রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া বিএনপি কি পারবে মূল শ্রোতে ফিরতে? নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০১৮ বশির ইবনে জাফর ‘৫ জানুয়ারি’। ধ্বণিটা কানে এলেই দলমত নির্বিশেষে একটা চিত্র সবার চোখের সামনে ভেসে আসে তা হচ্ছে পাঁচ থেকে দশ পার্সেন্ট ভোটারের উপস্থিতিতে বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া একটি প্রহসনের নির্বাচন। যা ওই সময়কার এই পাঁচ-দশ পার্সেন্ট ভোটারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিজয়ী দলনেত্রী তথা শেখ হাসিনাও বলেছিলেন বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ‘আপনারা আসুন, বসুন আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিবো’। সময় পাল্টেছে। বক্তব্যগুলো এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই ভেসে বেড়ায়। অফিস আদালতে আর চলে না সেসব কোন বক্তব্যের লেশ মাত্রও। প্রধানমন্ত্রী এটা বলেছিলেন কারণ তখন পরিস্থিতিটা এমনই ছিলো যে আওয়ামী লীগ এর নেতা কর্মীরা নিজেরাও জানতো যে এটা একটা প্রহসন বলেই খ্যাতি লাভ করছে সাধারণ জনগণের কাছে। তাই মধ্যবর্তী একটা নির্বাচন দেয়া ছাড়া কোন গতি নেই। কিন্তু এর ঠিক কয়েকমাস পরই বিএনপি যখন নানাবিধ কারণে আন্দোলনের সামর্থ্য হারালো তখন ক্ষমতাসীন দলটি থেকে বড় গলায় প্রকাশ্যে এ আওয়াজ শোনা যেতে থাকলো ‘আমরা জনগনের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি। জনগন আমাদের চায় তাই আমরা আছি আমরাই থাকবো’। ব্যপারটা তখন বুদ্ধিদীপ্তদের বুঝে এলেও বিএনপির একটা ধারণা বোধহয় ছিলো যে, এ ধরনের নির্বাচন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকতে চাইলেও নানা কারণে সরকার বাধ্য হবে দ্রুতই আরেকটি নির্বাচন দিতে। ‘নানা কারণে’র মধ্যে একটা ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলতে যাদের বোঝায়, তাদের চাপ। কিন্তু অনেকটা দেরিতে এসে বিএনপি এটা লক্ষ্য করতে পারলো যে, সে ধরনের কঠিন কোনো চাপ সরকারের ওপর নেই। সরকার বরং একের পর এক দক্ষতা দেখিয়ে শক্তিধর দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক জুড়ে দিতে শুরু করেছে কিংবা এ কথা ওদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে নির্বাচনটি অত্যন্ত সুষ্ঠু ও জনগনের স্বতঃফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অবস্থায়ও দিশাহীন বিএনপি জোট যদি বেশিরভাগ জনগনের কাছে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনটি বাতিলের দাবিতে নতুন করে শক্ত একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারত, তাহলেও বুঝা যেত যে তাদের গঠনতন্ত্র বেশ শক্তিশালীরুপেই বহাল আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তেমন কোনো প্রয়াস তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। হামলা মামলার ভয়ে কিংবা রাজনৈতিক দূরদর্শীতা হারানোর ফলে তারা একরকম বিলুপ্তপ্রায় দলে পরিণত হয়েছে। যেটুকু প্রচেষ্টা মাঝে মধ্যে লক্ষ করা গেছে, তা বারবারই ব্যর্থ হয়েছে করুণভাবে। এ অবস্থায় বিএনপি নেত্রীকে এমনটিও বলতে দেখা গেছে– ‘সরকারকে পঁচতে সময় দিচ্ছি’। এটাও জনগন তাদের থেকে বেশ কয়েকবার শুনেছে ‘আগামী ঈদের পর তীব্র আন্দোলন হবে’। সেই ‘আগামী ঈদ’ আর বুঝি বিএনপির এলো না। প্রথমে খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়া করা হলো, শরীক দলগুলো থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় একে একে নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হলো, সর্বশেষ নেত্রীকে জেলে পুরা হলো কোন কিছুতেই আর ইস্যু খুঁজে পেলো না বিএনপি। তারা বুঝলো না এদেশে কোনো সরকারই দ্রুত পঁচে না। জনগণও তাদের অন্তত একটি মেয়াদ দেখতে চায়। এই এক মেয়াদে দক্ষতা দিয়ে, ক্ষমতার দাপট দিয়ে ভালোবাসায় বা জোড় খাটিয়ে জনগণের মন জয় করলে বা জনগনের মুখ বন্ধ রাখতে পারলে ‘দেশ ভালো চলছে না’ এ কথা কেউ বলে না। কথায় আছে ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’। ব্যাংক লুট আর ব্যালট লুটে জনগনের কিছু যায় আসে না যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতিটা কেউ সুস্পষ্টভাবে তাদের সামনে দেখাতে না পারবে। এখন জনগণ উন্নয়নমুখী হয়েছে। তাই জনগনের সামনে বিকল্প ও অধিক কার্যকরী উন্নয়ন বান্দব ভালো কিছু তুলে ধরতে না পারলে বিএনপি রাজনীতিতে আসতে পারবে বলে কোন লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। একদিকে নিজেরাই সাংগঠনিকভাবে ছন্নছাড়া হয়ে আছে অপরদিকে জনগণকে নতুন করে কোন আশার আলো দেখাতে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ আজকের এই বিএনপি। জনগনের কাছে আওয়ামী লীগের বদনাম নয় বরং ভালো দিকগুলোর উপরেও আরোও ভালো কিছু করা সম্ভব সেটা বিএনপি দেশকে, জাতিকে সর্বপরি দেশের জনসাধারণকে দেখিয়ে আবারো রাজনীতিতে ফিরে আসুক। দেশে সুস্থ রাজনীতি ও উন্নয়নমুখী রাজনীতির চর্চা হোক এই কামনাই করি। প্রতিহিংসার জবাব ভালোবাসায় সু-কৌশলে হোক যাতে উদারতার সর্বোচ্চ সাক্ষর মিশে থাকে রাজনীতির প্রতিটি পথে, অলিতে-গলিতে। লেখক- সাংবাদিক, কলামিস্ট টিকেএইচ/ Comments SHARES নির্বাচিত কলাম বিষয়: রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া বিএনপি কি পারবে মূল শ্রোতে ফিরতে