সেমন্তী আত্মহত্যা: পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশিত: ৩:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৯

একুশে ডেস্ক: বগুড়া ওয়াইএমসিএ স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাঈশা ফাহমিদা সেমন্তীর (১৪) নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আত্মহননে বাধ্য করায় দুই তরুণের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সেমন্তীর বাবা হাসানুল মাশরেক রুমন বগুড়ার প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করেন।

বিচারক একেএম ফজলুল হক শুনানি শেষে মামলা আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বগুড়াকে নির্দেশ দিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট এএনএম জাহাঙ্গীর আলমের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ২১ আগস্ট ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

বিচারক আসশামস জগলুল হোসেন আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে সিআইডি বগুড়া ক্যাম্পকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আসামিরা হল- বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা জেলবাগান লেনের বাসিন্দা নীলফামারী এনএসআই অফিসের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম নয়নের ছেলে ও চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন পুলিশের এসপি হামিদুল হক মিলনের ভাতিজা আবির আহমেদ (২০) এবং জলেশ্বরীতলা নেটপ্রো স্কুল সংলগ্ন জিল্লুর রহমানের ছেলে শাহরিয়ার অন্তু (২১)।

সেমন্তীর বাবা বগুড়া শহরের লতিফপুর পানির ট্যাংকি এলাকার হাসানুল মাশরেক রুমন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আবির আহমেদ গত ১৮ জুন রাত ১২.৫৯ মিনিট ও ১.১৩ মিনিটে ফোনে তাকে জানান, তার মেয়ে আজ আত্মহত্যা করতে পারে।

তখন তিনি তার মেয়েকে (সেমন্তী) ডেকে জানতে চাইলে সে জানায়, আবির আহমেদের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে। আবিরের পরামর্শে সে ফোনে নিজের কিছু নগ্ন ছবি তোলে। এ সব ছবি আবির তার ফোনে পার করে নেয়। পরবর্তীকালে আবির ছবিগুলো শাহরিয়ার অন্তুকে দেয়। এরপর আবির ও অন্তু ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তিনি (রুমন) মেয়েকে শান্ত্বনা ও সাহস দেন। ওই রাতেই সেমন্তী তার ঘরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

পরদিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ব্যাপারে সদর থানায় মামলা করতে গেলে কর্মকর্তারা অপমৃত্যু মামলা হিসেবে গ্রহণ ও সেমন্তীর মোবাইল ফোন, সিম ও মেমোরি জব্দ করেন।

হাসানুল মাশরেক রুমন আরও জানান, পরবর্তী সময়ে তিনি মেয়ের ফোনে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও ইন্সট্রাগ্রাম আইডি খুলে দেখেন, আবির আহমেদ তার বিভিন্ন আইডি থেকে সেমন্তীর সঙ্গে কথা বলত।

সেমন্তী গত ১৭ মার্চ ও ২৩ মার্চ তার আইডি থেকে নগ্ন ছবিগুলো আবিরের আইডিতে পাঠায়। আবির ও অন্তু ছবিগুলো পুঁজি করে নেটে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে সেমন্তীকে বিপর্যস্ত করে। তারা দু’জন গত ১৫ জুন থেকে ১৮ জুন রাত ২.৩৩ মিনিট পর্যন্ত সেমন্তীর সঙ্গে ৯১ বার কথা বলেছে।

এ ছাড়া সেমন্তীর নগ্ন ছবিগুলো তার মা ও মামলার ২ নম্বর সাক্ষী জান্নাতুল ফেসদৌসের কাছেও পাঠায়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে তার (বাদী) মেয়ের ছবি পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান করেছে। এভাবে তারা সেমন্তীর সুনাম ক্ষুণ্ণ ও তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।

তিনি দাবি করেন, আসামি আবিরের বাবা এনএসআই কর্মকর্তা ও চাচা পুলিশের এসপি হওয়ায় তিনি বগুড়া পুলিশের কাছে কোনো সহযোগিতা পাননি। ১৪ আগস্ট সদর থানা পুলিশ তাকে আদালতে যেতে পরামর্শ দেয়। এর প্রেক্ষিতে তিনি ২১ আগস্ট সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও ২৬ আগস্ট সোমবার বগুড়ার প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করলেন।

এজাহারে হাসানুল মাশরেক রুমন আসামিদের শাস্তি দাবি করেছেন।

এ/

Comments