ঝিনাইদহ

প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের খামখেয়ালীপনায় ভেটেরিনারি কলেজের ৩৫০ শিক্ষার্থীর ভবিষৎ অনিশ্চিত!

প্রকাশিত: ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০১৯

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের খামখেয়ালীপনায় ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে অধ্যায়নরত ৩শ’ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যাত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, কলেজটিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অনুষদভুক্ত না করার কারণে মুলত এই সমস্যার সৃষ্টি। শিক্ষার্থীরা বরাবর দাবী করে আসছিলো কলেজটি প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পাধীন থাকাবস্থায় যাবে অনুষদভুক্ত করা হয়। অথচ গত ৩১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারপরও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এজন্য যবিপ্রবি অনুষদভুক্ত কিংবা স্বতন্ত্র কলেজ হিসেবে এগুতো পারছে না।

শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের মুখে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করার ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। সেখানকার শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের দাবি অনুষদভুক্ত করার।

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, রিজেন্টবোর্ডের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। আমাদের দিক থেকে কোন সমস্যা নেই। বাকীটা প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তারা কলেজটি শিক্ষামন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করলে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদভুক্ত হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পরিচালিত হবে। লেখাপড়ার মানও বাড়বে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের হলিধানী নামক স্থানে ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজ স্থাপন প্রকল্প শুরু হয়। ওই বছর শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। বর্তমানে ৬টি ব্যাচে ৩৫০জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর কলেজ স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কলেজটি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদভুক্ত করা যাচ্ছে না।

যবিপ্রবি অনুষদভুক্ত করার দাবিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১ মার্চ কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা প্রাণি চিকিৎসক হওয়ার আশায় ঝিনাইদহের এই কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। আমাদের সে স্বপ্ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের আওতায় কলেজিটির যাত্রা শুরু হয়।

কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আন্ডারগ্রাজুয়েশন লেভেল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার আইনি কোনো বৈধতা নেই। আবার কলেজটি পরিচালনার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও নেই। যার ফলে শিক্ষাকার্যক্রম শুরুতেই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কলেজটিতে অকাঠামো আছে। কিন্তুু দক্ষ ও পর্যাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে। ল্যাবরেটরি আছে, রিঅ্যাজেন্ট নেই।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার এই কলেজটিতে কোন অধ্যাপক কিংবা সহযোগী অধ্যাপক নেই। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ও অতিথি শিক্ষক দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলে সেশন জট বাড়ছে। ইন্টার্নি প্রাণি চিকিৎসকদের কোনো সম্মানি ভাতার ব্যবস্থা নেই। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কলেজে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কলেজটি যবিপ্রবি অনুষদভুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে প্রশাসনের সহায়তায় গত ১ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সেশনজট বাড়ছে।

কলেজের অধ্যক্ষ ড. অমলেন্দু ঘোষ বলেন, প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি লিখিতভাবে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছি। এরপর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।

/আরএ

Comments