কওমী শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষায় সরকারকেই কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশিত: ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ, মে ২২, ২০১৮

কাওছার বাঙ্গালী

জাতি হিসেবে আমরা কতটা দূর্ভাগা! নিজেরা পকেটের পয়সা দিয়ে পড়াশোনা করার জন্য প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে হয়। শিক্ষা গ্রহন আমাদের অধিকার, আমাদের প্রাপ্য।

এদেশে কওমী মাদরাসা শিক্ষায় জড়িতদের সংখ্যা প্রায় ৭২ লক্ষ। এই বিশাল শ্রেণীর শিক্ষিতদের ব্যপারে কারো কোনো জানা শোনা নাই! এরা সমাজে বসবাস করেও সমাজের বাইরে। তারা কোনো সুবিধা ভোগ করছে না। কিন্তু সরকার তাদের থেকে রাষ্ট্রীয় নিয়মানুসারে যা নেওয়ার তা নিয়ে নিচ্ছে।

কিছুদিন পূর্বে শিক্ষাসনদ স্বীকৃতির দাবী আদায়ে যখন কওমীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলো তখন এদেশের অনেক মানুষ নতুন জেনেছে যে তাদের দেশে এরকম শান্ত, ভদ্র, নিরীহ এতবড় একটা জনগোষ্ঠি আছে। অনেক টালবাহানার পরে শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির মৌখিক অনুমতি মিলেছে।

আজকের প্রেসক্লাবের রাস্তায় আরেকটি মানবন্ধন হয়েছে। মনের কথা গুলো সেখানের মাইকে আলোচনা হয়েছে। সবগুলো কথার সাথে ওভার সমর্থন থাকছে।আমাদের কথাবার্তা স্পষ্ট- শুধু দেওবন্দ নয়, নদওয়া, হায়দ্রাবাদসহ সকল উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পথ সরকারকেই নিস্কন্টক করতে হবে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশ-ভারত যেই বন্ধুত্বের যেই মধুময় সম্পর্ক, পৃথিবীতে এমন নজীর কোনো প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সম্ভবত নাই।

সহজেই বোঝা যায় কয়েকদিন আগে আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারত কোনো প্রভাব ফেলবে না বা হস্তক্ষেপ করবে না। এর সহজ অর্থ বুঝতে বড় কোনো ডক্টর হতে হয় না। তবে সহজে এতোটুকু বুঝি ভারত-বাংলাদেশের মাঝে আছে এক শীতল সম্পর্ক রয়েছে যা সকল কিছুর উর্ধ্বে।

ওদিকে সাবেক বিরোধী দল বিএনপি! ভারতীয় কোনো গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি বাংলাদেশে আসলে তাদের অভ্যার্থনা-তৎপরতা রুদ্ধশ্বাসে ধাবমান অশ্বারোহীর চেয়ে কম হয় না। ফলে বলা যায় তারাও উপরে যতই ভারত বিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকুক ভেতরে ক্ষমতার জন্য ভারতকেই ত্রাণকর্তা মনে করে।

আজো মনে পড়ে ক্ষমতার আরেক শরিক ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ বাংলাদেশে একমাত্র দলগত ভাবে স্বাধীনতাবিরোধী খেতাবপ্রাপ্ত সংগঠন।

তারা ভারতবিরোধী হলেও মোদি সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের শুভেচ্ছাভর্তি ১০ মণী ট্রাক গুলো নয়া দিল্লীকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। আমরা সেদিন মুচকি হেসেছিলাম।

যাই হোক ক্ষমতার রাজনীতি চলমান থাক এটা আলোচ্যবিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে কওমী শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষায় এদেশের সরকারকেই কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। যে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, পাহাড়িদের জন্য, উপজাতিদের জন্য আবার অঞ্চলভিত্তিক অনেক সুযোগসুবিধা থাকে সেদেশে কওমী মাদরাসার জন্য অধিকার রক্ষার জন্য আলাদা দায়ভার থাকাও প্রাসঙ্গিক।

অতএব, গতকালকের মানববন্ধন একদিকে যেমন ঐক্যের একটি নিরব মেসেজ তেমনি কওমী মাদরাসা সম্পর্কে জাতিকে ভালভাবে জানান দেওয়ার মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি বারকরা পদক্ষেপ।

লেখক, গবেষক, সংগঠক 

Comments