধরনের সার্জারির দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করা উদ্দেশ্য নয় বরং তা চিকিৎসার প্রয়োজনে করা হয়৷আর জায়েয কেননা রাসূল(সাঃ) যুদ্ধে নাসিকা কর্তিত ব্যক্তিকে স্বর্ণের তৈরি নাসিকা লাগানোর অনুমতি দিয়েছেন৷

যেমন আব্দুর রহমান বিন তরাফা রহ.বলেন কুলাব যুদ্ধে আমার দাদা আরফাজা বিন আসআদ (রাঃ)এর নাক কেটে যাওয়ায় তিনি রুপার নাক বানিয়ে নিলেন। এরপর তা দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)তাকে স্বর্ণের নাক লাগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, অনিচ্ছাকৃত কোনো দুর্ঘটনায় অপারেশন বা প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হলে তা বৈধ আছে।

২৷ সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে প্লাস্টিক সার্জারি করা যেমন সার্জারি করে দাঁত চিকন বা ফাঁকা করা৷

নাসিকা সার্জারি করে ছোট করা৷ স্তনে সার্জারি করে ছোট বা বড় করা৷ চেহারা বা শরীরের অন্য কোন অঙ্গে সার্জারি করে চামড়া টানটান করা অথবা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে সার্জারি করে বার্ধক্যের ছাপ দূর করা ইত্যাদি৷

শরীয়তের দৃষ্টিতে এই সকল কারণে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া কেবল সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে প্লাস্টিক সার্জারি করা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতির অন্তর্ভুক্ত এবং মানুষের খেয়াল খুশি মত আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে তামাশা করার শামীল যা অভিশপ্ত শয়তানের কাজ,

তাই এই ধরনের প্লাষ্টিক সার্জারি করা নাজায়েয ও হারাম৷

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- শয়তান বললো, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট একটি অংশ গ্রহণ করবো,তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্টির আকৃতি পরিবর্তন করতে বলবো।(সূরা নিসা: ১১৮-১১৯)

এবং রাসূল(সাঃ)বলেছেন যে সকল মহিলারা সৌর্ন্দয বর্ধনের উদ্দেশ্যে যারা ভ্রু প্লাক করে এবং করায় এবং যারা দাঁত মৃসন ও তাতে ফাক সৃষ্টি করে, যারা উলকি আঁকে এবং যাদের জন্য উলকি আঁকা হয় তাদের উপর আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাৎ বর্ষণ করেন। (সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ২১২৫)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বুঝায়ায় যে, সৌর্ন্দয বর্ধনের উদ্দেশ্যে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে শারীরিক গঠনে কোনোরূপ পরিবর্তন করা অভিশপ্ত শয়তানের কাজ, যা সুস্পষ্ট হারাম৷

১৷আল কোরআন সূরা নিসা: ১১৯,
২৷সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ২১২৫,
৩৷সুনানে আবুদাঊদ হাদীস নং ৪২৩২,
৪৷কাজাইয়া তিব্বিয়া মুয়াসারা২/৮০,
৫৷জাদীদ তিব্বি মাসায়েল ৭৫৷

মুফতী বিলাল হুসাইন,(কুমিল্লা)
ইফতা: আল মাহাদুল আলী আল ইসলামী,হায়দারাবাদ,ইন্ডিয়া৷

Comments