ভোটাধিকারের জন্য যে দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে তারাই এখন ভোটাধিকার হরণ করছে (ভিডিও)

প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮

একুশ নিউজ: বিজয়ের মাসে চলছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল। সারাদেশে চলছে প্রচার মাইকিং। আলোচিত হচ্ছে ভোটারদের প্রত্যাশাও প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির কথা। জোটবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিএনপির পাশাপাশি এককভাবে তিনশো আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনবাংলাদেশ। একটি আসনে দলীয় মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এককভাবে সর্বোচ্চ ২৯৯ আসনে হাতপাখা প্রতিকে নির্বাচন করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একুশ নিউজ২৪ডটকম-এর পক্ষ থেকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কথা হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-এর সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম এর সাথে। কথা বলেছেন একুশ নিউজ
২৪ডটকম-এর রিপোর্টার নাফিজ আলম চয়ন

একুশ নিউজ: বিজয় দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় দিবস সমূহ উদযাপনে ইসলামী দলগুলো বরাবরই পিছিয়ে এক্ষেত্রে আপনাদের ভুমিকা কী? কী কী প্রোগ্রাম থাকে আপনাদের?

ইমতিয়াজ আলাম: বিজয় দিবসে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। এর মধ্যে বিজয় র‌্যালি, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভাসহ আরো নানান প্রোগ্রাম থাকে। আমরা যে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, এ বিজয় যে আমাদের, এদেশের জনগণের এটা আমরা মানুষকে জানান দেয়ার চেষ্টা করি।

একুশ নিউজ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী ?

ইমতিয়াজ আলাম: স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা শাসনের নামে মানুষেকে শোষণ করেছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু মানুষ স্বাধীনতার সুফল পায়নি। মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা পায়নি। ক্ষমতাসীনরা ভালো ভালো কথা বলে মানুষের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে তার কেবল শোষণই করে।

মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে, যারা এ পর্যন্ত পালাবদল করে ক্ষমতা গিয়েছে তার প্রত্যেকেই ভোটের পরে নিজেদের চেহারা পরিবর্তন করেছে। ক্ষমতায় গিয়ে মানুষকে অত্যাচার, নির্যাতন,গুম, খুন করেছে। এজন্য মানুষ এখন পরিবর্তন চায়।

তাছাড়া ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই বিশ্বব্যাপী ইসলামী শাসন ছাড়া বিকল্প কোনো শাসন ব্যবস্থাই মানুষকে প্রকৃতশান্তি দিতে পারেনি। ইসলামী আন্দোলন মনে করে এ দেশের মানুষ যেহেতু বিকল্প একটা আদর্শ খুঁজছে, বিকল্প একটা শক্তি খুঁজছে, ইসলামী আান্দোলন বাংলাদেশ সেই বিকল্প শক্তি হিসেবে জনগণের পাশে দাড়িয়েছে। যারা পরীক্ষিত ব্যর্থ, মাদক, সন্ত্রাস টেন্ডারবাজির সাথে যারা জড়িত, যারা সন্ত্রাস লালন-পালন ও সহযোগিতা করে মানুষ তাদের বয়কট করে ইসলামী আন্দোলনকে গ্রহণ করবে।

একুশ নিউজ: নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো ধরনের বাধা প্রাপ্ত হয়েছেন কিনা? হয়ে থাকলে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?

ইমতিয়াজ আলাম: নির্বাচনটা এমন এক সময় হচ্ছে যখন বিজয়ের মাস চলছে। বিজয় দিবসে আমরা একটা শ্লোগান দিয়েছি ‘বিজয় দিবস সফল করো, ভোটাধিকার রক্ষা করো’। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন এলাকায় সরকারি দলের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে। হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি হামলা করে কাউকে আহতও করা হচ্ছে। বরিশালে আমাদের দলের নায়েবে আমীর মুফতি ফযজুল করীমের কর্মী শাকিলের মাথা দেয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-১আসনের প্রার্থী মুফতি আল আমিন সিরাজীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সমেয় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খুলনা-২ আসনে আমাদের প্রার্থীর ওপর হামলা করে প্রার্থী মুজাম্মিল হক সহ কয়েকজনকে আহত করেছে। এছাড়াও ঝিনাইদহ, ভোলা, নোয়াখালীতে এ ধরনের হামলার খবর আমরা পেয়েছি। সবগুলো হামলার ব্যাপারে সরকারি দলের লোকদের সম্পৃক্ততার খবর পেয়েছি।

আমরা বলতে চাই, শেখ মুজিবুর রহমানকে এদেশের মানুষ ভোট দিয়েছিলো কিন্তু পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার শুরু করে। সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে মানুষহত্যা করে। জ্বালাও পোড়াও করে। সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেই দলের নেতৃত্বে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশকে স্বাধীন করা হলো আজকে সেই দলের লোকেরা কেন মানুষের ভোটাধিকার হরণ করবে। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমরা দেখেছি ভোটের আগের রাতে ব্যালট বক্স ভোট দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। জোর করে নিজেদের প্রতিকে সিল মারানো হয়েছে। মানুষের ভোটািধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আজকে মানুষ যদি পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে না তাহলে স্বাধীনতাই তো বৃথা। এজন্য বিজয় দিবসে উদযাপনে আমরা শ্লোগান নিয়েছি ‘বিজয় দিবস সফল করো, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করো’।

আমরা দেখেতে পাচ্ছি আজকে সারাদেশে খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে, নারী ধর্ষিতা হচ্ছে, নারীদের ইজ্জত-আবরুহরণ করা হচ্ছে। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থিী। সরকারি দলের প্রতি আমাদের কথা হচ্ছে উন্নয়নই যদি করে থাকেন তাহলে মানুষের ভালোবাসায় ক্ষমতায় যাবেন। জোর করে কেন ক্ষমতায় যেতে হবে। প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তার ভোটার সমর্থকদেরকে আক্রমণ করে মাঠ ছাড়া করতে হবে কেন? যে দলের ওপরই হামলা হোক  আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। সরকারি দলের এসব আচরণে এটাই প্রমাণ হয় তারা দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ। জনগণ তাদের ওপর আস্থাশীল নয়। জনগণকে তারা সু-শাসন দিতে পারেননি। জনগণ পরিবর্তন চায়। আমরা আশা করি পরিবর্তনের জন্য জনগণ বিকল্প হিসেবে আমাদেরকে বেছে নিবে।

একুশ নিউজ: ভোটের দিন ভোট কেন্দ্র নিয়ে আপনাদের কী পরিকল্পনা?

ইমতিয়াজ আলম: বিভিন্ন দলের কর্মী সমর্থকরা নির্বাচনীআচরণ বিধি লঙ্ঘন করে। আমরা আমাদের কর্মী সমর্থকেদর বলে দিয়েছি আমরা আইনে বিশ্বাসী।নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করা যাবে না। আচরণ বিধি মেনে যতটুকু করার ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা তা করবো। আমাদেরকে ক্ষমতায় যেতেই হবে এমনটা আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি জনগণযদি ভোট দিয়ে আমাদেরকে নির্বাচিত করে তবেই আমরা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে দেশের জন্য কাজ করবো। এজন্য জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতায় যেতে হবে আমরা এটা বিশ্বাস করি না। আচরণ বিধি মেনে আমাদের পোলিং এজেন্ট, ভোটারদের সহাতায় ক্যাম্প থাকবে। মহিলা ও বৃদ্ধ ভোটাররা যেননিরাপধে ভোট দিতে পারে আমাদের কর্মীরা সহায়তা করবে। কেউ যদি ভোট প্রদানে বাধার সৃষ্টিকরে তাহলে আমাদের কর্মীরা সেটা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে।

একুশ নিউজ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনাদের দল থেকে সর্বাধিক ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেয়া হয়েছে, জয়ের ব্যাপারে আপনারা কতটুকু আশাবাদী?

ইমতিয়াজ আলম: আমি আগেই বলেছি বড় দুই দলের শাসনে মানুষ অতিষ্ট। তারা যখনই ক্ষমতায় গেছে জনগণের অধিকার খর্ব করেছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের স্বেচ্ছাচারিতায় মানুষ পরিবর্তনের জন্য বিকল্প শক্তি খুঁজছে। অতিতে যারা ক্ষমতায় ছিলো তারাও শাসন পরিচলনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সেজন্য এবার পরিবর্তন প্রত্যাশী জনগণ আমাদেরকে বেছে নিবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

একুশ নিউজ: আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।

ইমতিয়াজ আলম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

/এসএস

https://www.youtube.com/watch?v=PJYuSmhp1wM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR3EoVLJEcKRAl59zXYMSEggrdc-YSFH7Nxq5D0Q_yPYz9ZQCG6RcsMKPHI

Comments