আসুন,আমরা মার্জিত শব্দ ব্যবহার করি

প্রকাশিত: ৯:০০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮

কথা- বার্তা ও আচার- আচরণ একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে, কথা দ্বারাই অনেকটা ওজন মাপা যায়৷

কথায় বিশুদ্ধ,মার্জিত ও ভদ্র শব্দ প্রয়োগ করা উচিত৷যদিও একটি জিনিসকে বোঝাতে বিভিন্ন সমার্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয় এবং সবগুলোরই অর্থ ও উদ্দেশ্য একই জিনিস হয়ে থাকে৷

কিন্তু,সে শব্দসমূহের কোনটি নীচুতা প্রকাশ করে এবং কখনো কখনো গালি বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়৷ আবার কোনটি খুবই ভদ্রতা প্রকাশক৷তাই, আমাদের উচিত হবে,সেই সমোর্থবোধক শব্দগুলির মধ্যে সবচে’ মর্জিত ও ভদ্র শব্দটি ব্যবহার করা৷

কোরআন-হাদিসে বিভিন্ন স্থানে ইশারা-ইঙ্গিতে এর তা’লিম দেয়া হয়েছে৷
আল্লাহ তা’য়ালা প্রাকৃতিক প্রয়োজনকে “নীচু স্থান” দ্বারা এবং স্ত্রী সহবাসকে “স্পর্শ” শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন৷তিনি বলেন:
أو جاء أحد منكم من الغائط أو لامستم النساء…
(সূরা নিসা:৪৬)
হাদিস শরিফে সহবাসের অর্থ বোঝাতে, “চার অঙ্গের মাঝে বসা” শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে৷
إذا جلس بين شعبها الأربع ثم جهدها فقد وجب الغسل
(সহিহ বুখারি,হাদিস নং ২৪৭)

এ জাতীয় কিছু শব্দ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করছি–
১৷ বাথরুম বা,টয়লেট (Bath room/Toilet) শব্দটি ইংরেজি হলেও বাংলায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে৷ তবে, শব্দ দু’টি মার্জিত নয়৷ তাই, এর পরিবর্তে ওয়াশরুম (Washroom) বলা যেতে পারে৷ আরবিতে এর জন্য المرحاض، بيت الأدب ، دورة المياه ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয় ৷উর্দূতে একে طہارت خانہ বলে৷

আরবিতে ঋতুস্রাব বোঝানোর জন্য রুপক অর্থে (মাজাযি) “হায়েজ” শব্দ ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু, শব্দটি ঋতুস্রাবের অর্থে খুব প্রসিদ্ধ৷ তাই,আল্লামা সাইয়্যেদ আনোয়ার শাহ কাশ্মেরী রহ. উক্ত শব্দ ব্যবহার না করে এর সমার্থবোধক শব্দ তমছ (طمث) ব্যবহার করতেন৷

কারণ, নীচুতা প্রকাশক কোন শব্দ তার রুপক অর্থে প্রসিদ্ধ হয়ে গেলে,তা প্রকৃত অর্থের (হাকিকি মা‘না) স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়৷তাই, সেক্ষেত্রে রুপক অর্থের পরিবর্তে অন্য শব্দ ব্যবহার করা উচিত৷

২৷ আরেকটি শব্দ হলো, মোটা৷
শব্দটি অনেকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে৷ তাই,
এর পরিবর্তে আমরা স্থুলকায় বা,ভারি শরীরের অধিকারি ইত্যাদি শব্দ বলতে পারি৷ ইংরেজিতে Fat এর পরিবর্তে মহিলাদের জন্য Full-figured (অর্থ্যাত উঁচু ফিগার বিশিষ্ট) আর,পুরুষের জন্য Chubby বা, Plump (স্থুলকায়) শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে৷

৩৷ কাফের /নাস্তিক- মুরতাদ৷
শব্দ দু’টিকে আজকাল এক জাতীয় গালি মনে করা হয়৷ হিন্দু,ইহুদী,খ্রিষ্টানরা নিঃসন্দেহে কাফের৷ কিন্তু,যেহতু এটি গালি তাই, কোন হিন্দুকে কাফের বললে সে কষ্ট পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে৷ ইসলামের বিধান হলো, কোন মানুষকে শরয়ী কোন কারন ছাড়া ( চাই সে যে ধর্মেরই হোক) কষ্ট না দেয়া৷ তাই, কাফের শব্দের পরিবর্তে “অমুসলিম/ গাইরে মুসলিম” (Non- Muslim) শব্দ প্রয়োগ করা উচিত ৷ উর্দূতে এর জন্য “বেরাদারে ওয়াতন” (برادران وطن) শব্দ ব্যবহার করা হয়৷

৪৷পঙ্গু,লুলা, কানা, ট্যারা, পাগল, বিকলাঙ্গ…৷
শারিরীক ত্রুটি বোঝাতে আমরা পঙ্গু,লুলা… ইত্যাদির পরিবর্তে “শারিরীক প্রতিবন্ধী” আর,মানসিক সমস্যা বোঝাতে পাগল… ইত্যাদীর পরিবর্তে “মানসিক প্রতিবন্ধী” শব্দটি ব্যবহার করতে পারি৷
ইংরেজিতে- Handicapped এর পরিবর্তে শারিরারিক প্রতিবন্ধি বোঝাতে Physically Challenged এবং মানসিক প্রতিবন্ধি বোঝাতে Mentally Challenged আর Diffrently Adlet শব্দটি উভয়টি বোঝাতে ব্যবহার করা হয়৷

৫৷ফকির,মিসকিন,গরীব ও বলতে ভালো শোনায় না৷ তাই, এর পরিবর্তে আমরা “সুবিধাবঞ্চিত / অসচ্ছল” শব্দ ব্যবহার করতে পারি৷ ইংরেজিতে Poorএর পরিবর্তে Underprivileged শব্দ ব্যবহার করা হয়৷

৬৷মারা গেছে৷
এর পরিবর্তে আমরা
চলে গেলেন / আর নেই / পরলোক গমন করেছেন/ আল্লাহর সান্নধ্যে চলে গেলেন ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে৷
আরবিতে مات এর পরিবর্তে توفي / إنتقل إلي رحمة الله ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়৷
ইংরেজিতে Died এর পরিবর্তে Passed away ব্যবহার করা হয় ৷

বাংলা, আরবি ও ইংরেজিতে এ জাতীয় আরো অনেক শব্দ আছে৷ আশা করি উল্লেখিত ব্যাখ্যার দ্বারা একটি সম্যক ধারণা হবে৷ইনশাল্লাহ

লেখক:আতিক বিন নূর
ফাজেলে দারুল উলূম দেওবন্দ,ভারত৷
শিক্ষার্থী: উচ্চতর ইসলামি আইন ও হাদিস বিভাগ: ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক নলেজ এন্ড সাইন্স,হায়দারাবাদ,ইন্ডিয়া৷

Comments