মায়ের কোলে এহসান; মুক্তি পেলেও পিছু ছাড়ছে না পুলিশ আতংক নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১২:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০১৯ উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: জামিনে মুক্তি পেয়ে মায়ের কোলে ফিরেছে জগন্নথ বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নড়াইলের সন্তান এহসান হাবিব সুমন। মায়ের কোলে ফিরে মা আর প্রতিবন্ধী বোনকে কে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুমন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এহসান। এরপর কারাগার থেকে পাঠানো এহসানের একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, পরে যা গণমাধ্যমেও জায়গা করে নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারের ১৩ দিনের মাথায় ৩ মার্চ এহসানের জামিনে মুক্তি মেলে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে পৌঁছান এহসান। এ সময় সেখানে একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মা-ছেলে পরস্পরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এহসানদের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগ্রামে। এহসানের বাড়ি আসার খবর শুনে পাড়া-প্রতিবেশীদের পাশাপাশি আসেন তাঁর স্কুল ও কলেজজীবনের বন্ধুরা। ২০১৪ সালে এহসান যখন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র- তখন তার বাবা আজিজুর রহমান ফকির হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত মারা যান। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও কাঁধে এসে পড়ে ছেলেটির। ২০ শতাংশ ফসলি জমি আর ৫ শতাংশ জমির ওপর ছোট্ট দুটি বসতঘর ছাড়া আর কিছু নেই তাদের। আর একমাত্র ছোট বোন আফসানা আক্তার (১৬) বেড়ে উঠেছে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা নিয়ে। বাবার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে এহসান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকায় কোচিং করিয়ে ও প্রাইভেট পড়িয়ে তিনি নিজে চলতেন, বাড়িতে মা আর প্রতিবন্ধী বোনের খরচও জোগাতেন। এহসান ও তার মায়ের এখনো অজানা শঙ্কা কাটছে না। জামিন পেলেও এহসানের ঘাড়ে এখনো মামলার খড়্গ জুলছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে গিয়ে তারা অনেকটা দিশেহারা। এহসান জানান, কোচিং ও প্রাইভেট পড়াতে যাতায়াতের জন্য গত সেপ্টেম্বরে তিনি একটি মোটরসাইকেল কেনেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তার মেসে মোটরসাইকেল রাখার জায়গা না থাকায় তিনি ক্যাম্পাসের নতুন ভবনের নিচতলায় তা রাখতেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত আটটার দিকে সেখানে মোটরসাইকেল রেখে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে আসেন। সেই মুহূর্তেই একদল পুলিশ কিছু না বলেই এহসানসহ সেখান থেকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এহসানের ভাষ্য, সংঘর্ষের দিন তিনি নিজের মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ও বিমা করতে সারা দিন ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন। এহসান বলেন, ‘পুলিশ শুধু নাম-ঠিকানা শুনে হাজতে ঢুকিয়ে দেয়। পরদিন বেলা একটার সময় আদালতে নেয়। এ সময় জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার আসামি হয়েছি। পুলিশ ফোন নিয়ে নেওয়ায় কাউকে জানাতে পারিনি। আদালতে গিয়ে একজন আইনজীবীর ফোন দিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলি। এরপর কারাগারে। বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে সর্বক্ষণ শুধু কেঁদেছি। মায়ের কথা মনে করে বেশি কান্না পেয়েছে। কারণ ঢাকায় যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন অন্তত ২০ বার ফোন দেন মা। এহসানের মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘ওই ১৩ দিনে ঘুমাতে পারিনি’। এহসানের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছোট বোন আফসানা ভাইকে পেয়ে বারবার গলা জড়িয়ে ধরছে। প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে খবর দিচ্ছে, ভাই এসেছে তার। তবে ভাইয়ের কী হয়েছে, তার কিছুই বোঝে না সে। এহসান বলেন, ‘কারাগারে গিয়ে ৩-৪ দিন পর ডায়েরির মতো করে একটি চিঠি লিখি। সেটি জামিনে মুক্তি পাওয়া একজনের কাছে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিতে বলি। কিন্তু সে চিঠি পৌঁছেছে কি না? আর বের হতে পারব কি না? এসব নিয়ে অজানা শঙ্কায় কেটেছে দিন। বের হয়ে জানলাম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আমার চিঠিটি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে’। এহসান জানান, নড়াইল জেলার শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সচেতন ও সহযোগিতা করতে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন আছে। নাম ‘চিত্রা হেলপ ডেস্ক’। ১১ হাজার শিক্ষার্থী বর্তমানে এর সদস্য। এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। স্থানীয় নড়াইলের নওয়াগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল আলম বলেন, এহসান খুবই বিনয়ী ও মেধাবী। সবাই তাঁকে ভালোবাসে। এ ছেলে এলাকার গর্ব। /আরএ Comments SHARES শিক্ষাঙ্গন বিষয়: