‘শেখ সুমাইয়া সুলতানার কিছু বলতে চাই’: মুকুল মজুমদার

প্রকাশিত: ১১:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০১৯

সাহিত্য ডেস্ক: কিছু বলতে চাই! বলুন। শুনতে চাই। কি বলবেন বলেন। কোনো ব্যক্তি, যে কোন পরিবেশে যদি হঠাৎ বলে ওঠে- কিছু বলতে চাই, তার আশ পাশের মানুষগুলো একবার ফিরে তাকাবেন এটাই স্বাভাবিক। গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত ‘কিছু বলতে চাই’ শেখ সুমাইয়া সুলতানা রচিত একটি (২য় গ্রন্থ) বাণীগ্রন্থ। যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আমার দেখা একটি ভিন্ন্যধর্মী গ্রন্থ।

প্রথমে গ্রন্থটি হাতে নিয়ে আমার কিছুটা ভুল ধারণা হয়েছে। গ্রন্থটির কিছু লেখা বিতর্কিত বলে ধারণা করছিলাম। পরে সময় নিয়ে পাঠ করে দারুণ কিছু বাণী পেলাম যা সত্যি অসাধারণ।

ধর্মীয়, সমাজ জীবন, রাষ্ট্র, দেশেপ্রেম, নাগরিক পর্যবেক্ষণ, নারী, শিশু ও রাজনৈতিক মনোভাবের অসাধারণ ২১০টি বাণী রয়েছে শেখ সুমবাইয়া সুলতানার এ বাণীগ্রন্থটিতে, যা তরুণ প্রজন্মের সাহিত্য ভাবনার ভাণ্ডারে এক নতুন সংযোজন।

বাণী-৫: যদি বিনয়ের সহিত কথা বলতে গিয়ে ভেবে থাকেন যে- আপনি কারো নিকট নত হয়ে যাচ্ছেন তবে জুতা পরিধান করা ত্যাগ করুন। কারণ কখনো কখনো দামী জুতা পরিধান করার সময় নত হতে হয়।

সমাজে আমরা অনেকেই আছি যারা নিজেকে অনেক বড় মনে করি। আমরা অন্যকে সম্মান করতে গিয়ে নিজেকে ছোট করতে চাই েনা। অথচ প্রতিদিন কোনো না কোনো কারণে দু’চারবার নত হচ্ছি। শেখ সুমাইয়া সুলতানা তার এ গ্রন্থে পাঠকদের এমনই ইঙ্গিত করেছেন।

বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আমাদের সমাজের অনেকেই একটা সময় আত্মহত্যার মত জঘণ্য পথটি বেছে নিচ্ছে, অথচ এটি কখনোই স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। এমই একটি বানী (১৪)- আত্মহত্যার পর আপনারা কি পেয়েছেন? দুনিয়াবী যন্ত্রণা থেকে কি পরিত্রাণ পেয়েছেন? অবশ্যই আত্মহত্যার পর আপনাদের পূর্বের যন্ত্রণার চেয়ে, যন্ত্রণা আর সহস্রগুণ বেশি।

প্রতিটি নারীর বিবাহের পর সকল দ্বায়িত্ব তার স্বামীর এটা চিরন্তন সত্য কিন্তু তার মানে এই নয় যে স্ত্রীর সকল অন্যায় আবদার তার স্বামীতে মেনে নিতে হবে। এখানেই একটি বাণী (১৯)- রমণীগণ আপনারা আপনাদের স্মামীর নিকট এমন কোন কিছুর আবদার করেবেন না। যা মেটাতে গিয়ে আপনার স্বামী কোন অসৎ পথ অবলম্বন করে। আপনাদের বিবাহের সময় তো এমনি আল্লাহ প্রদত্ত দেনমোহর দ্বারা আপনার স্বামী আপনাকে সম্মানীত করেছেন।

বাণী-৩৪: ভালোবাসা কাউকে দিয়েছে প্রাপ্তি আর কাইকে দিয়েছে শূন্যতা। আল্লাহ ও নবীর সনে ভালোবাসা মানবজাতিকে ইহকাল-পরকাল উভয় দিয়ে থাকে।
এ বাণীটিকে আমি এ ভাবে অনুধাবন করি যে- আল্লাহকে ভালোবাসুন! পাবেন ইহকালের সুখ, পাবেন পরকালের সুখ। আল্লাহ ও নবীর বিকল্প কোনো ভালোবাসা চিন্তা করাই যেতে পারে না।

বাণী-১৪১: রাষ্ট্র, জনগণ, সরকার তৃণমূলে সমঝোতা, মতবিনিময় সর্বদাই কল্যাণকর। এই তৃণমূল বিরোধ হলেই প্রলয়ঙ্কর নেমে আসবে।

অসাধারণ এই বাণীটির মত এমন অসংখ্য বাণী রয়েছে এ গ্রন্থে যা সত্যিই এই লেখিকার প্রশংসা পাবার যোগ্য। দেশের কবি সাহিত্যিকরা যেখানে গল্প উপন্যাস নিয়ে ব্যস্ত সেখানে এই লেখিকা তার মেধা শক্তি ব্যায় করেছেন অসাধারণ কিছু বাণী রচনার জন্য। গ্রন্থের সবগুলো বাণী আপনার ভালো নাও লাগতে পারে তবে একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে চর্চা করার জন্য কিছু বাণী আপনার জীবনের প্রয়োজনে লেগে যেতেই পারে।

গ্রন্থের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত গ্রন্থটি পরিপাটি। এমন একটি গ্রন্থ সংগ্রহে রাখলে যেকোনো সময় আপনার প্রয়োজন হতে পারে। সহায়ক হতে পারে আপনার নিজের চর্চার কোনো কোনো কাজে।

রিভিউ: মুকুল মজুমদার
লেখিকা: শেখ সুমাইয়া সুলতানা
প্রকাশক: মোরশেদ আলম হৃদয়
প্রকাশন: বাবুই প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: সুলায়মান সাদী
পৃষ্ঠা: ৬৪
মূল্য: ১৬০
প্রথম প্রকাশ: গ্রন্থমেলা-২০১৯

/আরএ

Comments