স্বর্ণ নিয়ে ভুতুড়ে কাণ্ড নয়, করণিক ভুল: বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার:  বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণের মান কমে যাওয়ার বিষয়ে দেশের একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনটি একটি করণিক ভুলের ওপর নির্ভর করে লেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকটির প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তোলপাড় ফেলার পর মঙ্গরবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা করণিক ভুল। স্বর্ণ যখন শুল্ক গোয়েন্দা থেকে স্বর্ণ নেয়া হয়, তখন পরিমাপ করা হয় ।লিখতে বলা হয় ৪০ কিন্তু এটি ইংরেজিতে লেখার সময় বাংলা ৪০ কে ইংরেজিতে (৮০) লিখে ফেলা হয় এবং এতেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মানে ভুলে এটা রেকর্ট হয়েছে ৮০।’

তিনি বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দারা যখন স্বর্ণ নিয়ে মাপে, তখন তারা কিন্তু সেখানে ৪৬ শতাংশ স্বর্ণ পায়।যেটা আমরা ৪০ শতাংশ লিখেছি সেটা শুল্ক গোয়েন্দারা পরিমাপ করে পায ৪৬ শতাংশ।’

আপনাদের মাপে ৪০ পাওয়া গেলে, শুল্ক গোয়েন্দাদের মাপে ৪৬ শতাংশ হয়- জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এনালগ পদ্ধতিতে মেপেছিলাম, অনেক সময় ভেরি করে।’

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ, মহাব্যবস্থাপক (কারেন্সি) আওলাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

কোন প্রতিবাদ জানাবেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা প্রতিবাদ জানাবো। এখানে ভল্টের নিরাপত্তায় কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। জাতীয়ভাবে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যে সামান্য ব্যাত্যয় হয়েছে সেটাহল ৪০ এর জায়গায় ৮০ লোখ হয়েছে। এটাকে মোটেই ভুতুড়ে কাণ্ড বলা যায় না।’

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো আজ প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শিরোনামে।

এতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টমস হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়।

কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে।

এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

আর মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে এটার ব্যাখ্যায় বলা হয়, সব ঠিক আছে স্বর্ণ যখন শুল্ক গোয়েন্দা থেকে গ্রহন করা হয়েছে তখন ৪০ এর যায়গায় ভুলে এটা ৮০ লেখা হয়েছে।

এদিকে সোনা কেলেঙ্কারির এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক নেতারাও বক্তব্য দিতে শুরু করেন।

মঙ্গলবার সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ ঘটনাকে সরকারের গাফিলতি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের গাফিলতিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।’

#এএইচ

Comments