চরম অর্থ কষ্টে রয়েছে খুলনার পাটকল শ্রমিকরা; মজুরি ও বেতন বকেয়া ৩৭ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮

শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধি: চরম অর্থ কষ্টে রয়েছেন খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। নিয়মিত মজুরি না পেয়ে ধার-দেনা করে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের ৯টি পাটকলের শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরি-বেতন বাবদ বকেয়া পড়েছে ৩৭ কোটি টাকা।

আর্থিক সংকটের কারণে এ পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না মিল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ঈদ-উল আযহার পূর্বে এক সাথে ৯টি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আংশিক পাওনা পরিশোধ করা হয়।

গত ২২ সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ি, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ৪ থেকে ৭ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। আর কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ১ থেকে ৪ মাসের বেতন বকেয়া।

সব মিলিয়ে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৩০ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ৬ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

পাটকলগুলোর মধ্যে আলীম জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৭ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ১ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৪ মাসের বেতন বাবদ ১ কোটি ৪ লাখ টাকা।

কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৪ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ৬৬ লাখ টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ১ মাসের বেতন বাবদ ২২ লাখ টাকা।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ১ মাসের বেতন বাবদ ৯৩ লাখ টাকা।

দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৮৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৪ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ৩৮ লাখ টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন বাবদ ৪৬ লাখ টাকা।

ইস্টার্ণ জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৭ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৪ মাসের বেতন বাবদ ৮০ লাখ টাকা।

জে জে আই জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ১ মাসের বেতন বাবদ ৪৮ লাখ টাকা।

খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৩ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৭ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন বাবদ ১ কোটি ১২ লাখ টাকা।

স্টার জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া ৫ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ১ মাসের বেতন বাবদ ৫৫ লাখ টাকা।

সর্ব শেষ বৃহস্পতিবার আরো এক সপ্তাহের শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নুর ইসলাম বলেন, চলতি সপ্তাহ নিয়ে ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়তে যাচ্ছে। ঈদের পূর্বে আংশিক মজুরি প্রদান করলেও ঈদের পর আর কোন মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। সরকার উন্নয়নের কথা বললেও শ্রমিকদের এখন নাই নাই ভাব। শ্রমিকরা দুর্বিসহ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থার পরিত্রাণ চাই।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, ঈদুল আযহার পূর্বে আংশিক দিলেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের কোন মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। ফলে আর্থিক কষ্টে ভুগছে শ্রমিকরা। মিলের উৎপাদিত কিছু পণ্য বিক্রি হলেও তা শ্রমিকদের না দিয়ে পাটক্রয় খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। সরকার ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলে শুনেছি। তবে কবে নাগাদ পরিশোধ করবে তা জানতে পারিনি।

জেজে আই জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি পরিশোধে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মিলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পাট ব্যবসায়ীরা প্রায় ২০ কোটি টাকা পাবে। তাদের পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের দর কমেছে। সার্বিক বিষয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। দ্রুত এর সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদী।

বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শেখ রহমত উল্লাহ বলেন, অর্থ সংকটের কারণে মূলতঃ নিয়মিত মজুরি ও বেতন প্রদান করা যাচ্ছে না। তবে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। এ পণ্য রপ্তানি হলে সংকট থাকবে না।

/এমএম

Comments