বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে ফুল চাষ, কমছে বেকারত্ব

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০১৯

বাদশা আলম, বগুড়া প্রতিনিধি: দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফুল কিনে এনে বগুড়ায় ফুলপ্রেমীদের চাহিদা পূরণ করে আসতো ফুল ব্যবসায়ীরা। এতে করে ফুলের জৌলুষ অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছিল। সেই দিকটা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন ফুল ব্যবসায়ীরা এখন বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরণের ফুলের চাষ করায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

অল্প সময়ে ফুল চাষ করে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই কৃষি জমিতে খাদ্য শস্যের পরিবর্তে ফুল চাষ করছেন। এমনকি আত্মকর্ম সংস্থানকল্পে অনেক বেকার যুবক নিজের জমি না থাকলেও অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ করে বেকারত্বে অভিশাপ মোচনের দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

বগুড়া কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বগুড়ায় গত ছয় বছরে এ জেলায় ২৪ হেক্টর কৃষি জমিতে ফুলের চাষ বেড়েছে। দেশীয় জাতের পাশাপাশি বিদেশি ফুল চাষ করে আমদানি কমাতে চেষ্টা করছেন স্থানীয় ফুল চাষীরা। বগুড়া জেলায় কমপক্ষে ১৫ প্রকারের ফুলের চাষ হয়ে থাকে।

এর মধ্যে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগান বিলাস, চন্দ্র মল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলন চাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুটি, কলাবতী ও জবা ফুল অন্যতম।

ফুলচাষীরা জানান, বগুড়ায় ফুলের চাহিদা মেটাতে বেশীরভাগ বিভিন্ন জাতের ফুল গত কয়েক বছর আগেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু এখন বগুড়ায় ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জেলার চাহিদা পূরণ মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়ও রপ্তানি করা হচ্ছে।

বগুড়া শহরের ফুল বব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও বিয়ে, আকিকা, জম্মদিন অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার ছিল। দিন দিন সৌখিন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ফুল অনেকের কাছে এখন নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।’

জেলা শহরের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে উপজেলা সদরগুলোর অসংখ্য ফুলপ্রেমী মানুষ এখন বাসার জন্য প্রতিদিন ফুল কিনছেন। এছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সভা-সেমিনারের জন্য ফুল এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। শুধু শহরেই নয় বিভিন্ন দিবস অনুষ্ঠানে গ্রামের মানুষের মধ্যেও ফুল কেনার প্রবণতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিজে ও অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে মানুষ এখন দেশিও ফুলের পাশাপাশি ঝুঁকছেন বাহারি রঙের বিদেশি ফুলের দিকে। এ কারণে বিদেশি ফুলের চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে। তবে এ আমদানি কমাতেই বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, সদর উপজেলার গোকুল, মহাস্থান, বাঘোপাড়া, সোনাতলা, শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলা এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।

এসব এলাকায় প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায়, ক্ষেত-খামারে গড়ে উঠেছে কম বেশি ছোট বড় নার্সারী। তবে বগুড়ার সদর উপজেলায় বেশি ফুল চাষ হয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফুল চাষী।

এ ব্যাপারে গোকুল গ্রামের ফুলচাষী সাবলু মিয়া জানান, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। এই জমিতে অন্য ফসল চাষ করে লাভ তো দুরের কথা খরচই উঠতো না। এক বিঘা জমিতে ফুল চাষ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয় বছরে। এ কারণে কৃষি জমিতে অন্য ফসল চাষ বন্ধ করে দিয়ে ফুল চাষ শুরু করছেন বলেন তিনি জানান।

গোকুল এলাকার ফুলচাষী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘চার বছর ধরে ফুল চাষ করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছি। পাশাপাশি নার্সারিতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে’। ফুল চাষ নিয়ে মহাস্থান এলাকার জসিম, মনোয়ার ও বেলাল জানান, তাদের নিজের কোনো জমি ছিল না। তারা চাকরির পেছনে না ঘুরে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন এবং বেকারত্বের অভিশাপ মোচনের চেষ্টা করছে। এখন তারা সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা ছাড়াও নিজস্ব নার্সারির জন্য জমি কিনেছেন।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন তালুকদার বলেন, বগুড়া সদর, সোনাতলা, শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষ বেশি হচ্ছে। তাছাড়া জেলার সব উপজেলাতেই কম বেশি ফুল চাষ হয়ে হচ্ছে।

এ জেলায় ২০১২ সাল থেকে ফুলের চাষ বাড়ছে। ২০১২ সালে বগুড়া জেলায় ফুলের চাষ হয়েছিল সাড়ে চার হেক্টর জমিতে। আর এখন ৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে বলে দাবী করেন ওই কর্মকর্তা।

বিআইজে/

Comments