দুই কোরিয়ার বৈঠক: কৃতিত্ব কার? ট্রাম্প নাকি চীন?

প্রকাশিত: ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৮

মারুফ মুনির: বলা চলে যেখানে সাপে নেউলে সম্পর্ক। পারলে মুহুর্তের মধ্যে একে অন্যকে ধ্বংস করে দেয়। প্রতিনিয়ত চলে হুমকি পাল্টা হুমকি। দক্ষিণ কোরিয়া বনাম উত্তর কোরিয়ার বাকযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ায় প্রতিমুহুর্ত।

বাকযুদ্ধ আর পরমানু অস্ত্রের মহড়ায় শঙ্কা হয় কখন যেন যুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলে দুই কোরিয়া। সংঘাত ভুলে সেই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠক কিছুটা বিস্ময় এবং অবাক করার মতোই। শুধুমাত্র বৈঠক করেছে তা নয়; পরমানু অস্ত্র নিস্ক্রিয়করণে দুই ঐক্যমতে পৌঁছেছে। ফলে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং আনের দক্ষিণ কোরিয়া সফর এখন ‘টক অব দ্যা ওয়াল্ডে’ পরিণত হয়েছে।

দুই কোরিয়ার নেতাদের এক টেবিলে বসার কৃতিতত্বটা কার সেটাও এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পর নিজে তার টুইটার একাউন্টে টুইট করে এর কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন অনেক আগেই। অনেক বিশ্লেষক এই কৃতিত্বটা ট্রাম্পকে দিতে চাচ্ছেন।

তাদের দাবি, উত্তর কোরিয়ার সাথে শান্তি আলোচনার কৃতিত্ব যে ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই এ ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং দক্ষিণ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট দুজনেই একমত।

তবে অনেকে এর উল্টাটাও বলছেন। এই আলোচনায় আসলে কি প্রভাব ফেলেছে, তা শুধু ঐতিহাসিক দলিলপত্র থেকেই প্রতীয়মান হবে, তবে তথ্যপ্রমাণ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে দক্ষিণ কোরিয়াই উত্তরের সাথে আলোচনাকে উৎসাহিত করেছিল, আর এর সাথে ছিল চীনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার চাপও কৃতিত্বের দাবি রাখে বলে তাদের অভিমত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে কোরিয়া উপদ্বীপে পরিবর্তনের আভাসের কৃতিত্ব নেবার আভাস দেন অনেক আগেই। চলতি বছর জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছিলেন, ‘ব্যর্থ বিশেষজ্ঞ’রা এ নিয়ে নানান কথা বলছে।

ট্রাম্পের টুইট

কিন্তু আমি যদি শক্ত অবস্থান না নিতাম এবং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকারের কথা প্রকাশ না করতাম – তাহলে এ সংলাপ-আলোচনা হতো এমন কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?’

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনও এ কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন, যে উত্তরের সাথে এই শান্তি আলোচনা হবার পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পে বড় কৃতিত্ব পাওনা আছে। তার কথায় ‘মার্কিন-নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ও চাপ’র ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে

অন্যদিকে এ বছরই মে বা জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আনের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা হবে উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতার সাথে ক্ষমতাসীন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বৈঠক।

২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়া প্রথম পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়। তার পর থেকে জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ওপর বহু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার অধিকাংশগুলোই মার্কিন প্রস্তাবে। এর পর দিন দিন এসব নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছে।

কিন্তু উত্তর কোরিয়াকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় দমন করা যায়নি। সম্প্রতি দুই কোরিয়ার পরমানু নিস্ক্রিয়করণে চীনের অবস্থান পরিবর্তন উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে।

উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই হয় চীনের সাথে। সেই চীন যখন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলে তখনই উত্তর কোরিয়া নমনীয় হয়। সেজন্য অনেকের দাবি দুই কোরিয়ার বৈঠকের কৃতিত্ব চীনের প্রাপ্য।

তবে কৃতিত্ব যারই হোক, এই আলোচনা কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা কমিয়ে দীর্ঘ ৬৮ বছরের পুরোনো কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনবে এমনটাই সবার প্রত্যাশা। এই আলোচনা থেকে একটি শান্তি চুক্তিও হতে পারে বলে অনেকে আশা করছে।

/এমএম

Comments