আন্দোলন এড়াতে এ বছর ‘ফি’ কমালো দনিয়া কলেজ

প্রকাশিত: ১১:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮

ডেস্ক: ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৮ এর ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত প্রায় ৬ হাজার টাকা জনপ্রতি আদায়ের অভিযোগ উঠে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এরই প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কলেজ প্রাঙ্গনে মানববন্ধন এবং পরে প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সভা সহ নানান কর্মসূচি পালন করে তৎকালিন ২০১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফি কমানোর দাবি জানায়। কোনো এক অজানা কারণে তাদের সে আন্দোলন থেমে যায়। হাইকোর্টের রায় ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে কলেজ কতৃপক্ষ ফি কমানোর আশ্বাস দিলেও শেষে তা স্বরূপেই বহাল থাকে।

ঠিক এক বছর পর এসে ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি গত বছরের চেয়ে ২ হাজার টাকা জনপ্রতি কমিয়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ধার্য্য করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কলেজ কতৃপক্ষ।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কতৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় ২০১৮ সালের চেয়ে এবছর ১ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের থেকে সর্বমোট ২ হাজার ৪৫০ টাকা নিতে নির্দেশনা দেয় এবং এর অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা মানতে আহ্বান জানায় কলেজগুলোকে।

সরকার নির্ধারিত ফি হিসেব করে দেখা যায় গত বছর অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা নেয়া হলেও এবছর ৩ হাজার টাকা তবু অতিরিক্ত নিচ্ছে দনিয়া কলেজ কতৃপক্ষ।

সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত এই ৩ হাজার টাকা আদায় করা হলেও এ নিয়ে ২০১৯ শিক্ষার্থীদের কোন আন্দোলনের খবর পাওয়া যায়নি।

তবে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইবরাহিম খলিল বলেন, প্রথমত কলেজ গভর্নিং বডিকে ধন্যবাদ জানাই। কেননা দেরি হলেও তারা আমাদের বড় ভাই-বোনদের ‘অতিরিক্ত ফি রোধ’ আন্দোলনের যৌক্তিকতা বুঝতে পেরেছে। ফলশ্রুতিতে গতবারের চেয়েও এবার কিছুটা কম ফি গ্রহণ করছে।

তারপরও কলেজ গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে। যেখানে বোর্ড নির্ধারিত ফি আমাদের বিজ্ঞান বিভাগের ২ হাজার ৪৫০ টাকা কিন্তু কলেজ গ্রহণ করছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কেননা আমরা কলেজ পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।

যেখানে কলেজ বেতন দেয়াটাই আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য, সেখানে আবার অতিরিক্ত ফি! এটা বাড়াবাড়ি। তাছাড়া এ অতিরিক্ত ফি’র যৌক্তক কারণও আমরা জানতে পারিনি। তাই কলেজ গভর্নিং বডি’র প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে অনতিবিলম্বে অতিরিক্ত ফি বাদ দিয়ে বোর্ড এবং মহামান্য আদালতের নির্দেশনামা অনুসরণ করুন।

অতিরিক্ত এই ৩ হাজার টাকা ফি কেন নেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দনিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সায়রা বেগমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, গত বছর নয় শুধু বরং বহুবছর আগ থেকেই ৭ হাজারেরও টাকা বেশি ফি দিয়ে ফরম পূরণ করছে শিক্ষার্থীরা, সেখানে ৫ হাজার ৫০০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে বলা যায় না। তাছাড়া প্রতিবছর কোচিং ও উন্নয়ন ফি বাবদ যা নেয়া হয় সেটা এবছর নেয়া হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, এ বছর আলাদা খাত উল্লেখ না করলেও গতবছর ৫ ডিসেম্বর উচ্চ মাধ্যমিক পর্রীক্ষার ফি বিষয়ে দনিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নিম্নলিখিত খাতগুলো উল্লেখ করে অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা করে শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া হয়।

বোর্ড পরীক্ষার ফি ১ হাজার ২৩৫ টাকা, ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদপত্র ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট/গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা, কেন্দ্র ফি ৩০০টাকা, স্টুডেন্ট গাইডেন্স ফি ১ হাজার টাকা, উন্নয়ন ফি ৪ হাজার টাকা এবং বিবিধ ৭৯৫ টাকাসহ সর্বমোট ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

/আরএ

Comments