মুক্ত চিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবে জঙ্গিবাদের উদ্ভব: রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আজকাল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসহিষ্ণুতা, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড জাতি গভীর উদ্বেগের সাথে প্রত্যক্ষ করছে। আমি মনে করি, এর উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে মুক্ত চিন্তা ও সংস্কৃতির অভাবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির অমিত শক্তি যুব সমাজ। যুব সমাজের শক্তি ও সম্ভাবনাকে দেশ গঠনের কাজে লাগাতে আমাদের যুব সমাজকে অবশ্যই অপশক্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হতে হবে। মানবিক ও উদার হতে হবে। তাহলেই আমরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনকতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। এর সুফল জাতির কাছে পৌঁছাতে পারবো। এজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক, অভিভাবক, ছাত্র সংগঠনসহ সকলকে সম্মিলতভাবে অবদান রাখতে হবে।

আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) স্টেডিয়ামে দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে না পারলে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়বে এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়বো। যুগের চাহিদাকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাফসমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এমিরেটাস অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী তাদের গবেষণার ও সৃজনশীলতার মধ্যদিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান উন্নত করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজকের বক্তব্যের বিষয় নির্ধারন করেছি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা, স্বায়ত্ত্বশাসন ও জবাবদিহিতা।’

সমাবর্তনের বিশেষ অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আপনারা এদেশের বড় সম্পদ। এ দেশের শ্রেষ্ট মেধাবীদের একাংশ। আপনাদের আগামী দিনের কার্যক্রামের ওপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি। আপনাদের অর্জিত শিক্ষা ও জ্ঞান বাস্তব কর্মজীবনে প্রয়োগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করার সুযোগ আপনারা পেয়েছেন। জ্ঞান ও মেধা প্রয়োগে সৃজনশীলতা ও উদ্যোগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জনের সীমা বা শেষ নেই। আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, জাতির উন্নতির জন্য আপনারা সততা নিষ্ঠার মাধ্যমে আপনাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাবেন এটাই আজকের দিনে আপনাদের কাছে প্রত্যাশা।’

এর আগে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে রাষ্ট্রপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের মাঠে পৌঁছান। নেমেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে বিশ্রাম নেন। এরপর তিনি গাড়িযোগে সমাবর্তনস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে পৌঁছান। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের নামে দুইটি বহুতল আবাসিক হলের ফলক উন্মোচন করেন তিনি।

সমাবর্তনে বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সমাবর্তনে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ও দেশবরেণ্য সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি. লিট) ডিগ্রি তুলে দেন রাষ্ট্রপতি।

এবারের সমাবর্তনে অংশ নিতে মোট ৬ হাজার ১৪ জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন। এতে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি, এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রি অর্জনকারীদের নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। এতে কলা অনুষদের ১১টি বিভাগের ১ হাজার ১৪০, আইন অনুষদের আইন বিভাগের ২২৫, বিজ্ঞান অনুষদের ৮টি বিষয়ে ৯১৬, বিজনেস স্টাডিস অনুষদের ৪টি বিভাগে ৯৫৩, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১০টি বিভাগে ১ হাজার ৩৬, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ৬টি বিভাগে ৫৬১, কৃষি অনুষদের ৪টি বিভাগের ৭২, একই অনুষদের ডিভিএম ডিগ্রির জন্য ৪৫, প্রকৌশল অনুষদের ৫টি বিভাগে ৩০১, চারুকলা অনুষদের ৬৭, এবং ইনস্টিটিউটসমূহ থেকে ১৯জন গ্রাজুয়েট স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইসডি ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন করেন। এছাড়াও এমবিবিএস ৫৩৪ ও বিডিএস ১৪৫ জন নিবন্ধন করেছেন।

Comments