সময়ের কাজ সময়ে করা রব্বে কারীমের নেযাম

প্রকাশিত: ১:০২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০১৮

তাওহীদ আদনান

মানবজাতি সৃষ্টির একটি মাকসাদ রয়েছে সৃষ্টিকর্তার। অযথা সৃষ্টি করেননি তিনি মানবজাতিকে। মানবজাতি সৃষ্টির মাকসাদ হলো, মানবজাতি তার নিজ জীবনে সৃষ্টিকর্তার বিধান কায়েম করবে। সৃষ্টিকর্তার চাহিদানুযায়ী পরিচালিত করবে নিজের জীবনকে৷ আলোকিত করে রাঙ্গিয়ে তুলবে জীবন শিখাকে। সৃষ্টিকর্তার এবাদতে নিজেকে সপে দিয়ে, সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করে, কামিয়াব হবে দো-জাহানে৷

ফলাফল স্বরূপ পরকালে উপভোগ করবে অসীম সুখের জীবন৷ সৃষ্টিকর্তার এবাদতে মশগুল থেকে জীবনের অন্তিম লক্ষ্য ‘অসীম সুখের জীবন’ অর্জন করার জন্যই মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন প্রতিপালক৷ যারা এর বিপরীত চলবে তারা বঞ্চিত হবে এই নেয়ামত থেকে৷

অসীম সুখের জীবন অর্জন করার জন্য বা জীবনকে খোদায়ী বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করে জীবনের অন্তিম লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন জীবনের সময়গুলোকে কাজে লাগানো৷ প্রয়োজন সময়গুলোর কদর করা৷ প্রয়োজন সময়গুলোর সঠিক ব্যবহার করতে শেখা এবং সঠিক ব্যবহার করা৷ কেননা ইসলামের মাঝে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

যেমন, সময়ের বিবেচনা করেই ইসলামের ফরজ বিধানগুলো আদায়ের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মহান প্রতিপালক নিজেই৷ নির্দিষ্ট সময়ে ফরজগুলো আদায়ের গুরুত্বারোপও করেছেন সমানভাবে।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সময়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে কোরআনে কারীমে والعصر বলে সময়ের কসম পর্যন্ত খেয়েছেন। কোনো বস্তুর কসম তখনই খাওয়া হয় যখন বস্তুটি গুরুত্বের দিক থেকে অনেক উর্ধ্বে হয়। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন নিজেই যেহেতু সময়ের কসম খেয়েছেন তাই সহজেই অনুমেয় সময়ের গুরুত্ব কতটা অপরিসীম।

পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এরশাদ করেন ’ইন্নাল ইনসানা লাফি খুসর’। সময়ের কসম করে পরবর্তী আয়াতেই মানুষের ব্যাপারে বলেছেন যে ’নিশ্চয়ই মানবজাতি ক্ষতিগ্রস্ততায় রয়েছে’।

অনেক মুফাসসিরীনে কেরাম এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন যে, আল্লাহ পাক আমাদেরকে যে সময় দান করেছেন তা সঠিক পন্থায় ব্যবহার না করে যারা হেলায়-খেলায় সময় কাটায় সে সকল মানুষের ক্ষতিগ্রস্ততার দিকে ইঙ্গিত করে এই আয়াতে সময়ের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে৷

কোনো কোনো মুফাসসির বলেন এখানে সময়ের কসম খেয়ে মানবজাতিকে সতর্ক করা হয়েছে যে, সময় ও জীবন হলো সঙ্কীর্ণ বিষয়। যে সময়টুকু চলে যাচ্ছে তা আর ফিরে আসবে না৷ তাই সময়ের কদর করা উচিত।

পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত দার্শনিক ও জ্ঞানীরা বলেছেন, সময়ই জীবন৷ কেননা সময় ছাড়া জীবন হতে পারে না৷ আবার জীবন ছাড়ার সময়ও হতে পারে না৷ একটি মানুষের যদি জীবনই না থাকে তাহলে তার সময় আসবে কোত্থেকে? দুনিয়ার সকল দামী দামী পণ্য, স্বর্ণ-রুপা ইত্যাদি থেকেও অধিক দামী সময়৷ স্বর্ণ-রৌপ্য কখনো যদি অতিক্রান্ত হয়ে যায়, হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে তা পুনরায় অর্জনের সুযোগ থাকে৷ কিন্তু যে সময়টা একবার অতিক্রান্ত হয়ে যাবে তা আর ফিরে আসবে না।

সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কোন কিছুর জন্য আফসোস করলেও লাভ হয় না। সময়ের পরে আফসোস করাটা ফলহীন। দুনিয়ার জীবন বা সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আখেরাতে দোজখীরা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমাদেরকে একটি বারের জন্য হলেও আবার দুনিয়ায় প্রেরণ করুন। কিন্তু তাদের এই আকুতি তখন আর কাজে আসবে না।

তাই সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর আফসোস থেকে বাঁচতে আমাদের মূল্যবান সময় গুলোকে আমরা কে কিভাবে কোথায় খরচ করছি তা আমাদের ভাবা উচিত৷ কোন পথে সময় খরচ করে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি? কোন পথে সময় খরচ করে উপকৃত হবো? সেই সমীকরণটাও মিলানো উচিত সময় থাকতেই।

লেখক: শিক্ষার্থী নদওয়াতুল উলামা, লক্ষ্মৌ, ভারত

/আরএ

Comments