হজ্জের ওয়াজিব সমূহ নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০১৮ হজ্জের ওয়াজিব সমূহ ১। ৯ই যিলহজ্জ সূর্যাস্তে পর আরাফাত থেকে রওয়ানা হয়ে রাতে মুযদালিফায় এসে ছোবহে সাদিকের পর সূর্যাস্তের পূর্বে কিছু সময় অবস্থান করা, কেউ সারারাত মুযদালিফায় থেকে সুবহে সাদিকের কিছু পূর্বেও যদি মুযদালিফা ছেড়ে চলে যায় তার ওয়াজিব আদায় হবে না। ২। ১০ই যিলহজ্জ মিনায় বড় জামরার উপর ৭টি এবং ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ ক্রমান্বয়ে ছোট, মেঝ ও বড় জামরায় ৭টি করে (৩ × ৭ = ২১টি) কংকর নিক্ষেপ করা। ৩। তামাত্তো ও ক্বেরান হজ্জ আদায়কারীর জন্য ১০ই যিলহজ্জ মিনায় কংকর নিক্ষেপের পর দমে শোকর (কুরবানী) করা। ৪। ১০ই যিলহজ্জ মিনায় কংকর নিক্ষেপ ও কুরবানীর পর মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটা। ৫। তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করা। তাওয়াফে যিয়ারত-এ তাওয়াফ আদায় করা ফরজ। তবে কেউ যদি হজ্জের ইহরাম বেঁধে মিনায় যাওয়ায় আগে একটি নফল তাওয়াফ করে সায়ী করে তাঁর ওয়াজিব সায়ী আদায় হয়ে যাবে, তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করা লাগবে না। ৬। হেরামের সীমানার বহিরাগত হাজীদের তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করা। এছাড়াও হজ্জের বিভিন্ন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট আরো অনেকগুলো ওয়াজিব রয়েছে। যেমন ইহরামের ওয়াজিব, তাওয়াফের ওয়াজিব ইত্যাদি। ভুলবশতঃ কোন ওয়াজিব বাদ গেলে দম ওয়াজিব হয়। একনজরে হজ্জের ৫টি দিন ও তার কাজ বা আ’মল সমূহ ৮ই জিলহজ্জ থেকে ১৩ই জিলহজ্জ হাজীদের কোথায় কি করণীয় তার বর্ণনা নিম্নরূপ: (বিঃ দ্রঃ শুধু হজ্জে ইফরাদের জন্য কুরবানী মুস্তাহাব। শুকুর করা এবং হজ্জে তামাত্তুতে তাওয়াফে কুদুম সুন্নাত নয়) এ ছাড়া তিন প্রকারের হজ্জের আমল ৫ দিনে একই। ১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন। এ দিনের কাজ দু’টি (১) ইহরাম (ফরজ) (২) ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)। যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত ২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ ১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব) আরাফাতে অবস্থান – ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন। – আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। – ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন। – আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুন, নির্দিষ্ট সময় বা আগে পরে, পৃথক পৃথক ভাবে। – উল্লেখ্য: ‘মসজিদে নামেরায়’ জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়, ওটার নাম ‘জমে তাক্বদীম’। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।) – সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন। – মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম ‘জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন। ১০/১১/১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে। – ১ম দিন ৭টি – ২য় দিন ২১টি – ৩য় দিন ২১টি (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত। ৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা – মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)। – মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)। – তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)। – এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)। – চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)। – তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত। ৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ – ১০ তারিখে কুরবানী, চুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন। – সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোট, তারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)। ৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ – তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন। – মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন। জরুরী কথা (১) তবে ১১/১২ তারিখ সূর্য হেলার পূর্বে পাথর মারলে আদায় হবে না। পূণরায় মারতে হবে। নতুবা দম দিতে হবে। (২) যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মীনা ত্যাগ করে মক্কায় রওয়ানা না হন তবে ১৩ তারিখ পূনরায় তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) মেরে (পূর্বের নিয়মে) তারপর মক্কায় আসতে হবে। (৩) তাওয়াফে যিয়ারতের উত্তম সময় ১০ই জিলহজ্জ (তবে ৩ দিন, এর সব মোট সময়) শেষ সময় ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। (৪) মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানার পূর্বে যদি নফল তাওয়াফ করে হজ্জের নিয়্যাত সায়ী না করে থাকেন (বা মিনায় আসেন) তাহলে হজ্জের পরে তাওয়াফে যিয়ারতের পর অবশ্যই হজ্জের সায়ী করুন। (ওয়াজিব)। যিয়ারাতে মদীনাহ হজ্জের পূর্বে অথবা পরে (সুবিধামত) সময়ে হাজীদল তথা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) এর পাগলপাড়া উম্মতগণ এক মূহুর্তে একদিন/তথা ৮ দিনের জন্য (সম্ভব হলে) নতুবা এক রাত হলেও মদীনা শরীফে যান এবং রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারত, রিয়াদুল জান্নাতে বসা (নামাজ আদায় করা) জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করা এবং বিশেষতঃ ৮ দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করাসহ বহু ঐতিহাসিক স্থান তথা উহুদ পাহাড় ও বদর প্রান্তর দেখার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকেন। এছাড়া মদীনা শরীফে আর কোন কাজ নেই। মূলতঃ মদীনা শরীফে মাসজিদে নববীতে নামাজ ও রাসূলের পাক (দঃ) এর রওজা শরীফ যিয়ারতই হল প্রধান কাজ। যদি সম্ভব হয় বা সময় সূযোগ থাকে তাহলে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ (সুন্নাত) রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ৮দিন=৪০ ওয়াক্ত থাকতেই হবে। এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আসলে এটা সুন্নাত এবং হজ্জের অংশ নয়। মূলতঃ আশেকে রাসূল (দঃ) দের জন্য রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারতের নিয়্যাতে যাওয়াই হল মূল। বদলী হজ্জ যে সকল মুসলিম নর-নারীর উপর হজ্জ ফরজ ছিল, তাঁদের মধ্যে যদি কেউ মৃতু্বরণ করে অথবা জীবিত কিন্তু শারিরীক দুর্বলতা ও অসুস্থতা ও অমতার কারণে হজ্জ করতে অপারগ হয়, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞ আলেম বা হজ্জে পারদশর্ী ব্যক্তি দ্বারা তাঁর বদলী হজ্জ করাতে পারবে। অথর্াৎ যাঁর জন্য বদলী হজ্জ করা হবে তাঁরই নামে ইহরাম পরিধান ও নিয়্যাত করে অন্য একজন হজ্জ আদায় করতে পারবে। Comments SHARES ইসলাম বিষয়: হজ্জের ওয়াজিব সমূহ