বান্দরবানে ভ্রমণপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়

প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯

নুমিং মারমা, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের পর্যটন স্থানগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে আগত পর্যটকদের পদভারে। একুশে ফেব্রুয়ারি সহ টানা তিনদিনের ছুটিতে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে পাহাড়ী জনপদ বান্দরবানে ভ্রমনপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়!

এখানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির, নীলদিগন্ত সহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউস এবং গেস্টহাউসগুলোতেও কোনো সিট খালি নেই। এক সিটে দুইজন করেও থাকছেন অনেক পর্যটক।

আবাসিক হোটেল-মোটেলে সিট না পেয়ে পর্যটকরা এখন ছুটছেন দুর্গমাঞ্চলে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে। পাহাড়িদের মাচাং ঘরগুলোকে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। পাহাড়িরাও অর্থের ভিত্তিতে থাকা-খাওয়া এবং টুরিস্ট গাইড্ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছে। ট্যুরিস্ট জিপ গাড়িগুলো নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।

আজ শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা গেছে, জেলা সদরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে লেকের উপর নির্মিত দু’টি ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের টাওয়ারে উঠে পাহাড় থেকে সমুদ্র দেখছেন ভ্রমণপিপাসুরা। পাহাড়ের সাথে আকাশ যেন মিতালী গড়েছে এখানে।

নীলাচলের লাভ পয়েন্ট এলাকাতে পর্যটকের ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়ে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোগুলো থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছে পর্যটকরা। অন্যদিকে অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে নির্মিত নীলগিরি পর্যটন স্পট থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখছেন বান্দরবান বেড়াতে আসা পর্যটকরা। সদর থেকে নীলগিরি যাওয়ারপথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ তারা।

এদিকে চিম্বুক-নীলগিরি সড়কের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসাতে দেখা গেছে পর্যটকদের। এখানে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। দর্শনীয় স্থানটির পাশে বসেই পাহাড়িদের কোমর তাঁতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের কাপড় বিক্রি করছে বম সম্প্রদায়ের তরুণীরা।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক হামিদ, ফরহাদ, ফারিয়া বলেন, বৈচিত্রময় অসংখ্য সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। এখানে রয়েছে পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণা, প্রাকৃতিক লেক, ঝুলন্ত সেতু এবং সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সহ অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। পর্যটকের মন ভোলানোর সমস্ত আয়োজন রয়েছে এখানে। তবে সড়ক যোগাযোগ এবং পরিবহন ব্যবস্থার আরেকটু উন্নয়ন দরকার। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের উন্নতমানের পরিবহন সার্ভিস চালু করা এবং ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি করেন তারা। পর্যটকরা পরিবহনগুলোতে খুবই হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান ঢাকা থেকে আসা এ পর্যটকরা।

আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘একুশের ফেব্রুয়ারির সঙ্গে টানা তিনদিনের সরকারি ছুটিতে বান্দরবানে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকরা। শহরের আবাসিক হোটেলগুলোর কোথাও সিট খালি নেই। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘পর্যটকদের কাছে ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। কিন্তু তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে পর্যটকদের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে পর্যটক হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে বান্দরবান সদর সার্কেলের কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন ঘটছেই। আমরা বাড়তি ভাড়া নেয়া অভিযোগ পেয়েছি পুলিশ সে বিষয়ের তদবির করছে ধরা পরলে সাথে সাথে আইননী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তা লক্ষ্যের আমাদের পুলিশ সবসময় সার্বিক সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে।

বিআইজে/

Comments