জবি টিএসসিতে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও ফাঁও খাওয়াতে দাম বেশি জিনিসের নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৭:১৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯ বিশেষ প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির নেতাদের বিরূদ্ধে টিএসসি থেকে প্রতিমাসে লক্ষধিক টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের একান্ত অনুগত কর্মীদের মাধ্যমে এই চাঁদার টাকা তুলে থাকে। চাঁদা নেওয়া ছাড়াও অনেক কর্মী ফাঁও খায়। এতে করে বাহিরের থেকে দাম বেশি রাখা হয় সব জিনিসের। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ফাঁও খেতে না দিলে দোকানে বাধাঁ দেওয়া হয়। টিএসসি’র বেশ কিছু দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম এর একান্ত আস্থাভাজন কর্মী অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের মাসুম বিল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদন রাসেল এর আস্থাভাজন কর্মী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭ম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন চাঁদা তোলার কাজটি করে থাকেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছে। দেখা গেছে, টিএসসিতে বসানো হয়েছে কমপক্ষে ৭টি চা দোকান, খিচুরি দোকান ৩টি, ১টি সমুচা- সিংগাড়ার দোকান, ১টি শুকনো খাবারের দোকান। তবে ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মূল ফটকের পাশেই সকাল থেকেই বসে বেশ কয়েকটি ঝালমুড়ির দোকানসহ হালিমের দোকান। এছাড়া মূল ফটকের পাশেই বসানো হয়েছে মিরাজের একটি বার্গারের দোকান। জানা যায়, দোকানটি সভাপতি তরিকুল ইসলামের একান্ত কর্মী মিরাজের। দোকানদার সাথে কথা বলে জানা যায়, চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা হিসেবে মাসে ৩১ হাজার ৫ শ, সমুচা দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ হিসেবে মাসে ১৫ হাজার, খিচুরী দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০ হিসেবে ৩৬ হাজার টাকা চাঁদা তুলে থাকে। এছাড়া মূল ফটকের সামনের দোকান থেকেও নেয়া হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে জবি ছাত্রলীগের নেতারা। এদিকে এসব হোটেলে খাবার দাম আশেপাশের অন্যান্য হোটেলের চেয়ে বেশি। টিএসসির খাবার দাম নিয়ে বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের সাহেদ বলেন, অন্যান্য জায়গায় চা ৫ টাকা হলেও এখানে ৬ টাকা, কেক ৮ টাকা হলেও এখানে ১০ টাকা করে খেতে হয়। দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, এর প্রতিদিন একটি চাদাঁ দিতে হয়। তার উপর ছাত্রলীগ নেতাদের আছে ফাঁও খাওয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চা-বিস্কুট বিক্রেতা বলেন, আমরা যদি চাদাঁ না দিতাম আর ফাঁও না খাওয়াতাম তবে অন্যান্য হোটেলের চেয়ে অনেক কম দামে খাওয়াতে পারতাম। জবি টিএসসি নিয়ে রসায়ন বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী শামীম বলেন,‘শিক্ষার্থীদের কাছে এটা অবসর কাটানোর জায়গা ছিল। যদিও এখনো পূর্ণাঙ্গ টিএসসি হিসেবে জায়গাটি রূপ পায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তমঞ্চ, বসার বেঞ্চ ও গাছ লাগিয়েছে। তবে বিভিন্ন মহলের দখলদারের কারণে আমরা এখান থেকে তেমন সুবিধা নিতে পারছি না।’ জানা যায়, ২০১৪ সালের হল আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে জনসন রোডে প্রায় ৬ কাঠা জমি সমবায় ব্যাংকের দখলে থাকা জমি দখল নিয়ে টিএসসি ঘোষণা দেন তারা। এরপরেই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের টিএসটিতে ২০১৪ সালের ১৬ জুন রাতে প্রথমবারের মতো ব্যবসার পথ খুলে বসেন তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে আট দিনের মাথায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু ব্যবসা থেমে থাকেনি। তারপর থেকে বিভিন্নভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। টিএসসি নিয়ে জানতে চাইলে জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে তাদের স্বপ্নের টিএসসির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। এখানে আমরা গাছ লাগিয়েছি। তবে বিভিন্ন গোষ্ঠির কারনে তা সম্ভব হচ্ছে না। এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার ব্যাপারে যে কথা বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তবে আমি রাসেল ভাইয়ের কর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমি অবগত না। আমি বা আমার নেতাকর্মীরা কেউ এমন কাজে লিপ্ত নই। যাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হয় তাদের কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসে নি। এখন কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করে থাকে তাহলে এর সঠিক তদন্ত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। রাসেল বলেন, আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসে নাই। কে আমাদের নামে টাকা তুলছে, ফাও খাচ্ছে তাদের নাম না বললে ব্যবস্থা নিবো কিভাবে। /আইকে Comments SHARES শিক্ষাঙ্গন বিষয়: