বিউটি হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন ময়না

প্রকাশিত: ১০:২৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার : হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত কিশোরী বিউটিকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাবুল মিয়া ও বিউটির চাচা আওয়ামী লীগ নেতা ময়না মিয়া। শুক্রবার (৬ এপ্রিল) বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে বিউটি হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন চাচা ময়না মিয়া। পুলিশের একটি সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার তারা ম্যাজিস্টেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তার (১৪) ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়াকে ৩১ মার্চ সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের র‌্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব ৯-এর পরিচালক ক্যাপ্টেন মনিরুজ্জামান জানান, সকালে বাবুলকে বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ক্যাপ্টেন মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তার সঙ্গে এ পর্যন্ত যতটুকু আমাদের কথাবার্তা হয়েছে তাতে আমরা যেটুকু বুঝতে পারছি সে সত্যি কথা বলছে না, সে মিথ্যা কথা বলছে বিভিন্ন সময়ে। আমাদের কাছে যে ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফরমেশন রয়েছে এই ইনফরমেশনের ভিত্তিতে তার দেওয়া তথ্যগুলো মিলছে না। এবং সে অনেক মিথ্যা কথা বলছে এবং তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন রয়েছে।’

সূত্র জানায়, গত ২১ জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে ১৪ বছরের বিউটি আক্তারকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান বাবুল মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ-নির্যাতন করা হয় তাকে। এরপর বিউটিকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান বাবুল। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সায়েদ আলী। উক্ত মামলায় সাক্ষী করা হয় সায়েদ আলী ঘনিষ্ট আত্মীয় ময়না মিয়াকে। সে সময় গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করে বাবুলের পরিবার। তবে বিউটির বাবা সমঝোতায় আসেননি। তিনি এ বিষয়ে মামলাটি চালিয়ে যান এবং ওই সময় বিউটিকে তার নানা বাড়িতে রেখে আসা হয়েছিল।
এই মামলার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুল মিয়া গত ১৬ মার্চ তার নানা বাড়ি গুণীপুর গ্রাম থেকে আবারও অপহরণ করেন। আবারও তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশটি ফেলে দেন হাওরে। এ ঘটনা প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

১৮ মার্চ কিশোরীর বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩১ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে। এদিকে পুলিশও হত্যার কারণ উদ্ঘাটনে মরিয়া হয়ে উঠে। প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।

দ্বিতীয় দফায় চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাঝেই তিনি কারণ উদঘাটনে সক্ষম হন। বাবুল ও তার মা কলম চান বিবিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিউটির বাবা, মা, মামা, নানীসহ স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের। অবশেষে বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষী ময়না মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসব জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে হত্যার কারণ। শেষ পর্যন্ত ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডের নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। প্রকাশ করে জড়িত অন্যান্যদের নামও। হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক তথ্য দেয়। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেল ৫টায় তাকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়।

প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে অনেক লোমহর্ষক তথ্য দেয়। জানায় হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা। আরও কারা জড়িত ছিল, কি দিয়ে কিভাবে হত্যা করেছে, কেন করেছে সব তথ্যই সে আদালতে প্রকাশ করেছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিউটির নানী ফাতেমা বেগম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর রাতে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় গ্রেফতারকৃত বাবুল মিয়া। সে প্রথম দফায় বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও আদালতকে জানিয়েছে। অপরদিকে বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে ২দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার রাতে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

Comments