সোনার দামে বিশ্বরেকর্ড, যেসব কারণে বাড়ছে মূল্যবান এ ধাতুর দাম

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২৪

এবার বিশ্ববাজারে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে বিলাসী ধাতু সোনার দাম। ভূরাজনৈতিক কারণে ডলারের দরের হেরফের, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নিরাপদ রিজার্ভ হিসেবে সোনা কেনায় তৎপরতা ও এশিয়ার বাজারে সোনার চাহিদা বাড়ায় বিশ্ববাজারে রেকর্ড মূল্যে সোনার দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর ফলে বাংলাদেশেও বেড়েছে সোনার দাম। বুধবার সোনার দাম নির্ধারণ করে নতুন মূল্য জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ভরিতে ২ হাজার ২১৭ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৯০৮ টাকা।

বার্তা সংস্থায় রয়টার্স বলছে, মূলত দুটি কারণে সোনার দাম বাড়ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রানীতির রাশ আলগা করবে—এমন খবর অনেক দিন ধরে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সেই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছে।

আগে থেকেই এশিয়ার বাজারে সোনার চাহিদা বেশি। সম্প্রতি সেটা আরো বেড়েছে। তাছাড়া ডলারের দরের ফলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিরাপদ রিজার্ভ হিসেবে সোনা কিনছে। গত আট মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত সোনা বিক্রি করেছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণে কিনেছে।

গতকাল মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সোনার স্পট মূল্য শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৪১ ডলারে উঠে যায়; এরপর তা আবার ২ হাজার ১৩০ ডলারে নেমে আসে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সোনার দাম এযাবৎকালের সর্বোচ্চ আউন্সপ্রতি ২ হাজার ১৫০ ডলারে উঠেছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৩০০ ডলারে উঠে যাবে। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাতে যাচ্ছে এবং তার জেরে সোনার বাজার সেদিকে ধাবিত হবে, অর্থাৎ দাম এই পর্যায়ে উঠে যাবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সোনার দাম এই পর্যায়ে উঠবে তা হয়তো নয়; সম্ভবত আগামী ছয় মাসের মধ্যে সোনার দাম ২ হাজার ৩০০ ডলারে উঠবে।

সোনার সঙ্গে স্পট মার্কেটে রুপার দামও বাড়ছে। সোমবার থেকে এই ধারা শুরু হয়েছে এবং সর্বশেষ রুপার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ২৩ দশমিক ৯৪ ডলার, ২৮ ডিসেম্বরের পর যা সর্বোচ্চ।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শুধু সোনার দাম বাড়ছে না, তার সঙ্গে রুপার মতো ধাতুর দামও বাড়ছে। সে কারণে তারা মনে করছেন, এবার স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির ধারা টেকসই হবে।

যেকোনো পণ্যের দাম ওঠানামা নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের ওপর। তবে সোনার ক্ষেত্রে যোগ হয় ভোক্তার আচরণ। কেউ যদি মনে করেন, সামনে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, তাহলে অর্থের ওপর ভরসা কমে যায়; কারণ মূল্যস্ফীতি বাড়লে অর্থের মূল্যমান হ্রাস পায়। তখন মনে করা হয়, এমন কিছু পণ্য কিনে রাখতে হবে, যার ক্ষয় নেই।

এমন নয় যে বছর বছর সোনার খনি থেকে সোনার সরবরাহ আসতেই থাকে, তাই এখানে চাহিদা-জোগানের সম্পর্কের তুলনায় ভোক্তার আচরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন মূল্যস্ফীতির হার উন্নত দেশগুলোতে কমতির দিকে থাকলেও নীতি সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা সোনার প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

Comments