বাংলাদেশে গানের বুলবুল একজনই: কনক চাঁপা

প্রকাশিত: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯

বিনোদন ডেস্ক: অসংখ্য কালজয়ী বাংলা গানের স্রষ্টা ও সুরের বুলবুলকে বিদায় জানাল শিল্পী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

বুধবার দুপুরে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লাশ এফডিসিতে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাকে শেষ দেখায় কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। সহকর্মীদের কান্নায় সিক্ত হয় বুলবুলের কফিন।

জীবদ্দশায় চলচ্চিত্রের বহু গানে সুর দিয়েছেন বুলবুল। তার কালজয়ী গানগুলো গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, কনক চাপা, কুমার বিশ্বজিত। তারা গানের এ বুলবুলের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় বুলবুলের স্মৃতিচারণ করে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী কনক চাঁপা বলেন, বাংলাদেশে গানের বুলবুল একজনই, তিনি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বুলবুল ভাইয়ের লেখা ও সুরে বহু গানে আমি কন্ঠ দিয়েছি। তিনি চলে গেলেন। তার চলে যাওয়া কতটা ক্ষতি সেটা প্রতি পদে পদে অনুভব করবো আমরা।

দুপুর ২টায় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ নিয়ে আসা হয় এফডিসিতে। এখানে অনুষ্ঠিত হয় তার দ্বিতীয় জানাজা। এফডিসির মসজিদের ইমাম জানাজা পড়ান।

জানাজা নামাজে অংশ নেন চিত্রনায়ক আলমগীর, বরেণ্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রনায়ক রিয়াজ, জায়েদ খান, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু প্রমুখ।

নামাজ শেষে চলচ্চিত্রের মানুষেরা বুলবুলের স্মৃতিচারণ করেন। তাদের সেই স্মৃতিচারণ ছিলো অশ্রুসিক্ত।

অসংখ্য বাংলা জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মঙ্গলবার ভোররাতে রাজধানীর আফতাব নগরের বাসায় হার্টঅ্যাটাকে মারা যান।

বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে সংগীত ও শিল্পাঙ্গনে। তার অকালে চলে যাওয়া সহকর্মীদের কেউ মেনে নিতে পারছেন না। শোকে স্তব্ধ সবাই।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলী বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন।

সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনকচাঁপাসহ বাংলাদেশি প্রায় সব জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর গাওয়া বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। ১৯৭৬ সাল থেকে তার নিয়মিত গান করা। প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

এ জনপ্রিয় শিল্পীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায়। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বুলবুল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাইফেল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন ও সুর করেছেন।

এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা, আয় রে মা আয় রে, উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম, সব কটা জানালা খুলে দাও না, মাঝি নাও ছাইড়া দে, ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে, সেই রেললাইনের ধারে, মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না-এমন বহু কালজয়ী গানের স্রষ্টা এ শিল্পী।

তিনি প্রেমের জন্য লিখেছেন- আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ভাড়া কইরা আনবি মানুষ, প্রেমের তাজমহল-সহ আরও বহু জনপ্রিয় গান।

ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার ছেলে সামির আহমেদ।

বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।


/সিএইচ

Comments