ইসলামি আন্দোলন খুলনা মহানগরের নেতৃত্বে পরিবর্তন দলের জন্য কতোটা সহায়ক হবে? নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১২:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৯ পলাশ রহমান ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ২০ এপ্রিল তারিখে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নেতৃত্ব থেকে সদ্য সাবেক হওয়া নগর সভাপতি মাওলানা মুজাম্মিল হক কাসেমি। প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামি আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডাঃ মোখতার হুসাইন। সম্মেলনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মতামত এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাওলানা মুজাম্মিল হককে সরিয়ে নতুন সভাপতি করা হয় বয়সে তরুণ নেতা মুফতি আমানুল্লাহকে। শেখ নাসির উদ্দিনকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। মাওলানা মুজাম্মিল হক খুলনা মহানগর ইসলামি আন্দোলনের অনেক বছরের সভাপতি। দলের জন্য তার ত্যাগ অনস্বীকার্য। মুজাম্মিল হকের হাত ধরেই খুলনার প্রাণকেন্দ্রে ইসলামি আন্দোলনের নিজস্ব কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি জেলা এবং মহানগরের প্রতিটা স্তরে মজবুত সংগঠন গড়ে তোলেন। খুলনার প্রথম সারির রাজনৈতিক মহলেও মুজাম্মিল হক একজন পরিচিত মানুষ। বিশেষ করে খুলনার মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে এবং উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়ে তিনি রাজনীতির মূলধারায় নিজের অবস্থান শক্ত করতে সক্ষম হন। দীর্ঘ দিন রাজনীতি করে তিনি বেশ দক্ষতা এবং যোগ্যতাও অর্জন করেন। একটি বিভাগীয় শহরের মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করার জন্য যে মানের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং পরিচিতি থাকতে হয় তা তিনি বহু পরিশ্রম করে অর্জন করেন। গেল বছর ইসলামি আন্দোলনের ইফতার মাহফিলে তিনি খুলনার প্রায় সব দলের প্রথম সারির নেতাদের একত্রিত করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। মাওলানা মুজাম্মিল হক কাসেমি ইসলামি আন্দোলন খুলনা মহানগর সভাপতির দায়িত্বে থাকছেন না এমন গুনজন বহুদিন থেকে শোনা যাচ্ছিলো। কিন্তু তা এত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হবে বা এই মুহুর্তে তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হবে এমনটা অনেকেই ভাবেনি। দলের একটা অংশ মনে করেন এই মুহুর্তে মাওলানা মুজাম্মিল হককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া দলের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাদের মতে একজন ভালো মানের নেতা তৈরী হতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। বহু তেল-খড়ি পোড়াতে হয়। এরপর যখন একজন নেতা দক্ষতায় যোগ্যতায় লকলকিয়ে ওঠে তখনি তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া যে কোনো দলের জন্য ক্ষতিকর হয়। দলের বড় একটা অংশ অবশ্য এমনটা মনে করেন না। তাদের কথা হলো- মাওলানা মুহাম্মিল হক অবশ্যই দলের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার দক্ষতা যোগ্যতা নিয়ে দলের মধ্যে খুব বেশি আপত্তি নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক মুজাম্মিল হকের কিছু কার্যকলাপ দলের জন্য ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, যে কারনে তাকে আপাতত নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। তারা মনে করেন, মুজাম্মিল হককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে- এর অর্থ এই নয় যে তাকে দল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বরং এখন তিনি আরো স্বাধীনভাবে এবং বড় পরিসরে দলের জন্য কাজ করতে পারবেন। তার হাত ধরে খুলনায় যেসব নেতাকর্মী তৈরী হয়েছে নেতৃত্বের জন্য তাদের আরো বেশি দক্ষ করে তুলতে ভুমিকা রাখার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া নেতৃত্বের হাত বদল না হলে ভালো নেতা তৈরী হয় না। নেতৃত্বের ভুলভ্রান্তি চোখে পড়ে না। দলে এবং রাজনীতিতে কৌশলগত পরিবর্তন আসে না। নতুন চিন্তা, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- মাওলানা মুজাম্মিল হককে নিয়ে দলের ভেতরে দীর্ঘদিন থেকে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। তিনি দিনে দিনে বেপরয়া হয়ে উঠেছিলেন। দলের ভেতরে গ্রুপিং লবিং সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। ছাত্র সংগঠনসহ আন্দোলনের অন্যান্য সহযোগী সংগঠগুলোর ভেতরে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রাখতে তিনি অতিরাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও বিরোধ সৃষ্টি করেছিলেন। মাওলানা মুজাম্মিল হকের জন্য নেতৃত্বে থাকা সবচেয়ে বেশি কঠিন হয়ে পড়ে তার ব্যাবসায়ীক অবস্থানের কারনে। তিনি বাগেরহাটের একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতেন। গত বছর ওই প্রতিষ্ঠানটি মিডিয়ার রোষানলে পড়ে গ্রাহকদের অস্থা হারায়। কর্মকর্তাদের নামে মামলা হয়। বাগেরহাটের একজন স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপে কর্মকর্তারা গ্রেফতার এড়িয়ে এখনো টিকে থাকতে পারলেও তা কতোদিন সম্ভব হবে বলা মুশকিল। মূলত এসব বিষয় বিবেচনা করে মাওলানা মুজাম্মিল হককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া মুজাম্মিল হকের ছেলেকে নিয়েও দলের মধ্যে নানা রকমের বিতর্ক রয়েছে। সে দলের ভেতরে বাবার পরিচয়ে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। তার বাবাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পর সে ঢালাওভাবে সব সিনিয়র নেতাদের যোগ্যতা নিয়ে নেতিবাচক স্টাটাস লেখে ফেসবুকে। যা দলের মধ্যে ব্যাপক অসস্তষ সৃষ্টি করে। দলের একটা অংশ মনে করে গত বছর ডাঃ মোখতার হুসাইনের এক ছেলে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়া এবং ওই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে পত্রপত্রিকায় বানোয়াট খবর প্রচারের নেপথ্যে ভুমিকা রেখেছিলেন মাওলানা মুজাম্মিল হক। যদিও ডাক্তার পরিবার থেকে কখনোই এ জাতীয় কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। তবে দলের চিন্তশীল মহল মনে করেন- মাওলানা মুজাম্মিল হকের মতো একজন ভালো মানের নেতা তৈরী করতে খুলনার ইসলামি আন্দোলনকে আরো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। লেখক: ইতালি প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট /আরএ Comments SHARES মুক্তমত বিষয়: