নিজের অজান্তেই এতোদিন ধরে পোকা খেয়ে আসছেন?

প্রকাশিত: ৬:০৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০১৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আপনি বিভিন্নভাবে অনেক আগে থেকেই পোকামাকড় খেয়ে আসছেন। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, পোকামাকড় কীভাবে খাওয়া সম্ভব!

কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আপনি অনেক দিন ধরেই অজান্তে পোকামাকড় খেয়ে আসছেন। বিশ্বে খাবারে লাল রঙ করার জন্য কারমাইন নামের যে পদার্থ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, তা তৈরি হয় পোকামাকড় চূর্ণ করে।

আপনি অবাক হলেও এটাই সত্য যে, প্রতিদিন বিভিন্ন রঙ্গের যে খাবার খাচ্ছেন তাতে যে রঙ ব্যবহার করা হয় সেটা পোকামাকড় থেকেই তৈরি হয়।

দক্ষিণ আমেরিকায় ক্যাকটাসে কোকোহিনেল নামের এক ধরণের পোকা থাকে। এখন পেরুতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই পোকার চাষাবাদ করা হয়।  আর সেই পোকা চূর্ণ করেই তৈরি করা হয় কারমাইন।

খাবারে রঙ করার জন্য প্রতিবছর ক্ষুদ্রাকৃতির এরকম কোটি কোটি পোকার চাষ করা হচ্ছে। আর সেই পোকার চূর্ণ কারমাইন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে খাদ্য শিল্পে। দধি থেকে শুরু করে আইসক্রিম; ফলের পাই থেকে শুরু করে কোমল পানীয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে এই পোকা চূর্ণ কারমাইন।

কোকোহিনেল পোকা

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, পোকা চূর্ণ  কারমাইনের এই ব্যাপক ব্যবহারের কারণ কী? কারণ হচ্ছে, এটি নিরাপদ আর দীর্ঘস্থায়ী, যা তাপ বা আলোর কারণে নষ্ট হয় না।

সমর্থকরা দাবি করেন, পাঁচশো বছরেরও আগ থেকে দক্ষিণ আমেরিকান মায়া নৃগোষ্ঠী এবং এরপরে অ্যাজটেক মানুষরা এই পোকার চূর্ণ ব্যবহার করতো। কৃত্রিমভাবে তৈরি খাবারের রঙের তুলনায় এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো বলে তারা মনে করেন।

তবে তারাও স্বীকার করেন, খাদ্য পণ্যের গায়ে এই পণ্যটির ব্যবহারের কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকা উচিত। পাশাপাশি এখন প্রাকৃতিক অন্য অনেক কিছু থেকে লাল রঙ তৈরি হচ্ছে, যেখানে কোন পোকামাকড় নেই।

হয়তো আপনি লাল রঙের কোন খাবারের উপাদান তালিকায় চোখ বোলালে, সেখানে কারমাইন নামটি দেখতে পাবেন না। বরং হয়তো লেখা রয়েছে, প্রাকৃতিক লাল রঙ অথবা ক্রিমসন লেক । বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কারমাইনকে যে নম্বরটি দিয়েছে, সেই ই১২০ নম্বরটি খুঁজে পা্বেন।

কোকোহিনেল চূর্ণ

কারমাইন নিয়ে গবেষণা করেছেন অ্যামি বাটলার গ্রিনফিল্ড। তিনি বলছেন, খুব কম মানুষেরই এই খাদ্য উপাদানে সমস্যা হয়। সবমিলিয়ে খাবারের উপাদান হিসাবে এর অতীত খুবই ভালো। বিশ্বে কারমাইনের ৯৫ শতাংশই উৎপাদন করে পেরু। স্ত্রীলিঙ্গের পোকাগুলোই চাষ করা হয়, কারণ এগুলোর ডানা থাকে না, ফলে উড়তেও পারে না।

মিজ বাটলার বলছেন, পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে, কারমাইন এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যার ওপর পেরুর অসংখ্য কৃষকের আয়ের উৎস। পেরুর মানুষজন বেশিরভাগই গরীব, বেঁচে থাকার জন্য কারমাইনের ওপর তারা নির্ভর করে আছে।

বছরে বছরে বিশ্বে কারমাইনের চাহিদাও বাড়ছে, ফলে এর দামও চড়া হচ্ছে। গত চার বছরে কারমাইনের দাম বেড়েছে ৭৩ শতাংশ।

কারমাইন ব্যবহার করা হয় লাল লিপস্টিকেও

বিশ্বে অনেক কোম্পানিই পোকা দিয়ে কারমাইন তৈরি করতো। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো কোনো কোম্পানি কারমাইন তৈরি করা থেকে নিজেদের সরিয়েও নিয়েছে। এরকম একটি বড় কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের কফি চেইন স্টারবাকস।

কোকোহিনেল নামের পোকা ছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক বস্তু দিয়ে খাবারের রং তৈরি করা হয়। যেমন টমেটো, বেরি, বেটরুট ইত্যাদি। যদিও টমেটো, বেরি আর বেটরুট থেকে রঙ তৈরি করা হয়, কিন্তু সেগুলোর কোনটাই কারমাইনের মতো স্থায়ী নয়।

/এসআর

Comments