বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে বরকতময় শব-ই বরাত নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০১৯ মুহাম্মাদ বিন নূর আলেম ও লেখক পরিচয়: শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটির নাম শবে বরাত। শবে বরাত বা ﺷﺐ ﺑﺮﺍﺀﺓ শব্দ দুটি ফার্সি আরবীতে এর নির্দিষ্ট প্রতিশব্দ নেই তবে সময় নিদ্রিষ্ট। হাদীস শরীফে বর্ণিত ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎن দ্বারা যেই রাত্রি উদ্দেশ্য শবে বরাত দ্বারাও সেই একই রাত্রি উদ্দেশ্য। ﺷﺐ শব্দের অর্থ রাত বা রজনী ﺑﺮﺍﺀﺓ শব্দের অর্থ নাজাত বা মুক্তি। অপরদিকে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎن এর রাত্রিতে গোনাহগার বান্দাদেরকে নাজাত বা মুক্তি দেন। এজন্যই এই রাত্রিকে নাজাতের রাত্রি বা শবে বরাত বলা হয়। বাড়াবাড়ি ও বিশ্লেষণ:- একটা সময় শবে বরাত নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি শুরু হয় যা অদ্যবদি পর্যন্ত চলছে। আর ইদানিংকালে কিছু কিছু কুপমুন্ডুক প্রচন্ড রকম ছাড়াছাড়ি আরম্ভ করে দিয়েছে। তার বলছেন শব-ই বরাত বা বরকতময় রজনী বলতে কিছু নেই। বাড়াবাড়ি পর্যায়ের বন্ধুগন অনেকটা তর্কের খাতিরে পবিত্র কুরআনে কারীমে বর্ণিত- ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُﺒﺎﺭَﻛَﺔ অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি এই কুরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে। এই আয়াতের ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ দ্বারা বরকতময় রজনী হিসেবে শবে বরাতকে উদ্দেশ্য নেন। কিন্তু এর আসল বাস্তবতা হল ভিন্ন। কেননা পবিত্র কুরআনের তাফসীরের কয়েকটি মুলনীতির মধ্যে প্রথম এবং প্রধান হলﺗﻔﺴﻴﺮ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ با اﻟﻘﺮﺍﻥ অর্থাৎ কুরআনের তাফসিরের জন্য প্রথম অনুসরনীয় হল কুরআন। অর্থাৎ কুরআনের তাফসীর প্রথমে কুরআন দিয়েই শুরু করতে হবে। সুতরাং আমাদের শুরুতেই দেখতে হবে ليلة ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ দ্বারা পবিত্র কুরআন তথা আল্লাহ তাআলা কি উদ্দেশ্য নিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম পারায় সূরাহ ক্বদরে আল্লাহ তাআলা বলেন, ﺍﻥ ﺍﻧﺰﻟﻨﻪ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ নিশ্চয়ই এই আমি কুরআন নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে। সুতরাং বুঝা গেল কুরআন নাযিলের রাত্রি ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ দ্বারা ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ উদ্দেশ্য। আর অধিকাংশ মুফাসিরে কেরামের অভিমত এটাই (ইবনে কাসীর, মাআরেফুল কুরআন)। কুরআনে মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে একাধিকবার ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ শব্দটি এসেছে যার তাফসীরে মুফাসসিরগন কখনো কখনো শবে বরাত উদ্দেশ্য নিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কি শবে বরাতের কোনো ভিত্তি নেই? হ্যাঁ অবশ্যই আছে। ইসলামী শরীয়তের প্রথম এবং প্রধান উৎস পবিত্র কুরআনে কারীমের পর দ্বিতীয় প্রধান উৎস হল রাসুলে কারীম সা. এর সুন্নাহ। সুন্নাহ হল রাসুল সা. এর আমল অনুমোদন এবং নির্দেশনা। আর শবে বরাতের ব্যাপারে হাদীস শরীফে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন:- ০১. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) এর হাদীস- ﻋَﻦْ ﻣُﻌَﺎﺫِ ﺑْﻦِ ﺟَﺒَﻞٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﻄْﻠُﻊُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﺠَﻤِﻴﻊِ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻤُﺸْﺮِﻙٍ ﺃَﻭْ ﻣُﺸَﺎﺣِﻦٍ অর্থ : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে (শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। সহীহ ইবনে হিব্বান-১২/৪৮১, হাদীস-৫৬৬৫, কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৪, হাদীস-৫১২, আল ইহসান-৭/৪৭, মাওয়ারিদুযযামআন-৪৮৬,হাদীস-১৯৮০, মাজমাউ যাওয়াইদ-৮/৬৫, সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদীস-১১৪৪, শোয়াবুল ঈমান-৩/৩৮২, হাদীস-৩৮৩৩, আল মু’জামুল কাবীর-২০/১০৮, ১০৯, আততারগীব-২/ ৪২। ২. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ এর হাদীস ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ، ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻲ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗﺎﻝ : ﻳﻄَّﻠﻊُ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺇﻟﻲ ﺧﻠﻘﻪ ﻟﻴﻠﺔَ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻌﺒﺎﺩﻩ، ﺇﻻ ﻻﺛﻨﻴﻦ : ﻣﺸﺎﺣﻦٍ، ﻭﻗﺎﺗِﻞِ ﻧﻔﺲٍ অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ১৫ই শা’বানের রাত্রে আল্লাহ পাক তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেন দুই ব্যক্তি ছাড়া। এক. পরশ্রীকাতর। দুই. অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যাকারী। মুসলিম-১/৪৩৫, হাদীস-৬২৪, মুসনাদে আহমদ-৬/১৯৭, হাদীস-৬৬৪২, মাজমাউস জাওয়ায়েদ-৮/৬৫, হাদীস-১২৯৬১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল মুনজেরী-৩/৩০৮, হাদীস-৪৮৯২, ইত্যাদি। ৩· হযরত আবূ সা’লাবা (রা.) এর হাদীস- ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺛَﻌْﻠَﺒَﺔَ ﺍﻟْﺨُﺸَﻨِﻲِّ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻗَﺎﻝَ : ” ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻴْﻠَﺔُ৷ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺍﻃَّﻠَﻊَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻦِ، ﻭَﻳُﻤْﻠِﻲ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ، ﻭَﻳَﺪَﻉُ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﺤِﻘْﺪِ ﺑِﺤِﻘْﺪِﻫِﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺪَﻋُﻮﻩُ অর্থ : হযরত আবূ সা’লাবা রা. বলেন: রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ১৫ই শা’বানের রাতে আল্লাহ পাক বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং মু’মিন বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। অপরদিকে পরস্পর হিংসা বিদ্বেষপোষণকারীদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেন। অর্থাৎ যতক্ষণ না তারা তা থেকে বিরত হয়ে তওবা করতঃ ক্ষমা প্রার্থনা করে। শোয়াবুল ঈমান-৫/৩৫৯, হাদীস-৩৫৫১, কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৩, হাদীস-৫১১, আসসিলসিলাতুস সহীহাহ-৩/১৩৬, হাদীস-১১৪৪, আল মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী-২০/ ২২৩, হাদীস-৫৯০, আননুযুল দি দারে কুতনী-১৫৯, হাদীস-৭৮ ইত্যাদি অসংখ্য কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে। ছাড়াছাড়ি ও সমাধান:- ইদানিংকালে কিছু কুপমুন্ডুক বলে বেড়াচ্ছে কুরআন ও হাদিসে শবে বরাতের কোনো ভিত্তি নাই। তাদের দাবি কুরআন শরীফে কোনো স্পষ্ট বর্ণনা নেই এবং সহীহ হাদিসেও কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। যেই সমস্ত হাদিসগুলো শবে বরাতের ফযিলত হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে সেগুলো দূর্বল। সুতরাং শবে বরাত পালনীয় বেদাআত। এমনকি মারাত্বক গোনাহের কাজও বটে। যেই সমস্ত ভাই ও বন্ধুগন বলেন শবে বরাতের ফযিলত সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে জয়ীফ। এবং এই বলে শবে বরাতকে অস্বীকার করেন তাদের জ্ঞাতার্থে উপরোল্লিখিত হাদীসগুলোর মান যাচাই করে হাদিস বিশারদগণের বক্তব্য তুলে ধরে আলোচনা শেষ করবো ইনশাআল্লাহ। ১. মুআজ ইবনে জাবাল রাঃ কর্তৃক বর্ণিত হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.-৩৫৪) বলেন, হাদীসটি সহীহ। সহীহ ইবনে হিব্বান-১২/৪৮১, হাদীস-৫৬৬৫। আহলে হাদীসদের মহাগুরু শায়খ নাসীর উদ্দীন আলবানী (১৪২০হিঃ) বলেন- ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﺇﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ، ﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﻃﺮﻕ ﻣﺨﺘﻠﻔﺔ ﻳﺸﺪ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺑﻌﻀﺎ ﻭﻫﻢ ﻣﻌﺎﺫ ﺍﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﻭﺃﺑﻮ ﺛﻌﻠﺒﺔ ﺍﻟﺨﺸﻨﻲ ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﻭﺃﺑﻲ ﻣﻮﺳﻰ ﺍﻷﺷﻌﺮﻱ ﻭﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻭﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﺍﻟﺼﺪﻳﻖ ﻭﻋﻮﻑ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻭﻋﺎﺋﺸﺔ উক্ত হাদীসটি সহীহ, যা সাহাবায়ে কেরাম রা. এর এক বড় জামাত বর্ণনা করেছেন এবং একটি হাদিস অন্য হাদিস এর সনদকে আরো মজবুত করে তুলে। সাহাবীদের থেকে বর্ণনাকারীগণ হলেন (০১) হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. ০২ আবূ সালাবা আল খাসানী রা. (০৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. (০৪) আবূ মূসা আল আশআরী রা. (০৫) আবূ হুরায়রা রা. (০৬) আবূ বকর সিদ্দীক রা. (০৭) আউফ ইবনে মালেক রা. (০৮) হযরত আয়েশা রা.। সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদীস-১১৪৪। ০৩. আল্লামা মুনজেরী (রহ.-৬৫৬) বলেন উক্ত হাদীসটি সহীহ। আত তারগীব ওয়াত তারহীব-২/৭৩, হাদীস-১৫৪৬। আল্লামা হায়সামী (রহ.-৮০৭) বলেন- ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ ﻭﻣﻨﺒﻊ ﺍﻟﻔﻮﺍﺋﺪ ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟﻄَّﺒَﺮَﺍﻧِﻲُّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜَﺒِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟْﺄَﻭْﺳَﻂِ ﻭَﺭِﺟَﺎﻟُﻬُﻤَﺎ ﺛِﻘَﺎﺕٌ . উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী তার মুজামুল কাবীর ও আওসাতে সংকলন করেছেন, এবং সংকলিত হাদীস এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মাজমাওজ যাওয়েদ-৮/৬৫, হাদীস-১২৯৬০। ২. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি স্বয়ং ইমাম মুসলিম রহ.তার সহীহ মুসলিমে উল্লেখ্য করেছেন (মুসলিম হাদিস নং ৬২৪) মুসলিম শরীফের সকল সহীহ হাদিসই সহীহ এতে কোনো সন্দেহ নেই, কারো দ্বিমতও নেই। এছাড়াও আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ., ইমাম আবূ হাফস ওমর ইবনে শাহিন রহ., আহমদ ইবনে সালেহ আল মিসরী, উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারীকে সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে ওহাব আল মিসরী, ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে ইউসূফ ইবনে খেরাশ রহ., হফেজ যাহাবী, আল্লামা হায়সামী রহ.ও হাদিসটিকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন। ৩. সালাবা রাঃ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে ইমাম দারে কুতনী (আত তাহযীব ১/১৬৮) ইমাম আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল ইজলী রহ. ইমাম সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, ইমাম বুখারী রহ. এর উস্তাদ আলী ইবনে মাদীনি, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আম্মার আল মাওসেলী রহ. অভিন্ন মত ব্যাক্ত করেছেন। আলোচানা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কায় মাত্র তিনটি হাদিস নিয়ে আলোচনা করা হলো। শরীয়তে কোনো বিষয় প্রমানিত হওয়ার জন্য একটি সহীহ হাদিসই যথেষ্ট। যেখানে একটি হাদিস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে শবে বরাত বর্জনকারীদের অনুসরনীয় নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেবর মতামত উল্লেখ্য করা হয়েছে এছাড়াও তিরমীযি শরীফে হযরত আয়েশা রা. হতে এবং রঈসুল মুহাদ্দিসিন হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হযরত আবু বকর, আলী, আবু মুসা আশআরী আউফ ইবনে মালেক রা. সহ অসংখ্য সাহাবীদের থেকে শবে বরাতের ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে শবে বরাত তথা শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রি বরকতময় এবং ফযিলতপূর্ণ। এরপরেও যারা ﺿﻌﻴﻒ ﺿﻌﻴﻒ যিকিরের করবেন তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ﺿﻌﻴﻒ হাদীসও আল্লাহ রাসূল সা. এর হাদীস। এবং শরীয়তের আহকাম প্রমানের জন্য সহীহ হাদীস শর্ত কিন্ত ফযিলতের জন্য ﺿﻌﻴﻒ হাদীসই যথেষ্ট। কেবলমাত্র ﻣﻮﺿﻮﻉ তথা বানোয়াট বা জ্বাল হাদিস না হলেই হয়। এ কথাও স্মরণযোগ্য যে, কোনো একটি হাদিস দূর্বল হলে তার সমর্থনে এক বা একাধিক হাদীস পাওয়া গেলে সেটা আর দূর্বল থাকে না বরং সেটিও শক্তিশালী হয়ে যায়। আর শবে বরাতের ব্যাপারে দূর্বল বা ﺿﻌﻴﻒ নয় একাধিক ﺻﺤﻴﺢ হাদীসই বিদ্যমান। ফলাফল ও করণীয়: উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এটা স্পষ্ট প্রতিয়মান হল যে, শবে বরাত তথা শাবানের চৌদ্দতম দিবাগত রাত্র বরকতময় এবং বান্দার জন্য নাজাতের রাত্রি। সুতরাং এই রাত্রে বেশি বেশি নফল ইবাদাত ও আল্লাহ দরবারে মাগফেরাত কামনা করতে হবে। তবে ইবাদাতে কোনো নির্দিষ্টতা নেই। মনে রাখতে হবে শব-ই বরাত বেদাআত নয়; তবে ইবাদাতে কিছু নির্দিষ্ট করা বেদাআত হবে। সব থেকে ভালো হবে নফল ইবাদাতের পাশাপাশি পেছনের কাযা করা এবং আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা যাতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুক। এবং আমল করার তাওফীক দান করুক। /আরএ Comments SHARES ইসলাম বিষয়: