পাপের দুনিয়াবি ক্ষতি

প্রকাশিত: ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০১৮

এস এম আরিফুল কাদের

গোনাহের দরুণ যে সব ক্ষতি বা শাস্তি পরকালে ভোগ করতে হয়, তেমনি দুনিয়াতেও এর ভয়ানক ক্ষতি বা শাস্তি রয়েছে। সে ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে কারীমে এসেছে- ’জলে ও স্থলে যেসব বিপদ সংঘটিত হয়, সব মানুষের হাতের কামাই করা’। (সূরা রূম : ৪১)

এমনকি পবিত্র কালামে পাকে পূর্ববর্তী প্রেরিত নবি-রাসুল আ. গণের গোত্রের উপর পতিত দুনিয়াবী আজাব সম্পর্কে জানা যায়। তা সবই নিজেদের নাফরমানীর ফল। কিন্তু মানুষ যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, দুনিয়াবী পাপের ক্ষতি অবশ্য ভোগ করতে হবে।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. হতে বর্ণিত, মুসলমানগণ সিসিলী দ্বীপ বিজয়ের দিন হযরত আবু দারদা রা. কে এককী বসে কান্না করতে দেখে হযরত যুবায়ের ইবনে নকীর রা. বললেন, আজ মুসলমানদের উল্লাসের দিন হওয়া সত্ত্বেও আপনি কান্নার কারণ কি? উত্তরে বললেন, হায় আফসোস! তুমি সহজ কথাটি বুঝতে পারো না? যখন কোন জাতি আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যাচরণ করে, তখন তারা শাহী তখতের মালিক হয়েও বেইজ্জত ও পর্যুদস্ত হয়। তার প্রমাণ মিলে সিসিলীবাসীর পরাজয়ে। আমার কান্নার কারণ এটাই। (জাযাউল আ’মাল : ১১)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, আমরা ১০জন লোক হুজুর পাক সা. এর খিদমতে হাজির হলাম। তিনি সা. আমাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন, ৫টি ভয়ানক ব্যাপার হতে আল্লাহ তোমাদেরকে হেফাজত রাখুন। সে ৫টি কাজ হল, (১) নির্লজ্জতা শুরু করলে প্লেগসহ এমন রোগ দেখা দিবে যা কখনো পূর্বপুরুষগণ দেখেনি। (২) ওজন কম দিতে শুরু করলে দুর্ভিক্ষসহ অত্যাচারী শাসকের শোসন দেখা দিবে। (৩) যাকাত বন্ধ করা শুরু করলে রহমতের বৃষ্টি হতে বঞ্চিত হবে। যা পশু পাখি না থাকলে একফোটাও বর্ষিত হতো না। (৪) ওয়াদা ভঙ্গ করা শুরু করলে বিভিন্ন দুশমন তাদের উপর জয়যুক্ত হয়ে ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করে নিবে। (৫) যিনাকে জায়েজ কাজের ন্যায় প্রকাশ্যে ও শরাব এবং গান-বাদ্য শুরু করলে আল্লাহ পাক অসন্তুষ্ট হয়ে ভুমিকম্প শুরু করার আদেশ দেন। (ইবনে মাজাহ)

হযরত ইবনে আবিদ্দুনিয়া রা. বর্ণনা করেন, হুজুর সা. ইরশাদ করেন- যখন আল্লাহ তা’য়ালা বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করেন, তখন বেশি বেশি করে শিশু সন্তানদের অকাল মৃত্যু দেন এবং মেয়েলোকগণ বন্ধ্যা হয়। (জাযাউল আ’মাল : ১৩)

হযরত মালেক বিন দীনার রহ. বলেন, আমি হেকমতের কিতাবে পেয়েছি, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- আমি সকল বাদশাহর বাদশাহ। বাদশাহের অন্তর আমার হাতে, যারা আমার হুকুম পালন করে আমি বাদশাহের অন্তর সদয় করে দেই। যখন নাফরমানী করে, তখন বাদশাহের অন্তর তাদের জন্য নিষ্ঠুর করে দেই। অতএব তাদের মন্দ না বলে; আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমিই তাদেরকে তোমাদর উপর সদয় করে দিব। (জাযাউল আ’মাল : ১৩)

ইমাম আহমদ রহ. হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক বনী ঈসরাইলদের লক্ষ্য করে বলেন- আমাকে ইবাদত করে খুশি করালে, আমি বরকত দান করি। পক্ষান্তরে আমার নাফরমানী করলে, আমি রাগান্বিত হয়ে অবাধ্য ব্যক্তির উপর এমন লা’নত বর্ষণ করি, যা তার সাত পুরুষ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। (জাযাউল আ’মাল : ১৪)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন, যে সম্প্রদায়ের মাঝে সুদের প্রচলন বৃদ্ধি পায় তারা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়। [মুসনাদে আহমদ-৩৭৫৪] হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, একসময় আমার কতিপয় উম্মতকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে, উল্টিয়ে দেওয়া হবে ও বিকৃত করে দেওয়া হবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা.! তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা অবস্থায়ও? রাসূল সা. বলেন, যখন গান বাদ্যের ছড়াছড়ি ঘটবে, যিনা বৃদ্ধি পাবে, মদপান করা হবে ও রেশমের কাপড় পড়া হবে তখনই এগুলো ঘটবে। [আদদুররুল মানসুর ২/৩২৮]

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ঐ সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ। কারো গায়ে যখন কোন লাকড়ির আচড় লাগে, কিংবা রগে যন্ত্রণা হয় বা পাথরে আঘাত লাগে, কিংবা পা পিছলে পড়ে যায়, সেটা তার গুনাহের কারণেই হয়ে থাকে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র সকল বিপদাপদই মানুষের পাপের প্রতিদান রুপে আসে। [ইবনে কাছীর ৪/১৭৬] কোন কোন আলেম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন এক ব্যক্তি বা প্রাণীকে জুলুম করে, সে সারা দুনিয়ার মানুষ জীবজন্তু ও পশু পাখির উপর জুলুম করে। কেননা, তার গুনাহের কারণে যখন অনাবৃষ্টি, খরা ইত্যাদি অন্যান্য বিপদাপদ দেখা দেয় তখন দুনিয়ার সকল প্রাণীই কষ্ট পায়। তাই কেয়ামতের দিন এরা সবাই ঐ গুনাহকারীর বিরুদ্ধে নালিশ করবে। [মাআরিফুল কুরআন]

এরকম আরো বহু হাদীস রয়েছে যেগুলোর মধ্যে কোন পাপের উপর কোন আযাব আসে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। অতএব প্রথমত আল্লাহকে ভয় করা, অতঃপর পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে মানবজাতির উচিৎ যাবতীয় পাপকর্ম থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কৃতকর্ম দ্বারা নিজেদের উপরই গজব টেনে না আনা। তাছাড়া এগুলো তো হলো দুনিয়াবী কিছু বিপদাপদ ও ক্ষয়ক্ষতি। বাকি তো রয়েছে পরকালীন শাস্তি। যার কোন তুলনাই হয় না। আল্লাহ পাক আমাদের সঠিক দ্বীন বুঝে যাবতীয় গোনাহ হতে বেঁচে দুনিয়া ও পরকালীন শাস্তি হতে রেহাই পাওয়ার তৌফিক দিন। আমীন!

লেখকঃ- নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা (প্রাইভেট) কিশোরগঞ্জ।

/আরএ

Comments