‘সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে এই বাজেট’ নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ৯, ২০১৮ নিজস্ব প্রতিবেদক : সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান মেয়াদে শেষ এবং সাধারণ নির্বাচনের আগের বাজেট। টানা দশ বছর ধরে বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তিসহ প্রস্তাবিত বাজেটে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা, কর্পোরেট কর হার হ্রাস, কিছু স্থানীয় শিল্পে প্রণোদনা দিয়ে শিল্পায়ন এবং ২০৪১ সালে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। আরো ১১ লাখ লোককে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার ঘোষণা দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ঘোষিত বাজেট ঘোষণার আগে মন্ত্রিপরিষদ তা অনুমোদন করে। দেশকে এগিয়ে নিতে বিপুল অংকের বিনিয়োগ লক্ষ্য নিয়ে বিশাল ব্যয়ের টার্গেট করা হয়। যে কারণে বাড়ে বাজেটের আকারও। তবে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে টাকা ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন হলে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। বিগত সময়ের ন্যায় প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে রাখতে মানব সম্পদ তথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জন্য ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা ধরলে এডিপির আকার বেড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করে নতুন বাজেটে বাড়ানো হয়েছে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট। ব্যক্তি শ্রেণির আয়করের সর্বনিম্ন সীমা আড়াই লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রেখে কমানো হয়েছে কর্পোরেট কর। তবে ভ্যাটের স্তর কমিয়ে আনায় যারা কম হারে ভ্যাট দিতেন, তাদের কিছুটা বাড়তি ভ্যাট দিতে হবে। পাশাপাশি আয় বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু খাতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর হারে পরিবর্তন করা হলেও আদায়ের চ্যালেঞ্জ কিন্তু থাকছেই। নির্বাচনের বছর হওয়ায় এদিকে খুব বেশি চাপ দেওয়া যাবে না আবার চলতি বছরে আয় মুনাফার ওপর কর ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট খাতে অর্জন আশানুরূপ ছিল না। ফলে বছরের শেষে লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধনী আনা হয়। এ অবস্থায় আগামী বছর রাজস্ব আদায় বাড়ানো অনেকটা অনিশ্চয়তায় রয়ে যাচ্ছে। যদিও কর আদায়ে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কর আইনের বিভিন্ন বিধান পরিপালনের ব্যর্থতায় জরিমানা বাড়ানো হয়েছে যা সাধারণ করদাতাকে হয়রানির মুখে ফেলতে পারে। বহুল আলোচিত ভ্যাটের হার এবারে ৫টি স্তরে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করায় আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম বাড়বে। যেখানে খাদ্যপণ্য মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী। সেখানে আগামী বছর মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা কঠিন হতে পারে। ই-কমার্সে ভ্যাট আরোপ করায় এখাত নিরুত্সাহিত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। সাধারণত ভ্যাট না দিয়ে কোনো পণ্য বিক্রি হয় না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এই সময়ে ই— কমার্স জনপ্রিয় হয় এবং তরুণরা এ ব্যবসায় ঝুঁকছে। এদিকে, কিছু খাতে প্রণোদনাও রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে সেলুলার ফোন উত্পাদনে কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। দেশে তৈরি হয় না এমন সফটওয়্যার যেমন ডাটাবেজ, প্রডাক্টিভিটি সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাইসাইকেল, লিফস্প্রিং, টায়ার টিউব উত্পাদন, মোটর সাইকেল উত্পাদনে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে হাইব্রিড গাড়ির। ঢাকার যানজট কমাতে বিনাশুল্কে স্কুল বাস আমদানির সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছে। ওষুধ, চামড়া, টেক্সটাইল, লৌহ ও ইস্পাত, গুঁড়া দুধ, রেফ্রিজারেটর ও কম্প্রেসার, মুদ্রণ শিল্পসহ কয়েকটি খাতে সুবিধা দিয়ে রফতানি আয়ে উেস কর বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। যা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টস খাতের রফতানি আয়ের ওপর প্রযোজ্য কর ১৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পুুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সেটা সাড়ে ১২ শতাংশ প্রযোজ্য হবে। বাজেট কাঠামো মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে যা জিডিপির ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এডিপি বরাদ্দ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসহ ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন খাতে রাখা হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা যা জিডিপির সাড়ে ১১ শতাংশ। এই ব্যয় নিশ্চিত করতে আয়ের টার্গেট করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের মাধ্যমে কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত উত্স থেকে রাজস্ব পাওয়া যাবে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, করবহির্ভূত খাত থেকে পাওয়া যাবে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। বাকিটা থাকবে ঘাটতি। Comments SHARES অর্থ-বাণিজ্য বিষয়: