ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি অসাংবিধানিক নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯ মুহাম্মদ জিয়াউল হক ডাকসু নির্বাচনে সকল সংগঠনের অংশগ্রহণে সুযোগ দানের দাবিতে ইশা ছাত্র আন্দোলনের মিছিল পরবর্তি প্রতিক্রিয়ায় বাম সংগঠনগুলো ঢাবি ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানাচ্ছে ৷ তাদের যুক্তি হলো: এ বিষয়ে কোনো এক সময় ছাত্র সংগঠনগুলো একমত হয়েছে ৷ প্রথম কথা কিছুলোক একত্রিত হয়ে গেলে কারো রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায় না ৷ এর কোনো আইনগত ভিত্তি নাই ৷ এটা স্রেফ তাদের একটা রাজনীতি ৷ প্রথমত এ দাবী সংবিধানের অন্ততঃ ৮ টি অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক ৷ অনুচ্ছেদগুলো হলো : ৭ এর ১,২, ২৮ এর ১ ও ৩ , ৩৭ , ২৬ এর ১ও ২ , ৩৬ , ৩৮ এর ক , খ, গ, ঘ , ৩৯ এর ১ ও ২ এর ক , ৪১ এর ১ এর ক, খ, এবং ৪১ এর ২। ছাত্র সংগঠনতো দূরের কথা , পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক , কর্তৃপক্ষ মিলেও এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নেই ৷ কেননা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্র ও সংবিধানের প্রতি অনুগত ৷ সংবিধানকে ভায়োলেট করে এমন কিছু করার এখতিয়ার বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি , দল ,গৌষ্ঠী , প্রতিষ্ঠানের নাই ৷ বরং সংবিধানকে সমুন্নত করাই তাদের কর্তব্য ৷ এ প্রসঙ্গে প্রথম ভাগের সংবিধানের প্রাধান্য শিরোনামে যা বলা আছে , ৭;১ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। (২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন ৷ এই আইনের তৃতীয় ভাগের ‘মৌলিক অধিকার’ অংশে ধর্ম , সংগঠন , সভা ,সমাবেশের অধিকার দিয়ে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে , ২৮; ১ কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। এ অনুচ্ছেদ ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে এজন্য কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবী ও সম্ভাবনাকে স্বীকার করে না ৷ (৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না। এই ধারা থেকে স্পষ্টতই বলা যায় , পরিবেশ পরিষদ বা কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধর্মের ভিত্তিতে কারো ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অনুশীলনে বাধা দেয়ার এখাতিয়ার রাখে না ৷ সমাবেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সংবিধানে বলা হয়েছে , ৩৭; জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। এ ধারায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে ৷ সেটা দেশের সর্বত্র ৷ বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরে নয় ৷ হ্যাঁ বিভিন্ন সময় যেসব ছাত্র সংগঠন অস্ত্র , লাঠি , সোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে , সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন করেছে , বিশৃঙখলা ও আতংক সৃষ্টির কারনে সেগুলোকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যতক্ষন না শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভঙ্গ না করে ততক্ষন তাদের উপর বিধি নিষেধ আরোপের সুযোগ নাই ৷ মৌলিক অধিকারের সহিত অসমঞ্জস আইন বাতিল ২৬;১ এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসমাঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান-প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে। (২) রাষ্ট্র এই ভাগের কোনো বিধানের সহিত অসমাঞ্জস্য কোনো আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোনো বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে। মৌলিক অধিকার লঙ্গন হয় এমন কোন নিয়ম করার ক্ষমতা দেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , আদালত , এমনকি পার্লামেন্টেও যদি মৌলিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করে কোন ধরনের আইন পাশ হয়ে যায় , সেটাও বাতিল হয়ে যাবে বলা হচ্ছে ৷ সংগঠনের স্বাধীনতা ১;৩৮ জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির উক্তরুপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি- (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয় ৷ সংশ্লিষ্ট খবর.., অংশগ্রহনমূলক ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ইশা ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ এসব অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোন শর্ত ইশা ছাত্র আন্দোলন লঙ্গন করে না ৷ কাজেই তাদের নিষিদ্ধের দাবী হাস্যকর ৷ ১৯৯১ সালে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা ৷ এ পর্যন্ত সন্ত্রাস , জঙ্গিবাদ , রাষ্ট্র ও সংবিধান পরিপন্থী কোনো কার্যক্রমের সাথে ছাত্র আন্দোলনের জড়নোর রেকর্ড নেই৷ না হয় সারাদেশের কোথাও তারা কাজ করতে পারতো না ৷ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা। ৩৯;১ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইলো। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইলো। বিজ্ঞাপন ধর্মীয় স্বাধীনতা ৪১;১ আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; এ ধারাটি ইসলামের রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের অধিকার দিয়েছে ৷ কারো এ অধিকার ক্ষুন্ন করার সুযোগ সাংবিধানিকভাবে নাই ৷ (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে। ইসলামী রাজনীতি মুসলমানদের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ৷ শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামী রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক চর্চায় রাষ্ট্রের কোথাও কোনো বাধা নাই ৷ বলা হচ্ছে ভাষ্কর্য ভাঙতে এলে ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে একাত্ম হয়ে কোনো এক সময় পরিবেশ পরিষদ নামক প্লাটফর্ম থেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর একটা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয় ৷ এটাকে ভিত্তি করে অন্য যে কোন ধর্মভিত্তিক সংগঠনের কার্যক্রমকে মহল বিশেষ থেকে সহ্য করা হচ্ছে না ৷ এ ক্ষেত্রে কথা হলো , ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি মানেই ছাত্র শিবির নয়৷ তাদেরকে দিয়ে অন্যদের তুলনা রাজনৈতিক আঁতলেমী ছাড়া কিছু নয় ৷ ছাত্র শিবির নিয়ে খোদ ধর্মীয় অঙ্গনে অনেক বিতর্ক আছে৷ স্বাধীনতার বিরোধী দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে তাদের কে নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে৷ তাই বলে সব ইসলামী সংগঠনের বিরুদ্ধাচারণ যৌক্তিক নয়৷ দ্বিতীয়তঃ পরিবেশ পরিষদ দেশের আইনসভা নয় যেখানকার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত৷ যেখানে সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় সবাইকে সংগঠন, সভা সমাবেশ , চিন্তা ,ও আদর্শ প্রচার ও পালনের অধিকার দেয়া হয়েছে সেখানে অযৌক্তিকভাবে কাউকে নিষিদ্ধের দাবী করা একটা হাস্যকর আবদার ৷ এ আবদার সংবিধান পরিপন্থী৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়েতো এটা আরো অস্বাভাবিক ৷ কেননা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে , গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার উর্বর জায়গা। এখানে সব মত পথ হাত ধরে পাশাপাশি হাটবে৷ সবাই যার যার কথা বলবে। শিক্ষার্থীরা যার যার পছন্দমত গ্রহণ – বর্জন করবে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের গঠনমূলক সমালোচনা কিংবা বুদ্ধবৃত্তিক বা রাজনৈতিক উপায়ে প্রতিযোগী হয়ে উঠবে এটাই গণতন্ত্রের দাবী। প্রগতিশীলতা ভিন্নমতকে দমন করে রাখা নয়৷ ভিন্ন মতকে সহ্য করতে পারাই প্রকৃত প্রগতির পরিচায়ক। আমাদের মহান মুক্তযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের প্রথম প্রবঞ্চ ছিলো সাম্য। কাজেই আদর্শের ভিন্নতার কারনে এই সমতার অধিকার থেকে কাউকে বাদ দেয়ার চিন্তা ঠিক নয়। লেখক: কেন্দ্রীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক, ইশা ছাত্র আন্দোলন Comments SHARES মুক্তমত বিষয়: ইশা ছাত্র আন্দোলনডাকসু নির্বাচন