সমালোচনা ও বিতর্কের কারণেই তারা বাদ পড়েছেন

প্রকাশিত: ১২:১২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০১৯

শাহনূর শাহীন

একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রীসভার আকার-প্রকার কী হবে না হবে সেই খবর এখন পুরনো হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে জানা হয়ে গেছে কারা কারা থাকছেন মন্ত্রীসভায়।

নির্বাচনের আগেই সব মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত ফাইল জমা হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। প্রত্যেকের আমলনামার হিসেব করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন টানা তৃতীয় ও চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রীসভার সদস্যদের নাম প্রকাশের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এবারের মন্ত্রীসভায় চমক থাকছে।

কিন্তু চমকের মাত্রা যে কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। দায়িত্ব পালনকালে নানান কারণে আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত মন্ত্রীরা তো বাদ পড়েছেনই খুব বেশি বিতর্ক নেই এমন মন্ত্রীরাও বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীরাও।

আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল-আমু, নাসিম-মোশররফ সহ সব শীর্ষ নেতারাই রয়েছেন এই তালিকায়।

এদের কেউ কেউ নিজেদের দায়িত্বের ব্যর্থতা সহ অন্যান্য কারণে বাদ পড়লেও কেউ কেউ আছেন ব্যর্থতার চেয়ে সমালোচনার কারণেই বাদ পড়েছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ও সচেতন মহল।

এমন যারা বাদ পড়েছেন:

শাজাহান খান: পরিবহন শ্রমিক নেতা ও একই সাথে নৌ পরিহন মন্ত্রী ছিলেন মাদারীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি শাজাহান খান। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন তিনি প্রায় সময়।

মন্ত্রী থাকা অবস্থা পরিবহন শ্রমিকদের নেতৃত্বে থাকা নিয়েও নানা সময় তার সমালোচনা হয়। ২০১৬ সালে পরিবহন খাতে অনিয়মের জন্য তাকে অভিযুক্ত করে তার অপসারণ দাবি করা হয়েছিল।

গেলো বছরের জুলাইয়ে রাজধানীতে সড়ক দূর্ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে করা মন্তব্যের কারণে সমালোচিত হন তিনি। সবচে বেশি সমালোচিত হয়েছেন হাসতে হাসতে কথা বলায়।

‘পরিবহন শ্রমিক নেতা হিসেবে নৌপরিবহনমন্ত্রীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বাসচালক-হেলপাররা প্রতিনিয়ত স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে’ এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, ‘আজকের বিষয়ের সঙ্গে এটি রিলেটেড নয়’।

তার এই হাসির এই দৃশ্যসহ সংবাদটি পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় প্রধানমন্ত্রীও তাকে ভৎর্সনা করেছিলেন এবং সংযত হয়ে কথা বলতে বলেছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার পদত্যাগের দাবি ওঠে। পদত্যগ করলে সব সমাধান হলে পদত্যাগ করবেন বলেও মন্তব্য করেন শাজাহান খান।

নুরুল ইসলাম নাহিদ: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তার দায়িত্বপালনের পুরোটা সময়ই ছিলেন আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি প্রবর্তন, পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁস, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা প্রবর্তন সহ নানান কারণে তিনি সমালোচনার শিকার হন।

সর্বশেষ তিনি সবচে বেশি সমালোচনার শিকার হন ‘সহনীয় মাত্রায় ঘুষ’ খাওয়ার কথা বলে।

২৪ ডিসেম্বর শিক্ষাভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) সম্মেলনকক্ষে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ল্যাপটপ ও প্রশিক্ষণ সনদ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) কর্মকর্তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে ঘুষের বিনিময়ে তারা ওই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ভালো প্রতিবেদন দেন।

স্কুল পরিদর্শনে গেলে খাম রেডি করাই থাকে। তবে আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা ঘুষ খান, কিন্তু সহনীয় হয়ে খান। কেননা, আমার এটা বলার সাহসই নেই যে, ঘুষ খাবেন না। তা অর্থহীন হবে।

বর্তমান সরকারের আমলে দূর্নীতি কমে আসছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, খালি যে অফিসাররা চোর, তা না। মন্ত্রীরাও চোর। এমনকি আমিও চোর।

শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য সেসময় সরকারকেও বিব্রত অবস্থায় ফেলে দেয়। শিক্ষামন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে অন্যান্য মন্ত্রী এমপিদের সমালোচনা করেন সুশিল সমাজ সহ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। ফলে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করতে চলেছেন এমন গুঞ্জণও ওঠে তখন।

আবুল মাল আব্দুল মুহিত: আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ সাল থেকে টানা দশ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সিলেট-১ আসনের এই সাবেক এমপি।

২০১২ সালে হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে দেয়া বক্তব্যের কারণে তুমুল সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত।

সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী বলেছিন, ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিই। এর মধ্যে মাত্র তিন বা চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এটা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এ নিয়ে হইচই করারও কিছু নেই।

সেসময় অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ব্যাংক পাড়া সহ সারাদেশেই আলোচনার ইস্যু হয়ে ওঠে ‘চারহাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়’ এমন শিরোনাম।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানানজনের সমালোচনা ও গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যের কারণেও সমালোচনার শিকার হন এমএ মুহিত। তার সমালোচিত বক্তব্যের কিছু কিছু শব্দ ব্যাপকভাবে বিতর্কিত এবং ট্রলের শিকার হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব শব্দ নিয়ে সম থেকে বেশি ট্রল হয় তার মধ্যে সাবেক এই মন্ত্রীর মুখে উচ্চারিত শব্দগুলোই বেশি।

বিভিন্ন সময়ে, রাবিশ, বোগাস, বাস্টার্ডসহ নানান বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সারা বছরই আলোচনার টেবিলে ছিলেন সাবেক এই অর্থমন্ত্রী।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নিজে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ছোট ভাই নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনকে তার আসনে মাঠে নামান সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। এর আগে জাতীসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করা মোমেনকে সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন।

নির্বাচন না করলেও টেকনোক্রেট কোটায় পুনরায় অর্থমন্ত্রী হতে চলছেন মুহিত এমন গুঞ্জণ বেশ জোরেসোরে শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীকেই বেছে নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া: চাঁদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিতর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি নিজের ছেলে-সন্তানদের কারণে।

৯৬’র সরকারের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালেও দুই ছেলে দিপু চৌধুরী ও রনি চৌধুরীর নানান অপকর্মের কারণে বিতর্কিত হয়েছিলেন মায়া চৌধুরী।

সদ্য সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন তার ছেলে দীপু চৌধুরী নানা অপকর্মে উত্তরা কাঁপাতেন। তার নেতৃত্বে উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব দখলে ছিলো। ওই ক্লাবের আধিপত্য ও জমি দখল নিয়ে ২০০০ সালের দিকে তিতাস নামে একজনকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়।

দীপু চৌধুরী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠলে দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। দীপু চৌধুরীসহ অন্য সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার পরও তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রভাব খাটিয়ে গত মেয়াদে দীপুকে রক্ষা করেন তখনকার প্রতিমন্ত্রী মায়া।

এরপর বিএনপি শাসনামলে গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন তার দুই ছেলে। সরকারের গত মেয়াদে তিনি পূর্ণমন্ত্রী থাকায় তার প্রভাবও কাজে লাগায় সন্তান পরিজনরা।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে মায়া চৌধুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এ যেন তার জন্য বিতর্কের ঝাঁপি খুলে দিতে সাহায্য করে। বছরের শুরু শেষ না হতেই নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭ খুনের ঘটনা ঘটে।

এপ্রিলের ২৭ তারিখ আদালত থেকে ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জন এবং আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার ড্রাইভার সহ ৭ জন অপহরণ হয়। পরে তাদের বস্তাবন্দি লাশ ‍উদ্ধার করা হয় নদী থেকে।

ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হয় ত্রাণমন্ত্রীর মেয়ের জামাই র‍্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক ও পদচ্যুত সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদ। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তারেক সাঈদের মৃত্যদণ্ডের সাজা দেয়া হয় তাকে।

দেশ-বিদেশে ‍তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে নতুন বছরের শুরুতে ১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি ২৬জনের মৃত্যুদণ্ড আর নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে ২২ আগস্ট আদালতের রায়ে তারেক সাঈদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। ওই সময় অনুসন্ধানে বেরিয়ে ৭ খুন ছাড়াও আরো বহু খুন-গুমে তারেক সাঈদের জড়িত থাকার খবর।

এ নিয়ে দলে ও দলের বাইরে ব্যাপক সমালোচিত ও কোনঠাসা হয়ে পড়েন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। সর্বশেষ রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করার পরেও দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন সাবেক এই মন্ত্রী।

হাসানুল হক ইনু: একসময়ের আওয়ামী লীগের তুমুল সমালোচক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। মন্ত্রী হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে।

স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ও জাসদের দূরত্বে সৃষ্ট সংঘর্ষ অনেক সময় প্রাণঘাতি হামলায় রুপ নেয়।

আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এক দলীয় সভায় ইনু বলেছিন, আপনারা এক টাকার মালিক নন, ৮০ পয়সার মালিক। এরশাদ, ইনু, দিলীপ বড়ূয়া ও মেননকে নিয়ে আওয়ামী লীগের এক টাকা হয়েছে। আমরা না থাকলে ৮০ পয়সা নিয়ে রাস্তায় ‘প্যা প্যা’ করে ঘুরতে হবে। হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না।

বিভিন্ন সময়ে সভা সেমিনারে বিএনপির সমালোচনা করতে গিয়ে তার অতি মাত্রায় বেফাঁস মন্তব্য কট্টর আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যকেও ছাড়িয়ে যেতো। যা নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের অনেকের হাসির খোরাকও হয়েছেন তিনি।

বিএনপির সমালোচনা ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায় অতিমাত্রায় আগ্রহী থাকায় সচেতন মহল একে স্বাধীনতার সময় বঙ্গবন্ধু বিরোধীতা ও জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কাফফরা বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।

এমনকি ৩ জুলাই জাতীয় সংসদের এক বিতর্কে অংশ নিয়ে জাসদের কার্যকরী সভাপতি ও দলীয় সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ’৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত জাসদ যা করেছিল, সেটা ছিল ইতিহাসের বাঁক।

সময় বলে দেবে কে সঠিক আর কে ভুল ছিলো। কখনও বলিনি যা করেছি, সঠিক করেছি। তিনি বলেন, হাসানুল হক ইনু (জাসদ সভাপতি) ও আমি টেলিভিশনে বলেছি, পিতার (বঙ্গবন্ধু) বিরুদ্ধে সমালোচনা করা ভুল হলে আজ তার কাফফরা দিচ্ছি।

২০১৫ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করীম সেলিম এক আলোচনা সভায় বলেন, জাসদ গণবাহিনী বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ তৈরি করেছিলো। ওই পরিবেশের জন্য জাসদ দায় অস্বীকার করতে পারবে না।

হাসনুল হক ইনু শেখ সেলিমের এই বক্তব্যে বিএনপি জামায়াতের বক্তব্যের যোগসাজসের অভিযোগ আনলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পদাক মাহবুবুল আলম হানিফ আবার সেই বক্তব্য খন্ডন করে বলেন, আজ আমাদের নেতা শেখ সেলিমের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির বক্তব্যের সঙ্গে সুর মেলানোর যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যে যেখান থেকে দেখুক না কেন, ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগ নেতা সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকার ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামও তার এই বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে সে সময় গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেন।

এডভোকেট কামরুল ইসলাম: ঢাকা-২ (কেরাণিগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত এ এমপি বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নিার্বচনে বিজয়ী সরকারে খাদ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান কামরুল ইসলাম।

তিনিও বিভিন্ন সময়ে নানান বক্তব্য ও বেফাঁস মন্তব্যের কারণে আলোচিত-সমালোচিত হন। প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্য করে তার অতিরঞ্জিত কটাক্ষ ও সমালোচনামূলক বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় সরকার বিব্রত হয়।

১৬’ সালের মার্চে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম যুদ্ধপরাধী মীর কাসেম আলীর মামলার রায়ের আগে পুনঃশুনানি দাবি করেন। ওই শুনানিতে তিনি প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেন।

সেসময় তার এই বক্তব্য তুমুল সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেয়। তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন খ্যাতিমান আইনজীবি, রাজনীতিবিদ ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা।

রাষ্ট্রের স্বয়ং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার ওই বক্তব্যকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বলেন, তার (খাদ্যমন্ত্রীর) এমন দাবি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। প্রধান বিচারপতি কোনো ব্যক্তি নন, একটি প্রতিষ্ঠান উল্লেখ্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধান বিচারপতিকে বিতর্কিত করা মানে বিচারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করা।

এর আগে ২০১৫ সালের জুনে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা দুই লাখ টন গম নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। সেসময় ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকা দামের দুই লাখ টন গম আমদানির কার্যাদেশ পায় ইমপেক্স ইন্টারন্যাশনাল ও ওলাম ইন্টারন্যাশনাল নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে ইমপেক্স দেড় লাখ এবং ওলাম ইন্টারন্যাশনাল পায় ৫০ হাজার টন গম আমদানির কার্যাদেশ।

গম আমদানির পর চট্টগ্রাম বন্দরে পরীক্ষার সময়ই গলদ ধরা পড়ায় তা আটকে যায়। কিন্তু বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন খাদ্য অধিদফতরের নীতিনির্ধারকরা।

পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে এসব গম ফেরত নেয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় যথাযথ সাড়া না দেয়ায় পুলিশ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানায়। পরে গম নিয়ে সংসদে বিবৃতিও দেন খাদ্যমন্ত্রী। এ নিয়েও সেসময় সরকার সামলোচনার শিকার হয়।

নানান সময়ে আলোচিত-সমালোচিত এসব কারণেই এবারে মন্ত্রীসভা থেকে নানান সময়ে বিতর্কিত এসব মন্ত্রীরা বাদ পড়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক, নির্বাহী সম্পাদক একুশ নিউজ।

/এসএস

Comments