দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দিতে আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:১১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০১৮

ডেক্সঅফিস : একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার অধীনে থাকবে ৬টি শিক্ষা বোর্ড * খসড়া যাচ্ছে ৫ মন্ত্রণালয়ে

কওমি শিক্ষা ধারার সর্বোচ্চ স্তর ‘দাওরায়ে হাদিস’কে (তাকমিল) মাস্টার্স সমমানের মর্যাদা দিতে আইন হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সরকারের ৫টি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, দাওরায়ে হাদিস বা তাকমিল পাস করা শিক্ষার্থীরা সাধারণ ধারায় ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবিতে মাস্টার্স পাস শিক্ষার্থীর সমান মর্যাদা পাবেন। একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার অধীনে এই ডিগ্রির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই সংস্থার অধীনে সারা দেশে ৬টি শিক্ষা বোর্ড থাকবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। তবে ওই সংস্থার কার্যক্রম মন্ত্রণালয় অবহিত হবে।

কওমিপন্থী সব আলেমকে ‘ঐকমত্য’ করার পর গত বছরের ১৩ এপ্রিল ‘দাওরায়ে হাদিস’কে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কওমিপন্থী আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন। এর প্রায় এক বছর পর এ বিষয়ে আইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হল। প্রস্তাবিত আইনে ওই প্রজ্ঞাপন উদ্ধৃত করে বলা হয়, দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করা হল। আইন অনুযায়ী, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অনুসারে হবে বাংলাদেশের কওমি শিক্ষাধারা। আইনটি শুধু বাংলাদেশের দেওবন্দের নীতি, আদর্শ, পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি (তালিম ও নিসাব) অনুসরণে পরিচালিত কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের জন্য প্রযোজ্য হবে। আইনে কওমি মাদ্রাসার ৬টি বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক এম শাহ নওয়াজ আলির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি কমিটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বলেন, সরকার কোনো বিষয়ে মৌলিক সিদ্ধান্ত নিলে তা আইনে রূপান্তর করার প্রয়োজন পড়ে। সেই বাস্তবতা থেকে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার প্রজ্ঞাপনের আলোকে আইন তৈরির কার্যক্রম চলছে।

প্রস্তাবিত আইনের নাম ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি) সমমান প্রদান আইন-২০১৮।’ ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে সারা দেশে ৬টি শিক্ষা বোর্ড থাকবে। এসব বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হবে এ ধরনের মাদ্রাসা। সরকার চাইলে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের আরও বোর্ড সৃষ্টি করতে পারবে। তবে প্রস্তাবিত আইনে উল্লিখিত সংস্থার মর্যাদা কী হবে তা উল্লেখ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু আইনে মর্যাদা উল্লেখ নেই, কিন্তু দাওরায়ে হাদিসের মতো স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পরিচালনা করবে, তাই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সরকারের কোনো অধিদফতর বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই বিবেচিত হবে। প্রস্তাবিত ৬টি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হচ্ছে- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ, তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ।

আইনে ১৭ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরিচালনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটির প্রধান পদ চেয়ারম্যান। প্রস্তাবিত ছয়টি বোর্ডের একটি ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশে’র প্রধান হবেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান। সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান হবেন ওই বোর্ডের সিনিয়র সহসভাপতি। একই বোর্ডের মহাসচিবসহ আরও ৫ জন সদস্য এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাকি ৫টি বোর্ড থেকে ২ জন করে সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া কমিটিতে আরও অনধিক ১৫ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। সেই হিসাবে কমিটির সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩২ জন হতে পারবে।

প্রস্তাবিত আইনে কমিটির চারটি কাজ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সনদ বিষয়ক সব ধরনের কাজ, এ ক্ষেত্রে এটি সর্বোচ্চ কমিটি বলে বিবেচিত হবে। দাওরায়ে হাদিস স্তর পাঠদানকারী মাদ্রাসার নিবন্ধন দেবে এ কমিটি। দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা নেবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ক্ষেত্রে কমিটি সিলেবাস তৈরি, পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ, অভিন্ন প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল ও সনদ তৈরির কাজ করবে। তবে এসব কাজের জন্য এক বা একাধিক উপকমিটি করা যাবে। কমিটি এসব বিষয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। কমিটির সদস্যরা দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকবেন না। আইন প্রসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা বলেন, এই আইন চূড়ান্ত হলে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো বোর্ড দাওরায়ে হাদিসের ডিগ্রি দিতে পারবে না। আইনে একটি সংস্থার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের অধীনে বোর্ডগুলোকে পরিচালিত হতে হবে। আইন তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণ ধারার শিক্ষার মতোই মাস্টার্স পর্যন্ত ১৭ বছর শিক্ষাজীবনের সীমা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটিতে কওমি ধারার কোনো সদস্য না থাকলেও আইনের খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে আমরা তাদের মতামত নিয়েছি। প্রথমে তাদের কাছ থেকে একটি খসড়া নেয়া হয়। সেটার ওপরই কমিটি কাজ করেছে।

/এসআর

Comments