পবিত্র কোরআনে শ্রমনীতি

প্রকাশিত: ১:১৯ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০১৮

তানজিল আমির

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের মেহনতি জিন্দেগির কথা বলতে গিয়ে একদিন বলেছিলেন, দুনিয়াতে আল্লাহ এমন কোনো নবী পাঠাননি যিনি বকরি চরাননি। তখন সাহাবা-ই-কিরাম বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর! আপনিও কি তাই!

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, হ্যাঁ, আমি দু’কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরি চরিয়েছি।

নবী জামাতা হজরত আলী রা.-এর শ্রমের কাহিনী তিনি নিজেই এভাবে বলতেন, মদিনায় থাকাকালীন একবার ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শহরতলীর দিকে কাজের তালাশে বের হয়ে পড়লাম।

এক স্থানে একটি মেয়েকে মাটি জমা করতে দেখতে পেলাম। মনে হল সে হয়তো তা ভিজাবে। তখন একটি খেজুরের বিনিময়ে এক এক বালতি পানি তুলে দেয়ার কাজে লেগে গেলাম। এভাবে ষোল বালতি পানি তুললাম। এতে আমার হাতে ফোসকা পড়ে গেলো। কাজ সেরে পানির কাছে গিয়ে হাত-পা ধুলাম। মেয়েটি আমাকে ষোলটি খুরমা পারিশ্রমিক দিয়ে দিলো। তা নিয়ে নবী সা.-এর কাছে এলাম।

ঘটনা বর্ণনার পর নবী সা. ও আমার সঙ্গে তা খেলেন। এভাবে রাসূল সা. নিজে শ্রমিক হয়ে শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং সাহাবাগণকে শ্রমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। নবী করিম সা. বলেন, শ্রমজীবীর উপার্জনই উৎকৃষ্টতর যদি সে সৎ উপার্জনশীল হয়’। শ্রমজীবী মানুষদের ন্যায্য অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রেরণায় প্রতিবছরের মতো।

এবারও ১ মে পালিত হল আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। মানুষমাত্রই শ্রমজীবী। আমরা জানি, মানবতার দীক্ষাগুরু আল্লাহর প্রেরীত নবীগণ কখনও কাজহীন থাকতে পারেন না। উপার্জন করা পরিজনদের ভরণ-পোষণের জন্য পরিশ্রম করা ইসলামের দৃষ্টিতে জিহাদের মতোই।

এক সাহাবির প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সা. বলেন, নিজের পরিজনদের জন্য হালাল রুজি উপার্জনে ব্যাপৃত থাক; কেননা নিশ্চয় এটি আল্লাহর পথে জিহাদ করার মতোই’। একজন মুমিনের কাছে এর চেয়ে সুন্দর বাণী আর কী হতে পারে? উপার্জনের দিকে উৎসাহিত করে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমাদের নামাজ শেষ হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়; আর আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশের চেষ্টা কর’।

মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের এ সময়ে এসে শ্রমিক ও শ্রমজীবী বলতেই কেমন যেন নিচু শ্রেণীর মানুষকে বোঝায়। পারস্পরিক সৌহার্দ্য সম্প্রীতি নেই এ সমাজে। আজকের বস্তুতান্ত্রিক পৃথিবী আর্থিক মানদণ্ডের কাঠি দিয়ে মানুষে মানুষে বিরাট সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।

বিত্তহীন ব্যক্তি সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় তার কোনো মূল্যই নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে আর্থিক সঙ্গতিই সমাজে স্থান লাভের উপায় নয় বরং প্রত্যেক সৎকর্মশীল ভালো ব্যক্তিই মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে তারাই বেশি মর্যাদাবান যারা অধিক আল্লাহ ভীরু ও পরহেজগার’। (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১৩)

মুমিন ব্যক্তিরা ভাই ভাই। সামাজিকতায় কারো কোনো প্রাধান্য নেই। রাসূল সা.-এর স্পষ্ট ঘোষণা, আজমের ওপর আরবের, সাদার ওপর কালোর আর কালোর ওপর সাদার কোনো প্রাধান্য নেই।

ইসলাম যে সমাজ ব্যবস্থার সন্ধান দিয়েছে, তা শুধু কয়েকটি ক্ষেত্রেই নয়, বরং সার্বিকভাবে এর প্রত্যেকটি ধারা যদি কার্যকর হয় তবে এমন এক সামাজিক পদ্ধতির উদ্ভব হবে যাতে সৃষ্টি হবে না অসংখ্য ধনকুবেরের সৃষ্টি হবে না লাঞ্ছিত, অসহায় ভুখানাঙ্গা শ্রেণির। তখন সমাজে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ মধ্যম অবস্থার জন্ম নেবে এতে সব মানুষ সুখ ভোগ করবে।

/এএইচ

Comments