রোহিঙ্গারা কি আর ফিরে যাবে না?

প্রকাশিত: ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০১৮

বশির ইবনে জাফর

মিয়ানমার সেনা কতৃক গণহত্যার শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে প্রায় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা তাদের জীবন নিয়ে পালিয়ে এলো আমাদের এই দেশে। ছোট্ট ও অনুন্নত দেশ হওয়া সত্বেও আমরা বাঙালি অতিথিপরায়ণ বলে মানবতার দায়ে জায়গা করে দিলাম নির্যাতিত এই মানুষগুলোর জন্য।

দেশি বিদেশি মিডিয়ার মাধ্যমে বেশ ভালোভাবেই আমরা একথা বিশ্বকে জানাতে পেরেছি যে আমরা বাঙালিরা নির্যাতিত অসহায় জনগোষ্ঠির পাশে সহায়তা ও মানবতায় হৃদয় উজার করে দাঁড়িয়েছি।

আমরা যতোটা নিজেদের উদারতার কথা জানাতে পেরেছি ততোটাই ব্যর্থ হয়েছি মিডিয়াতে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে স্বদেশে পাঠানোর কথা বলতে। কিংবা বিশ্ব মোড়লদের দরবারে যতটুকু বলার চেষ্টা করেছি বৈকি তাও নিছক নিয়ম রক্ষার জন্যই বলা হয়েছে। যতোটা উদারতা নিয়ে তাদরে জন্য সীমানা খুলে দিলাম ততোটা কঠোরতা নিয়ে কখনো বলতে পারিনি ‘ওদের তোমরা ফিরিয়ে দাও স্বদেশের মাটি।’

ফলশ্রুতিতে পর্যাপ্ত সামর্থ্য না থাকা আমাদের এই দেশে বিশাল এই জনগোষ্ঠি একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে ঠিকানা গড়ে তুললো। যেখানে আমরা নিজরাই পাই না জীবন চালানোর মতো একটা চাকরী বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সেখানে নিজেদের খাবারে কিংবা অধিকারে দিতে হলো তাদের ভাগ বসাবার অধিকার।

এতো উদারতার সমাদর ওরা কিভাবে করতে জানবে? ওদের না আছে শিক্ষা না আছে দীক্ষা। তবুও অমরা তাদের জন্য শিক্ষালয় গড়ে দিয়েছি। স্কুল কিংবা মাদরাসা-মসজিদ কিছুই কম রাখিনি। কখনো নিজেরা যা খাই তা নিয়েই ছুটে গেছি সমুদ্রপাড়ে। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন চলে? রসদ তো ফুরিয়ে এসেছে যা কিছু সাধ্যে ছিলো আমাদের।

পেটের দায়ে আজ তাই তারা নেমেছে এক অন্ধকার পথে। ভয়ঙ্কর সে অন্ধকারে পা চলতে পিছপা হচ্ছে না ওরা। দু’মুঠো খাবারের জন্য ওরা নিজেরাই হত্যা করছে নিজেদের। কিংবা যাকে পাচ্ছে তাকেই। এমনকি তাদের নিরাপত্তায় আমার দেশের যেসব বীর পুরুষরা নিয়োজিত তাদের পর্যন্ত জানে মারছে এই রোহিঙ্গারা। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে দেখা যায় চুরি-ছিনতাই, মাদক চোরাচালান কিংবা ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে প্রতিনিয়ত আইন শৃঙ্খলা ব্যহত করছে এসব জনগোষ্ঠি।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ি ডেইলি স্টার তার প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে গত এক বছরে কমপক্ষে ২২ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে নিজেদের বিবাদে। হত্যার পাশাপাশি ৬ টি ধর্ষণ মামলাও হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানায়। ৬৮ টি মাদক সম্পর্কিত মামলা ও ১৪২ টি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার রেকর্ড গত এক বছরে পুলিশের খাতায় জমা হয়েছে। এছাড়াও দাঙ্গা হাঙ্গামার অভিযোগে আটক হয়েছে অন্তত ১২২ জন। তাদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ৫ টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেও আইন শৃংঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন কক্সবাজার স্থানীয় পুলিশের এএসপি শহিদুল ইসলাম।

এমতাবস্থায় আমাদের আর কতো অপেক্ষার প্রহর গুণতে হবে সমস্যা সমাধানে? আমরা তো বিশ্ব মানচিত্রে মেরুদণ্ডহীন কোন দেশ নই যে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা একটি স্বাধীন জাতি। বিশ্ব দরবারে দৃঢ় গলায় কথা বলার আধিকার আমাদেরও রয়েছে। আমাদের রয়েছে জানবার অধিকার কেন মিয়ানমার সরকার তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে না।

লেখক-সাংবাদিক, কলামিস্ট

টিকেএইচ/

Comments